ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ মিনিটে গোল খেয়ে রানার্সআপ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 শেষ মিনিটে গোল খেয়ে রানার্সআপ বাংলাদেশ

জাহিদুল আলম জয় ॥ মাঠে লড়াই হয়ে থাকে ১১ জনের সঙ্গে ১১ জনের। কিন্তু সেই লড়াইটা যদি ১৪ জনের সঙ্গে ১১ জনের হয় তখন আর কিছু করার থাকে না! সাফ অনুর্ধ-১৮ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশের সঙ্গে এমনই হয়েছে। রবিবার নেপালের কাঠমান্ডুতে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। এপিএফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশ ২-১ গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েছে। কিন্তু ফলাফল ছাপিয়ে গেছে ম্যাচ পরিচালনাকারী নেপালী রেফারি কাবিন বানজানকারের পক্ষপাতমূলক বাঁশিতে। ম্যাচের প্রথমার্ধেই অধিনায়কসহ দুইজন ফুটবলারকে লালকার্ড দেখিয়ে বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন তিনি। এরপরও সমানতালে লড়াই করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু ম্যাচের শুরুর দিকে (দ্বিতীয় মিনিট) ও শেষ মিনিটে (৯১ মিনিট) দুই গোল হজম করে টানা দ্বিতীয়বার রানার্সআপ হওয়ার বেদনায় নীল হতে হয়েছে বাংলার যুবাদের। আর টুর্নামেন্টে প্রথমবার শিরোপা উল্লাস করেছে ভারত। যে কোন প্রতিযোগিতায় ভারতের বিরুদ্ধে খেলা হলেই আঁতকে থাকেন বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা। এই বুঝি সর্বনাশ করে দিলেন রেফারি কিংবা আম্পায়াররা। কি ফুটবল, কি ক্রিকেট সবখানেই এমন চিত্র দেখা যায় বারবার। যুবাদের ফুটবলও এই কলঙ্ক থেকে রেহাই পেল না। ম্যাচে রেফারি কাবিন বেশ কয়েকটি কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেগুলো এমন বড় ম্যাচে সাধারণত এড়িয়ে যেতে দেখা যায় রেফারিদের। আন্তর্জাতিক ফুটবল কিংবা বিশ্বকাপেও এমন ঘটনা প্রায়শই দেখা যায়, কোন একজন ফুটবলার একটি হলুদ কার্ড পেয়ে থাকলে পরবর্তীতে সেই ফুটবলার আবারও কার্ড পাওয়ার মতো অপরাধ করলে রেফারিরা সাধারণত ঘটনাটি এড়িয়ে যান। কিন্তু এই ম্যাচে রেফারি যেন ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করাতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছিলেন। যে কারণে সামান্য কারণেই তিনি কার্ড দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবলারদের। ম্যাচের প্রথমার্ধেই রেফারি বাংলার যুবাদের কোমড় ভেঙ্গে দেন দু’টি লালকার্ড দেখিয়ে। যে কারণে বিরতির পর পুরো ৪৫ মিনিট ৯ জন নিয়ে খেলতে হয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। ম্যাচের শুরু থেকেই দু’দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে খেলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ২১ মিনিটে একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে খেলোয়াড়রা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ভারতের বিক্রমকে ফাউল করেন বাংলাদেশের ফাহিম মোর্শেদ। এরপর গুরকিরাত সিং এসে ধাক্কা মারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক ইয়াসিন আরাফাতকে। এ সময় সরাসরি মারামারিতে লিপ্ত হওয়ায় রেফারি ভারতের গুরকিরাত সিংকে সরাসরি লালকার্ড দেখান। আর দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশের মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয়কে। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচের ৩৮ মিনিটে গোল করার পর জার্সি উঁচিয়ে উল্লাস করার অপরাধে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানো হয় বাংলাদেশ অধিনায়ক ইয়াসিন আরাফাতকে। রেফারির এই সিদ্ধান্ত নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে সমালোচনা। দেখা গেছে ইয়াসিন গোল করার পর জার্সি বুক পর্যন্ত উঁচিয়ে উল্লাস করেন। তিনি জার্সিটা পুরোপুরি খোলেনওনি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন উল্লাস বারবারই দেখা যায়। কিন্তু প্রতিটি ঘটনাতেই কার্ড দেয়ার নজির নেই। এই দৃষ্টিকোণ এবং আগে একটি হলুদ কার্ড আছে এই দিক বিবেচনায় রেফারি লালকার্ড না দিলেও পারতেন বলে মনে করেন বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা। কিন্তু রেফারি যেন কার্ড দিতেই প্রস্তুত ছিলেন। যে কারণে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। এর আগে ম্যাচের শুরুর দিকেই গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে লাল-সবুজের দেশ। দ্বিতীয় মিনিটে বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে দারুণ শটে গোল করেন ভারতের বিক্রম প্রতাপ সিং (১-০)। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া বাংলাদেশ ৩৮ মিনিটে সফল হয় চোখ ধাঁধানো গোলে। ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের কর্নারে আমির হাকিম বাপ্পি ব্যাকহিল করেন। এরপর দৌড়ে এসে বাঁ পায়ের শটে অধিনায়ক ইয়াসিন আরাফাত গোল করে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান (১-১)। ম্যাচের একেবারে শেষ সময়ে এসে আরেকটি গোল হজম করে কাঁদতে হয়েছে বাংলার দামাল ছেলেদের। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ম্যাচ গড়িয়েছে তখন যোগ করা সময়ে। এই সময়ের প্রথম মিনিটেই (৯১ মিনিট) সর্বনাশটা হয়ে যায়। থ্রো ইনের পর বল নিয়ে এগিয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে রবি বাহাদুর রানা দৃষ্টিনন্দন শটে বাংলাদেশ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন (২-১)।
×