ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রেলের উচ্ছেদ অভিযান

সড়ক ফুটপাথে অবৈধ স্থাপনা নয়- উত্তর সিটির অভিযান শুরু

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 সড়ক ফুটপাথে অবৈধ স্থাপনা নয়- উত্তর সিটির অভিযান শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবিবার থেকে বিশেষ অভিযানে নেমেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। সড়ক ও ফুটপাথ থেকে রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে শুরু করে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান সবই গুঁড়িয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। সকল প্রকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এ অভিযান শুরু করে সংস্থাটি। এর ফলে এখন থেকে রাস্তা ও ফুটপাথে কোন প্রকার অবৈধ স্থাপনা থাকতে দেবে না ডিএনসিসি। ক্লিন ঢাকা স্লোগানে রবিবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ থেকে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানকালে অন্যদের মধ্যে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল হাই, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে রাজধানীর শাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবসহ কয়েক শ’ বসতবাড়ি ও বিভিন্ন প্রকার স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। উত্তরায় উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট মোঃ আমিনুল ইসলাম, সাজিদ আনোয়ার, আব্দুল হামিদ মিয়া ও জুলকার নায়ন। অভিযান শুরুর পর ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৩ নম্বর সেক্টর হয়ে ৭ নম্বর সেক্টরের ব্রিজের ওপর দিয়ে রাজলক্ষ্মী এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় ফুটপাথের দু’পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান, স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার। তবে এর আগে অভিযানের খবর পেয়ে ফুটপাথের ওপর থাকা অনেক দোকানি তাদের মালামাল গুটিয়ে নিয়ে যায়। পরে আদালত দুপুর ১টার দিকে রাজলক্ষ্মী মার্কেটের পেছনে ফুটপাথ দখল করে অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা উত্তরা পূর্ব-পশ্চিম স্বেচ্ছাসেবক লীগের অফিসও গুঁড়িয়ে দেয়। উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতি বিষয়ক সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। ফুটপাথ যতদিন পর্যন্ত দখলমুক্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত অভিযান চলবে। সে ক্ষেত্রে এক এলাকায় যদি ৫-১০ দিনও লাগে তা করা হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ থেকে শুরু করে, গরিবে নেওয়াজ এভিনিউ, রবীন্দ্র সরণি এবং মাসকট প্লাজার পেছনে ৩৫ নম্বর সড়কের ফুটপাথ ও সড়ক থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। প্রায় তিন শতাধিক অস্থায়ী দোকান, শেড, সিঁড়ি ইত্যাদি উচ্ছেদ করে জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। অভিযানকালে সরকারী কাজে বাধা দেয়ায় একজনকে তিন মাসের কারাদ-, অবৈধভাবে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করায় একজনকে সাত দিনের কারাদন্ড এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে তিন লাথ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হাংরি ডাক-কে দুই লাখ টাকা এবং খাজানা-কে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানকালে ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, অনেকে ফুটপাথ দখল করে অবৈধ বাণিজ্য করছে, বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক অফিস নির্মাণ করেছে। যদিও সিটি কর্পোরেশন সুন্দর সুন্দর রাস্তা তৈরি করে, পথচারীদের জন্য ফুটপাথ তৈরি করে, কিন্তু ফুটপাথ দখল করে বাণিজ্য করায় জনগণ ফুটপাথ ব্যবহার করতে পারে না। তাই তারা ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে, ফুটপাথে কোন রকম বাণিজ্য চলবে না, কোন রকম রাজনৈতিক কার্যালয় থাকতে পারবে না। আমি সকলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি আপনারা আমাদের ফুটপাথগুলো মুক্ত করে দিবেন। মানুষ ফুটপাথ দিয়ে হাঁটলে রাস্তায় গাড়ি নির্বিঘ্নে চলতে পারবে, কোন যানজট থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমাদের সবাইকে এই শহরটাকে ভালবাসতে হবে, এই দেশটাকে ভালবাসতে হবে। ফুটপাথে