ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই স্বামীর চাপে অসহায় নাহারের নবজাতক

প্রকাশিত: ১০:২০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  দুই স্বামীর চাপে অসহায় নাহারের  নবজাতক

আজাদ সুলায়মান ॥ মধ্যবিত্ত পরিবারের সোমত্ত কন্যা নাহারের বিয়ে হয়েছিল আজাদ নামে এক যুবকের সঙ্গে। সংসার টিকেছিল দশ বছর। সেই ঘরে রয়েছে ৮ বছরের একটি ফুটফুটে কন্যা। কিন্তু কী এক তুচ্ছ কারণে দেখা দেয় দাম্পত্য কলহ। এরই জেরে শেষ পর্যন্ত বিয়েটা টেকেনি। আকর্ষণীয় চেহারা থাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করতেও বেগ পেতে হয়নি নাহারের। এবার রাসেল নামে এক তরুণের সঙ্গে বিয়ে হয়। কিন্তু বিধিবাম- এ বিয়েটাও বেশিদিন টিকল না। রাসেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তার ঔরসজাত সন্তান গর্ভে নিয়েই নাহার চলে যায় তার প্রথম স্বামী আজাদের ঘরে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর নাহার জন্ম দেয় রাসেলের ঔরসজাত সন্তান। বিরোধটা এই নবজাতক নিয়ে। আজাদের চাপের মুখে হাসপাতাল থেকে নবজাতককে বাসায় নিতে পারছে না নাহার। বাধ্য হয়ে নবজাতক হাসপাতলে ফেলে রেখে আজাদের ঘরে ফিরে যান। দু’স্বামীর টানাপোড়নে নাহারের নবজাতক এখনও পড়ে আছে ঢাকা মেডিক্যালে। এ অবস্থায় রবিবার হাসপাতালে ছুটে যান নাহার। অকপটে স্বীকার করেন শিশুর মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, বাসায় নিয়ে অন্য কোথাও দত্তক দিয়ে দেবেন। এই সন্দেহে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন নাহারকে। শিশুটি কি আদৌ তার নাকি অন্য কারও- এমন জেরার মুখে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাহার। হাসপাতালে এক নার্স এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে জানান, শিশুটিকে দেখতে দুপুরে হাসপাতালে আসে নাহার। তিনি শিশুটিকে দেখে কান্নকাটি করেন। ওকে বাসায় নিতে সমস্যা কোথায়- প্রশ্নের জবাবে শুধু বললেন, পারিবারিক ঝামেলায় এখনই আমি বাচ্চাটাকে নিতে পারছি না, সময় হলে সবই বলব। নবজাতক মায়ের মুখে এ ধরনের অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে হাসপাতালের স্টাফদের মনে সন্দেহ জাগে। তাকে নানা ধরনের জেরা করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে নাহার একটি আবেদন করেন। সেখানে উল্লেখ করেন পারিবারিক ঝামেলা অনেক। বর্তমান ও সাবেক স্বামীর আচরণ ও মানসিকতা তুলে ধরে। মা হয়েও তিনি সাত দিনের শিশুটিকে নিতে পারছেন না তার কৈফিয়ত দেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে বেকায়দায় পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। আলোচনায় কোন ধরনের সমাধান না হওয়ায় আইনী নিষ্পত্তির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শাহবাগ থানা পুলিশকে খবর দেয়। এরপর পুলিশ এসে নাহারকে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ তার পরিবারের সদস্যদের খবর পাঠায়। ওরা এলে দেনদরবার করা হবে। উভয়পক্ষ সম্মতি দিলেই শিশুটিকে নাহার আক্তারের কাছে তুলে দেয়া হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ নাছির এ বিষয়ে বলেন, নবজাতকের মা পরিচয়ে এক নারী আসার পর আমরা তার বক্তব্য শুনি। তিনি একটি দরখাস্ত দিয়েছেন। তবে ওই নারী নবজাতকের মা কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।
×