ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরযাত্রী নয়, কনেযাত্রী

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বরযাত্রী নয়, কনেযাত্রী

বিয়ে একটি সামাজিক ও ধর্মীয় সুশৃঙ্খল বিধি। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই প্রথা সমাজ-সংস্কারের বিশিষ্ট অংশ। সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে আদি মাতৃতান্ত্রিক পরিবার কোন এক পর্যায়ে পিতার পরিচয়কে স্পষ্ট করতে পারায় নতুন যে সংগঠনটি মানব ইতিহাসকে অন্যমাত্রা দেয় তা হলো পিতৃতান্ত্রিক পরিবার। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সভ্য সমাজের পরিবারই পুরুষতান্ত্রিক, সমাজে আধিপত্যকারী পুরুষ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। পৃথিবীর সব দেশে এমন পরিবারই দেখা যায়। তবে কিছু পাহাড়ী দুর্গম এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের শেষ চিহ্নটুকু এখনও দৃশ্যমান। বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গারো, সিলেটের খাসিয়া উপজাতির সামাজিক বলয় মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের চিহ্ন এখনও ধারণ করে আছে। তেমন ভাবেই বিয়ের প্রথা, বিধি, সংস্কার এগুলো প্রচলিত ধারায় চলতে থাকে। তবে সিংহভাগ পরিবারে বিয়ের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান উদযাপিত হয় বরসহ বর যাত্রীদের কনের বাড়িতে গিয়ে এই উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে। এতিদিন ধরে এমন ধারাই বিয়ের আনুষঙ্গিক আয়োজন পালন করা হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ এক বিবাহ-অনুষ্ঠানের নতুন চমক সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অবাক বিস্ময়ে সবার নজরে পড়ে এক অন্যরকম বিয়ের অনুষ্ঠান। প্রচলিত ধারাকে পাশ কাটিয়ে নতুন এক নিয়মে কনে চলে আসে বরের বাড়িতে। একা নয়, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে। অর্থাৎ কনের বাড়িতে বরযাত্রী আসার বদলে বরের বাড়িতে কনে যাত্রীর সমাগম হয়। কনে নিজে তার বন্ধুদের নিয়ে ফুলে ফুলে সাজানো গাড়িতে গানের সুরধ্বনিতে রওনা দেয় বরের বাড়িতে। এমন অন্য রকম অনুষ্ঠান দেখে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে বৈকি। প্রথমত বর-কনেরই ইচ্ছা ছিল তাদের বিয়েটা আলাদা মাত্রার হবে। তাদের ইচ্ছাকে সম্মান দিয়ে অভিভাবকরাও সানন্দে সম্মতি দেন। যৌতুকবিহীন এমন অসাধারণ অনুষ্ঠানটি সবাইকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। ঘটনাটি ঘটে মেহেরপুরের ছেলে আর চুয়াডাঙ্গার এক তরুণীর বিয়েতে। শনিবার মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামে কনে পক্ষ শতাধিক অতিথি নিয়ে বরের বাড়িতে উপস্থিত হয়। বধূবেশে সজ্জিত, কনে খাদিজা আক্তার খুশী অত্যন্ত সাবলীলভাবে বরের বাড়িতে আসে। পাত্র তরিকুল ইসলাম জয় নিজের বাড়িতেই বর সেজে কনের অপেক্ষা করতে থাকে। কনে তার পিতা-মাতার কনিষ্ঠ সন্তান। সর্ব শেষ সন্তানের বিয়েটা বাবা-মা নিজেই প্রচলিত প্রথার বাইরে অন্যভাবে দিতে আগ্রহী ছিলেন। আর পাত্রের বাবা-মারও তাতে কোন আপত্তি ছিল না। তারা কনে যাত্রীদের সাদরে বরণ করে আনুষঙ্গিক সব নিয়মই পালন করে। পুরো অনুষ্ঠান সমবেত মানুষের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। কনের বাবা তার অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে বলেন, ছেলেমেয়ের ফারাক দূর করতেই তারা এমন ব্যতিক্রমী বিয়ে-উৎসবের আয়োজন করেছেন। প্রতিনিয়তই সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুরনো অনেক বিধি, প্রথা ও সংস্কারের নতুন সমন্বয় সম্ভাবনার দ্বারকে আরও উন্মুক্ত করে। ছেলের বাবাও মহাখুশি। তার মতে, চমক আর ব্যতিক্রম সব সময় মানুষকে নতুন কিছু ভাবতে শেখায়। আমরা নতুন পথের সন্ধান দিলাম। আরও অনেকে তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে শামিল হতে পারেন। আসলে প্রচলিত প্রথা, সংস্কার সামাজিক বলয়ে তৈরি হওয়া এক ধরনের নিয়মবিধি। সময়ের পরিবর্তনে সেখানে নতুন কিছু সংযোগ হওয়ায় যথার্থ প্রথার কোন ব্যত্যয় ঘটে না- রূপান্তর হয় মাত্র।
×