ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিল ভারত

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 এবার পেঁয়াজ রফতানি  বন্ধ করে দিল  ভারত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এবার পেঁয়াজ রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিল ভারত। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা রবিবার এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণ বিষয়ক মুখপাত্র সীতাংশু কর দেশটির গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘রফতানি নীতি সংশোধন করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানিতে এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।’ চলতি বছর বন্যার কারণে ভারতের মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে পেঁয়াজের উৎপাদন বড় ধাক্কা খেয়েছে। ফলে পেঁয়াজের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দামও বাড়ছে গত কিছুদিন ধরে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দিল্লীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ রুপীতে, যা এক মাস আগেও ২০ থেকে ৩০ রুপী ছিল। ভারতের কোন কোন এলাকায় পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকাতেও উঠেছে। আর ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে রবিবার প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা এবং দেশী পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভারত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পেঁয়াজ রফতানি করেছে, যার একটি বড় অংশ এসেছে বাংলাদেশে। সরকারী হিসাবে বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টনের মতো। তাতে চাহিদা পূরণ না হওয়ায় আমদানি করতে হয় ৭ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন। স্বল্প দূরত্ব আর সহজলভ্যতার কারণে আমদানির বেশিরভাগটা ভারত থেকেই হয়। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। আর ওই খবরে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়ে যায় ২০ থেকে ২৫ টাকা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। টিসিবি খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। দেশের চাহিদা পূরণে ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার, মিসর ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হচ্ছে জানিয়ে বাণিজ্য সচিব মোঃ জাফর উদ্দীন এক সপ্তাহ আগেও বলেছিলেন, ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, দাম দ্রুত কমে আসবে। কিন্তু তার মধ্যেই রবিবার ভারতের রফতানি বন্ধের এ ঘোষণা এলো। শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা আবদুল মাজেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের একমাত্র আমদানি উৎস ভারত। মিয়ানমার থেকে যে পেঁয়াজের চালান এসেছিল, তার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে আনার পথে। ফলে ভারত যদি পেঁয়াজ রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় তা দেশের বাজারে বড় রকমের প্রভাব ফেলবে।’ কাঁচামালের আড়তদার মেসার্স ইমাম ট্রেডার্সের আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, শ্যামবাজারে রবিবারও প্রতি কেজি ভারতীয় ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। ভারত পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করলে বাংলাদেশের বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে। সরকার তুরস্ক ও মিসরের বাজারকে বিকল্প ভাবলেও বাস্তবতা হচ্ছে এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয়ে।
×