ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুদকের তদন্তে ফেঁসে যাচ্ছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  দুদকের তদন্তে ফেঁসে  যাচ্ছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সরকারী কর্মকর্তাদের চাকরি থাকাকালীন বা অবসরে গেলেও অবৈধ সম্পদের খোঁজ নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এবার রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহরে বহুতল ভবনের মালিকসহ অগাধ সম্পদের অর্জনের জন্য অবসরে যাওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তার সম্পদের উৎস অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। আর তাতে ফেঁসে যাচ্ছেন কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক পরিদর্শক (ওসি) হওয়া গোলাম সারোয়ার। দুদক ইতোমধ্যে গোলাম সারোয়ারের আয় বহির্ভূত সম্পদের তালিকা হাতে নিয়ে তদন্তে নেমেছে। যেখানে গোপন করেও অর্জিত সম্পদের সঠিক হিসাব দিতে পারছেন না সাবেক ওই কর্মকর্তা। কনস্টেবল থেকে ওসি হওয়ার পরেই অর্থ অর্জনে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন গোলাম সারোয়ার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার পাখী গ্রামের মৃত মনির উদ্দিন সরকারের ৩ পুত্রের মধ্যে বড় গোলাম সারোয়ার কনস্টেবল হিসেব বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে উপ-পরিদর্শক থেকে পরিদর্শক হন গোলাম সারোয়ার। দর্জি পিতার অপর দুই সন্তান এখনও নিজ গ্রামে মুদি দোকানসহ কৃষি কাজ করেন। পুলিশ ইন্সপেক্টর পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকেই ভাগ্যদুয়ার খুলে যায় গোলাম সারোয়ারের। এ সময় তিনি নিজ নামে ও সন্তানের নামে ছাড়াও বেনামে অগাধ সম্পদ অর্জন করেন। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে গোলাম সারোয়ার অর্ধশত কোটি টাকার বেশি মালিক বনেছেন এ সময়। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা, ভালুকা মডেল থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় চাকরি করার সময়েই এসব সম্পদ অর্জন করেন। রাজধানী ঢাকার শ্যামলী হাউজিংয়ে বিলাসবহুল আটতলা বাড়িসহ তার সাবেক কর্মস্থল ময়মনসিংহ ও নিজ এলাকা টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলায় অগাধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। বেসরকারী হিসেবে তার সম্পদের পরিমাণ অর্ধশত কোটি টাকা। স্ত্রী ও ৩ সন্তানের নামেও রয়েছে অগাধ সম্পদ। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঠে নেমেছে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যেই পুলিশ পরিদর্শক গোলাম সারোয়ারের অবৈধ সম্পদের হিসেব প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করেছেন। এ বিষয়ে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক এনামুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করছি। অভিযুক্ত কর্মকর্তাকেও ডেকেছিলাম। বক্তব্য নেয়া হয়েছে। আমরা আরও অধিক খোঁজ নিচ্ছি। দুদকের সূত্র জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি কাগজপত্রে ঢাকার বহুতল ভবনসহ অনেক তথ্যই গোপন করেছেন। জানা গেছে, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক গোলাম সারোয়ার রাজধানী ঢাকার আদাবরের শেকেরটেক এলাকার শ্যামলী হাউজিংয়ের ছয় নম্বর সড়কে বি-৪৮ হোল্ডিংয়ে আটতলা বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। স্থানীয়রা পুলিশ কর্মকর্তার বিলাসবহুল এই বাড়ি নির্মাণ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। ফ্ল্যাটের বেশিরভাগ ভাড়া দেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহে কর্মরত অবস্থায় গোলাম সারোয়ার এই বাড়িটি নির্মাণ করেন বলে জানায় স্থানীয়রা। এই বাড়ি করার সময় নানা গুঞ্জন ছিল। এখনও আছে। ঢাকার আদাবরের মতো এলাকায় জায়গা কিনে আটতলার বাড়ি করতে ২০-৩০ কোটি টাকা কী করে পেল পুলিশ সেটিই বড় রহস্য। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া নয়াপাড়া এলাকার ১০তলা সৌহার্দ্য টাওয়ারে নিজ ও ৩ পুত্র এনামুল হক মাসুম, নাজমুল হক মারুফ ও মঞ্জুরুল হক মামুনের নামে ১২টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এসবের বাইরে ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর দৌলতমুন্সি রোডে ৪ শতাংশ জমিতে বাড়ি, বলাশপুর এলাকায় ১৫ শতাংশ জমি, শিকারীকান্দা এলাকায় ২০ শতাংশ জমি এবং টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের পাশে ২০ শতাংশ জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন গোলাম সারোয়ার। নিজ গ্রামেও প্রচুর জমি কিনেছেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। এসব সম্পদের মূল্য অর্ধশত কোটি টাকা বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। এসবের বাইরে স্ত্রী সন্তানসহ নামে বেনামে আরও অগাধ সম্পদ রয়েছে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক গোলাম সারোয়ারের। গোলাম সারোয়ার জনকণ্ঠকে বলেন, পরিবার ও শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেছি। পেনশন থেকে ১ কোটি ৫২ লাখ পেয়েছিলাম।
×