ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সুমেরু ॥ বিপর্যয় আসছে

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সুমেরু ॥ বিপর্যয় আসছে

সুমেরু বৃত্তের উত্তরে আমাদের এ পৃথিবীটা কয়েকশ’ ফুট গভীর বরফে জমাট বাঁধা। ৯০ লাখ বর্গমাইলের এ বরফের আস্তরণ গ্রীষ্মকালে গলে ছোট হয়ে আসে এবং শীতে জমাট বেঁধে আবার আগের চেহারা ধারণ করে। কিন্তু পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সুমেরুর বরফ নজিরবিহীনভাবে গলছে। নাসা বিজ্ঞানীদের হিসাবে প্রতি বছর সুমেরু অঞ্চল গড়ে প্রায় ২১ হাজার বর্গমাইলের বরফ হারাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের আগেই গ্রীষ্মকালে সুমেরু মহাসাগর সম্পূর্ণ বরফমুক্ত হয়ে পড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অবস্থাটা প্রথম ঘটবে ২০৩৬ সালে। বরফ গলা সংক্রান্ত এ পরিবর্তনটা আমাদের কল্পনার চেয়েও দ্রুতগতিতে ঘটবে। সুমেরুর পার্মাফ্রস্ট বা চিরহিমায়িত অঞ্চল অপ্রত্যাশিত দ্রুতগতিতে বিলুপ্ত হলে প্রতিবছর অতিরিক্ত কয়েকশ’ কোটি টন মিথেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুম-লে গিয়ে মিশবে এবং তার পরিণতিতে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে পৃথিবী। চিরহিমায়িত অঞ্চলে এক সময় যেখানে বছরে মাত্র কয়েক ইঞ্চি বরফ গলত সেখানে এখন হঠাৎ করে কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১০ ফুট পর্যন্ত বরফ গলে যেতে পারে। এতে করে চিরহিমায়িত অঞ্চল বলে পরিচিত এলাকায় সৃষ্টি হবে জলাভূমি। এতে ভূ-গর্ভে আটকে থাকা ১৬০০ গিগাটন কার্বনের নির্গমন ত্বরান্বিত হবে। সুমেরু যেরূপ অপ্রত্যাশিত দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে তাতে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার প্রতি এক ডিগ্রী বাড়লে পার্মাফ্রস্ট বা চিরহিমায়িত অঞ্চল থেকে কার্বন ও মিথেনের নির্গমন কয়েক বছর আগেও যতটা হবে বলে ভাবা হয়েছিল তার দ্বিগুণ বা ত্রিগুণ হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যদি আমরা না কমাই তাহলে কয়েক দশকের মধ্যে পার্মাফ্রস্ট বা চিরহিমায়িত অঞ্চল হয়ে দাঁড়াবে চীনের মতোই গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমনের বৃহত্তম উৎস। পার্মাফ্রস্ট অঞ্চলের উষ্ণতা যে বাড়ছে তা আর প্রমাণ দিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৮ সালের বসন্তে দীর্ঘ অন্ধকার মেরুরাত্রিতে সাইবেরিয়ার চেরস্কির চার পাশের ভূ-পৃষ্ঠে মোটেই বরফ জমেনি। এমন কথা আগে কখনই শোনা যায়নি। জানুয়ারি মাসে সাইবেরিয়ায় এতই প্রচ- ঠা-া থাকে যে মানুষের প্রশ্বাসও জমাট বেঁধে যায়। অথচ তিন বছর আগে সেখানকার পার্মাফ্রস্টের পৃষ্ঠদেশের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস বা হিমাঙ্কের নিচে তিন ডিগ্রী সেলসিয়াস। পরের বছর তা নেমে আসে মাইনাস ২ ডিগ্রী এবং এর পরের বছর মাইনাস ১ ডিগ্রীতে। এ বছর সেখানে তাপমাত্রা ছিল ২ ডিগ্রী। এদিক দিয়ে দেখলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে পৃথিবীর পাঁচটি উষ্ণতম বছর এসেছে ২০১৪ সালের পর থেকে। আর সুমেরু অঞ্চল এ গ্রহের বাকি অংশের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি গতিতে উষ্ণ হচ্ছে। সেটাও হচ্ছে সাগরের যে বরফ ওই অঞ্চলকে শীতল রাখতে সাহায্য করত তা গলে যাওয়ার কারণে। ২০১৭ সালে গ্রীনল্যান্ডে মানুষের জানা ইতিহাসের ভয়াবহতম দাবানল ঘটেছিল। ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে সুমেরু বৃত্তের ২৪০ মাইল ওপরে নরওয়ের লাকসেলভে তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সুমেরু অঞ্চলের বল্গাহরিণরা গরমের হাত থেকে স্বস্তি পেতে রাস্তার সুরঙ্গে গিয়ে লুকিয়েছিল। পার্মাফ্রস্টের সর্বত্র তাপমাত্রা গত অর্ধ শতাব্দী যাবত ক্রমাগতই বাড়ছে। আলাস্কার উত্তর ঢালে ত্রিশ বছরে তা ১১ ডিগ্রী ফারেনহাইট বেড়েছে। উষ্ণ গ্রীষ্মকাল ইতোমধ্যে সুমেরু অধিবাসীদের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। গোটা পার্মাফ্রস্ট ১৬০০ গিগাটন পর্যন্ত কার্বন ধারণ করে আছে। বায়ুম-লে যে পরিমাণ কার্বন আছে এটা তার প্রায় দ্বিগুণ। এই সেদিন পর্যন্ত গবেষকদের ধারণ ছিল যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পার্মাফ্রস্টের বড়জোর ১০ শতাংশ কার্বন বেরিয়ে এসে বায়ুম-লে মিশবে এবং এ জন্য ৮০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সুমেরুতে ভূ-পৃষ্ঠের সক্রিয় স্তরে শীতকালে বরফ মোট বাধা হয়ে যায় তখন এই কার্বন বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। বাড়তি উষ্ণতার ফলে মাইক্রোবগুলো প্রতি গ্রীষ্মের অল্প কয়েক মাসের পরিবর্তে এখন সারা বছর ধরে মৃত্তিকার জৈব উপাদান চিবিয়ে খায় এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড বা মিথেন গ্যাস উগরে বের করে দেয়। আর শীতকালীন সময়ের উষ্ণতা পার্মাফ্রস্ট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বরফ গলার কাজ দ্রুততর করে ফেলে। আগের অনেক ধারণাই এখন ভেঙ্গে যাচ্ছে। এক তথ্যে জানা গেছে শীতের গোড়ার দিকে আলাস্কার উত্তর ঢাল থেকে বেরিয়ে আসা কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ১৯৭৫ সালের পর থেকে ৭৩ শতাংশ বেড়েছে। পার্মাফ্রস্টে এখন অনেক কিছুই ঘটছে যা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। পার্মাফ্রস্টের আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ। নিউইয়র্ক নগরীতে যত লোকের বাস তার অর্ধেক সংখ্যক লোক বাস করে সেখানে। সুমেরু সাগরের বরফের পুরোটাই কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়ে পরিমাপ করা যায়। পার্মাফ্রস্টের ক্ষেত্রে তা পারা যায় না। সেখানে কি ঘটবে তা নির্ণয় করার মতো সরঞ্জাম নেই। জলবায়ু উষ্ণ হয়ে ওঠায় সুমেরু অঞ্চলে সবুজের সমারোহ ঘটেছে। তৃণভূমি বিস্তৃত হচ্ছে। তুন্দ্রা অঞ্চলে দাবানল এক সময় বিরল ঘটনা ছিল। এখন অহরহ ঘটছে। আগুনে মৃত্তিকার ওপরের স্তর উত্তপ্ত হচ্ছে এবং তার প্রভাবে নিচের পার্মাফ্রস্টের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। কোন পাহাড়ের বা নদীর কাছে পার্মাফ্রস্টের বরফ গললে তা থেকে ভূমিধস হতে পারে। এতে আরও বেশি জায়গার পার্মাফ্রস্ট উন্মোচিত হয়ে বরফ গলার কাজ অনেক বেশি ত্বরান্বিত করে তোলে। বরফ গলার কারণে যেসব হ্রদ আগে জমাট বরফ ছিল এখন সেগুলো শীতকালে আংশিক তরল অবস্থাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ঠা-ায় জমাট বাধা মাটির মধ্যে চাপা পড়ে থাকা বরফ গলার ফলে সেই বরফ গলা পানি পার্মাফ্রস্ট দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বরফ গলার কাজ আরও বাড়িয়ে তোলে। এতে পার্মাফ্রস্টের ওপরের মাটি ধসে পড়ে। ফলে সৃষ্টি হয় জলাশয় এবং পানির প্রবহমান ধারা। এতে ঠা-ায় জমাট বাঁধা মাটি ধসে পড়ার ব্যাপারটা ত্বরান্বিত ও ব্যাপকতর হয়। এ প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত বরফ গলা। এতে পার্মাফ্রস্টে আটকে থাকা কার্বন বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। এর ফলে সুমেরুর চেহারা লক্ষণীয়ভাবে বদলে যাচ্ছে। পার্মাফ্রস্টের বরফ গলার পাশাপাশি উদ্ভিদ জন্মানোর মৌসুমও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এতে