হকাররা আছে, অনেক বড় বড় মার্কেটের সিঁড়ি রয়েছে ফুটপাথের ওপর। জনগণকে কষ্ট দিয়ে নিজেদের স্বার্থে কোন কিছু করতে দেয়া হবে না। জনগণ সবার আগে। আজকে উত্তরা থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা উত্তরের সব জায়গায় ডিএনসিসি অভিযান পরিচালনা করবে। আমরা ফুটপাথে কোন রকম অবৈধ দখল দেখতে চাই না। এখন সময় হয়েছে ফুটপাথগুলো জনগণকে বুঝিয়ে দেয়ার। আজকের উচ্ছেদের ওপর আগামীকাল পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে। পরশু দিন আবারও উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। উত্তরার যেসব সড়ক-ফুটপাথে উচ্ছেদ অভিযান চলবে ॥ ডিএনসিসি সূত্র জানায়, অঞ্চল-১ এর ১ নম্বর ওয়ার্ডে সোনারগাঁও জনপথ রোড, সাত নম্বর সেক্টরের ৩৫ নম্বর রোড, রবীন্দ্র সরণি, ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কের উভয় পাশ, জসীমউদ্দীন এভিনিউ, গাউসুল আজম এভিনিউ, ৭ নম্বর সেক্টরের ২৭ নাম্বার রোড, ঈশা খাঁ এভিনিউ, আলাউল এভিনিউ, শাহজালাল এভিনিউ, ৬ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোড, গরিবে নেওয়াজ এভিনিউ, বেড়িবাঁধ রোড (সেক্টর-৮), ৩ নম্বর সেক্টরের দুই নম্বর রোড, ৯ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর রোড, ৯ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোড, ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোড, সেক্টর ১০ রানা ভোলা রোড, লেকপাড় রোড (সেক্টর-৭), ৭ নম্বর সেক্টরের ২৯ নম্বর রোড, ১০ নম্বর সেক্টরের ১২/এ নম্বর রোড, কাঁচা বাজার মোড় (সেক্টর ১২), ৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোড ও ৭ নম্বর রোড (ফ্রেন্ডস ক্লাব)। ১১ নম্বর সেক্টরের ১০/বি নম্বর রোড, ৭ নম্বর সেক্টরের ৩৪ নম্বর রোড, ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোড, ১ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর ও ৭ নম্বার রোড, ৯ নম্বর সেক্টরের কাঁচা বাজার রোড এবং শাহ মখদুম রোড এলাকার সড়ক ও ফুটপাথে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে। এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের দুটি টিম উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নিয়ে রেলওয়ে কলোনির বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়। সকাল ১০টার দিকে শুরু হওয়া এ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেলওয়ের জায়গা দখল করে শাজাহানপুরে হাজার হাজার বসতবাড়ি গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। বস্তির আকারে গড়ে তোলা এসব বাড়ি ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে কোটি টাকার ওপরে ভাড়া তোলা হয়। বছরের পর বছর ধরে রেলওয়ে কলোনির জায়গা দখল করে এসব অবৈধ স্থাপনা করা হলেও কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। কারণ রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও এখান থেকে যে আয় হয় তার ভাগ পান। কলোনি অঞ্চলের অবৈধ স্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে ‘বাংলদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’ নামে ক্লাব গড়ে তোলা হয়। এ ক্লাবে বখাটেদের আড্ডার পাশাপাশি জুয়ার আসরও বসত বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় রেলওয়ের টিম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে ঢুকে জুয়া খেলার টেবিল এবং কয়েক বান্ডেল তাস পান। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্লাবটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। অবশ্য তার আগে আশপাশে থাকা হাজারের অধিক অবৈধ বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া রেলওয়ে ল্যান্ড এ্যান্ড বিল্ডিংয়ের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওপর মহলের নির্দেশে আমরা এ উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি। এখানে কোন অবৈধ স্থাপনা থাকতে দেয়া হবে না। এখানে তো দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এতদিন কেন অভিযান চালানো হয়নি? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি মাত্র ৯ মাস। এই ৯ মাসে কাগজপত্র সব ঠিকঠাক করতে একটু সময় লেগেছে। এখন আর কোন সমস্যা নয়। তিনি বলেন, এ উচ্ছেদের পর আবার অবৈধভাবে দখলের সুযোগ থাকবে না। কারণ আমরা নিয়মিত মনিটরিং করব। এখানে কোন অবৈধ স্থাপনা আমরা থাকতে দেব না।
×