ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তায় পরিবর্তন দেখাতে চায় জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তায় পরিবর্তন দেখাতে চায় জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ এবং সড়ক নিরাপত্তায় কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শীঘ্রই এ লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঝিনাইদহ থেকে যশোর হয়ে ভোমরা পর্যন্ত একশত ষাট কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিল বিশ^ব্যাংক। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ^ব্যাংকের কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিশ^ব্যাংকের পক্ষ থেকে তেমন একটা প্রস্তাব আসেনি। সম্প্রতি আবারো বাংলাদেশে বিণিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সাংবাদিকদের একথা জানান। এর আগে মন্ত্রণালয়ের অফিসকক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিবের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ দূত জ্যাঁ টড এর নেতৃত্বে আট সদস্যের এক প্রতিনিধিদল মন্ত্রীর সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টভিগ শ্যাফার উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, হাটিকমরুল থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত একশ’ কিলোমিটার সড়ক এশিয়ান ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় চারলেনে উন্নীত করা হবে। এ সড়কের ভোমরা পর্যন্ত অংশ উন্নয়নে সহায়তা দিবে বিশ্বব্যাংক। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সড়ক নিরাপত্তা বিধান এবং পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা জোরদারকরণে গঠিত কমিটির একশ’ এগারো দফা সুপারিশ নিয়ে কাজ করছে বিশ্বব্যাংকের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সেল। নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক আগামী তিন বছরের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তায় দেশের জনগণকে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখাতে চায় বলে এসময় মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান। এর আগে মন্ত্রীর সাথে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চীফ অব পার্টি মিজ ক্যাটি ক্রোয়েক এর নেতৃত্বে চার সদস্যের এক প্রতিনিধিদল সাক্ষাত করেন। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার বিষয় জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক একসময় পদ্মা সেতু নির্মাণে সহায়তা করতে চেয়েছিল, কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তা নেয়া হয়নি। এখন নতুন করে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চায়। তারা সড়ক নিরাপত্তায় সহায়তা দিতে চায়। ঝিনাইদহ থেকে হাটিকুমরুল (১৬০ কি.মি.) ও ঝিনাইদহ থেকে ভোমরা (১০০ কি.মি.) এই দুটি ২৬০ কি.মি. রাস্তা তারা ফোর লেন করে দিতে চায়। তারা এই প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা যদি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করি, তাহলে তাদের ফিরতি চিঠি লিখবো। পদ্ম সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা ঘুঁচিয়ে ফেলার কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রকল্পে নতুন করে বৈশ্বিক এই ঋণদাতা সংস্থার কাজ করার আগ্রহে সরকারও ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। কাদের বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে হঠাৎ করে সরে গেলে তাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তারপর বিশ্বব্যাংক নতুন করে আবার যাতায়াত শুরু করতে চায়। তারা বিনিয়োগ করতে চায়, প্রথমে তারা নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ শুরু করতে চায়। তাদের সঙ্গে ইউনাটেড নেশন্সও রয়েছে। সড়ক নিরাপত্তায় যা অর্থায়ন করা দরকার তা বিশ্ব ব্যাংক করবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ইউনাটেড নেশনসও তাদের সঙ্গে অর্থায়ন করবে। তিন বছরের পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রোড সেফটির বিষয়টিতে একটা দৃশ্যমান পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবেন বলে মনে করছেন বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাদের ফান্ডিং ভিন্ন, কিন্তু তারা একসঙ্গে কাজ করবে। সড়কে যে বিশৃঙ্খলা আছে, কখনও কখনও নাজুক অবস্থা, সেখানে তারা দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে চায়, সে লক্ষ্যে তারা কাজ করবে।” ভোমরা ও ঝিনাইদাহ থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ কাজেও বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন করবে তবে এ প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংক এখনও জানায়নি। মন্ত্রী জানান, তারা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। আমরা অ্যাপ্রুভ করলে বিশ্ব ব্যাংক থেকেও অনুমোদন লাগবে। যা যা লাগবে সবকিছু নিয়েই কাজ করবে। যে সহায়তা দরকার তা তারা নেবে, বলেন ওবায়দুল কাদের। সরকার বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক রাখতে চায়না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আগে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমরা তাদের নতুন প্রপোজালে সাড়া দিচ্ছি। বাংলাদেশের সঙ্গে তারা কাজ করবে। তারা বলেছে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা নতুন করে কাজ করবে। ছয় বছর আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পিছু হটেছিল। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের পথে এগিয়ে যায়। তবে তারপর বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে তিক্ততার অবসান ঘটার কথা সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেছিলেন। বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমও বাংলাদেশ সফরে এসে এখানকার অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসাও করেছিলেন। গত জুানয়ারি বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফানের সঙ্গে বৈঠকের পর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও সংস্থাটির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির কথা বলেছিলেন। যা আরেকধাপ অগ্রগতি হল মঙ্গলবার সড়ক মন্ত্রীর সঙ্গে বিশ^ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে।
×