বদলে যাচ্ছে পার্মাফ্রস্টের দৃশ্যপট। সুমেরু অঞ্চল ক্রমাগত সবুজ বা হরিৎবর্ণ ধারণ করছে। যেমন আলাস্কা নদী তীরবর্তী সমভূমিতে ঝোপঝাড় প্রায় দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে। এসব উদ্ভিদের কারণে তৃণভোজী প্রাণীরা উত্তর দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। এদের মধ্যে আছে খরগোশ, বন বিড়াল, হরিণ ইত্যাদি। তারা পার্মাফ্রস্টের ওই অঞ্চলে বাস করছে। প্রতিবছর তারা ৫ মাইল করে উত্তর দিকে সরে যাচ্ছে। নতুন স্নায়ুযুদ্ধের ক্ষেত্র সুমেরুর বরফ গলার ফলে বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা সম্পদ ও শিপিং রুটের নিয়ন্ত্রণ লাভের জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর শীর্ষ ভাগে সংঘাতের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। সুমেরু অঞ্চল একদা প্রায় দুর্ভেদ্য বলে বিবেচিত হতো। এখন বরফের কঠিন আস্তরণ গলে ট্রিলিয়নকে ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ উন্মোচিত হওয়ায় এলাকাটি নতুন স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব লাভ করেছে। এ অঞ্চলের চারপাশে থাকা আটটি দেশ সুমেরুর ওপর তাদের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য কাড়াকাড়ি লাগিয়ে দিয়েছে। সুমেরু অঞ্চলে নিজের ক্ষমতা জাহির করার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো আইসব্রেকার। অন্য যে কোন দেশের চেয়ে রাশিয়ারই রয়েছে সবচেয়ে বেশি আইসব্রেকার। চীনও আইসব্রেকারের পেছনে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। সুমেরুতে ভূখ- আছে এমন আটটি দেশ হলো ডেনমার্ক, নরওয়ে, কানাডা, ফিলন্যান্ড, আইসল্যান্ড, রাশিয়া, সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশগুলোর নিজ নিজ উপকূল থেকে অনধিক ২শ’ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্র তলদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর এখতিয়ার আছে। সুমেরুর সুবিস্তৃত উপকূল রেখা থাকায় রাশিয়া ওই অঞ্চলে আধিপত্য করার মতো অবস্থানে আছে। স্ট্র্যাটেজিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক নর্দার্ন সি রুট রাশিয়ার উত্তর উপকূল দিয়ে গেছে। গত মে মাসে কানাডা জাতিসংঘের কাছে সুমেরুর ৪ লাখ ৬৩ হাজার বর্গমাইল সমুদ্র তলদেশ দাবি করেছে। একই ভূখ-ের কিছু কিছু অংশের ওপর রাশিয়া ও ডেনমার্কেরও দাবি থাকায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। সুমেরুতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তার সুমেরু অঞ্চলে প্রতিবেশীদের বাহিনীকে ছাড়িয়ে গেছে। রাশিয়া সেখানে নতুন নতুন ঘাঁটি ও স্টেশন তৈরি করছে। রাশিয়া ও কানাডা রিফুয়েলিং এবং সৈন্য ও মালপত্র আনা-নেয়ার স্ট্র্যাটেজিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য সুমেরুতে বন্দরও গড়ে তুলছে। নানিসিভিকে কানাডার নতুন বন্দর সে দেশের কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীকে রিফুয়েলিংয়ের সুযোগ দেবে। বরফ গলার ফলে জাহাজ চলাচলের পথ উন্মুক্ত হওয়ায় এসব বাহিনী উত্তর-পশ্চিম সমুদ্রপথে টহল দেবে। সুমেরুতে চীনের নিজস্ব কোন ভূ-খ- নেই। তবে বরফ গলার কারণে বাণিজ্য পথ প্রতিষ্ঠা ও সম্পদ আহরণের জন্য চীন রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্বে আবদ্ধ হয়েছে। আইসল্যান্ডের কেফ্লাভিক ঘাঁটি থেকে ন্যাটো নজরদারি চালানো এবং রুশ বাহিনী অনুপ্রবেশ করলে আগাম হুঁশিয়ারি প্রদানের জন্য নিয়মিত টহলদার বিমান সুমেরুতে পাঠিয়ে থাকে। সুমেরু অঞ্চলে ট্রিলিয়নকে ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদ আছে। ওইগুলোর মধ্যে আছে সোনা, হীরক, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদও আছে। এসব সম্পদের কারণেই সুমেরু অঞ্চল ক্ষমতা ও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আর্কটিক দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও নরওয়েই সেখানকার সম্পদ আহরণে সবচেয়ে সক্রিয়। বিগত দশকে এ দুটি দেশ প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল অবকাঠামো, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে কয়েক শ’ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। সে তুলনায় কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ সুমেরু বৃত্তের উত্তরাংশকে কার্যত উপেক্ষাই করেছে। অথচ সুমেরুর উপকূল রেখার প্রায় অর্ধেক কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র একত্রে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সুমেরুর উত্তরাংশে রাশিয়ার ৫১টি আইসব্রেকারের জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের আছে মাত্র ৫টি। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোন গভীর পানির বন্দর নেই। এই অসমতা উত্তেজনা ও সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি করছে যা থেকে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। বেশিরভাগ মানদ- অনুযায়ী আজ রাশিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে সুমেরু অঞ্চলের প্রধান শক্তি। এর রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম নৌবহর যা উত্তরের প্রচ- শীতল জলরাশিতে সারা বছর তৎপরতা চালাতে সক্ষম। সুমেরু বৃত্তের ওপরে রাশিয়ার কয়েক ডজন সামরিক ঘাঁটি আছে। অন্যদিকে আমেরিকার রয়েছে একটি ঘাঁটি এবং উত্তর গ্রীনল্যান্ডে ধার করা ভূমিতে একটি বিমান ঘাঁটি। রাশিয়া সুমেরুর উত্তরে নতুন সৈন্য মোতায়েন করেছে, সাবমেরিন তৎপরতা বাড়িয়েছে এবং সুমেরুর আকাশে যুদ্ধ বিমানের আনাগোনা ঘটিয়েছে। সুমেরুতে রাশিয়ার ভূখ-ে ২০ লাখ রুশ বাস করে। সেখানে মারমানস্ক ও নরিলস্কসহ বেশ কিছু বড় নগরী আছে। সুমেরুতে মার্কিন ভূখ-ের সর্ববৃহৎ শহরের নাম উটকিয়াজভিক। সেখানে ৪ হাজারের ওপর লোকের বাস। রুশরা আহরিত সম্পদের ওপর দারুণভাবে নির্ভর করে। তারা সুমেরুকে তাদের ভবিষ্যত সম্পদের স্ট্র্যাটেজিক ঘাঁটি হিসেবে দেখে। ওদিকে চীনও সুমেরু অঞ্চলে সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। রাশিয়ার তেল ও গ্যাস সম্পদে বিনিয়োগ করা ছাড়াও চীন সুমেরু অঞ্চলে নতুন সমুদ্রপথের সুযোগ পেতে বিশেষভাবে আগ্রহী। এতে এশিয়ার বন্দর ও ইউরোপের বাজারের মধ্যে ট্রানজিটের সময় দু’সপ্তাহ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। গত জানুয়ারি মাসে চীন সরকার এক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে সেখানে উত্তরাঞ্চলে তাদের অভিপ্রায় বর্ণিত আছে। চীন আশা করে যে, অন্যান্য দেশের সহযোগিতায় পোলার সিল্ক বেড়ে নির্মাণ করা যেতে পারে যা একান্তভাবে বাণিজ্য ও গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হবে। এক চীনা কর্মকর্তার ভাষায় : ‘আমরা জানি সুমেরু অঞ্চলে আমাদের ভূখ-গত কোন দাবি নেই। তবে সেখানে যদি এমন কিছু থাকে যা আমরা পেতে পারি তাহলে তা ছেড়ে আসতে চাই না।’ ন্যাটো কর্মকর্তাদের কেউ অবশ্য মনে করেন না যে, রাশিয়া সুমেরুর উত্তরাঞ্চলে কোন ধরনের যুদ্ধ শুরু করবে। তবে অনেকের ধারণা একটা সংঘর্ষ দক্ষিণের কোথাও শুরু হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়বে সুমেরু অঞ্চলে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
×