ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী খাতে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স

খসড়া নীতিমালা ফেরত পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 খসড়া নীতিমালা ফেরত পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী খাতে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেয়ার বিধান রেখে নীতিমালার খসড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে অর্থ-মন্ত্রণালয় ফেরত দিয়েছে। অর্থ-মন্ত্রণালয় খসড়াটি ১৫ দিনের মাথায় বেশ কিছু অসঙ্গতির বিষয় উল্লেখ করে ফেরত পাঠায়। গত মাসের শেষ দিকে বিএসসিসিএল (সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড) নীতিমালা তৈরি করে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় নীতিমালার খসড়াটি নতুন করে সংশোধন করে আবার অর্থ-মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বলে জানিয়েছে। তবে ঠিক কবেনাগাদ নীতিমালাটি পাঠানো হবে তা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্সের জন্য ৩ কোটি টাকা ফির প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিবছরের নবায়ন ফি ৫০ লাখ টাকা ও জামানত হিসাবে ২ কোটি টাকা জমা রাখার বিধান রেখেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিএসসিসিএল দীর্ঘ ১৪ বছর নীতিমালা ছাড়াই চলেছে। নীতিমালা অনুমোদন হলে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিও লাইসেন্সের আওতায় আসবে। রাষ্ট্রায়ত্ত সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) এমডি মশিউর রহমান বলেন, দেশে একটি মাত্র কোম্পানি থাকার কারণে এত দিন কোন প্রকার নীতিমালা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চলেছে। বেসরকারী কোন কোম্পানি যদি ক্যাবল স্থাপন করতে চায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে ওই কোম্পানি কিসের ভিত্তিতে চলবে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর থেকে নীতিমালা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চলছে। একটি কোম্পানি থাকার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখন অনেক বেসরকারী কোম্পানি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করতে আগ্রহী। আমাদের বিটিআরসি কোন লাইসেন্স দেয়নি। একটি পারমিটের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি চালানো হচ্ছে। এবার অবশ্য একটা নীতিমালা তৈরি করার ওপর সরকার তাগিদ দিয়েছে। আমরা একটা নীতিমালা করে পাঠিয়েছি। ওই নীতিমালা অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে আসতে হবে। আমি জেনেছি-অর্থমন্ত্রণালয় নীতিমালাটি আবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় হয়তো কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে আবার অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। অবশ্য প্রথমে খসড়ায় এ দুটি অঙ্ক যথাক্রমে ১০ কোটি ও তিন কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছিল। লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানিকে ১ শতাংশ হারে রাজস্ব শেয়ার করতে হবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে। তাছাড়া জামানত হিসেবে দুই কোটি টাকা জমা রাখাতে হবে। পরে তা সংশোধন করে লাইসেন্সের জন্য ৩ কোটি টাকা ফির প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবছরের নবায়ন ফি ৫০ লাখ টাকা ও জামানত হিসাবে ২ কোটি টাকা জমা রাখার বিধান রেখেছে। সাবমেরিন ক্যাবলের এমডি মনে করেন নীতিমালা পাস হয়ে গেলে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ নেবে। যেভাবে চলছে এভাবে কোন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব হবে না। সরকার কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্ত হয়। পুরোপুরি চালু হয় ২০০৬ সালে শুরুর দিকে। এই ক্যাবল সংযোগ দেয়ার পরা দীর্ঘদিন পরে হলেও সরকার বেসরকারী কোম্পানিকেও দেশের মধ্যে সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ দেয়ার সুযোগ দেয়ার কথা চিন্তা করছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) কক্সবাজারের জিলং পর্যন্ত (প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ল্যান্ডিং স্টেশন) এসইএ-এমই-ডাব্লিউই-৪ প্রথম চালু হয়। দ্বিতীয় সি-মি-উই-৫ ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশন কুয়াকাটায় অবস্থিত। এসইএ-এমই-ডাব্লিউই-৪ (সাউথ এশিয়া-মিডেলিস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) মালিক হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও ফ্রান্স। সিমিউই-৫ এর মালিক হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মালিকও এই ১৬টি দেশ। এখন চিন্তা করা হচ্ছে সি-মি-উই-৬ ক্যাবলের কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। এটা হলে দেশে ইন্টারনেট নিরবচ্ছিন্ন হবে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে এক হাজার ২শ’ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বাড়ছে। এর মধ্যে বিএসসিসিএল দিচ্ছে ৮০০ জিবিপিএস। বাকিটা ভারত থেকে আনছে বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানি। সামনে এ চাহিদা আরও বাড়বে। তখন বিএসসিসিএলের দুটি ক্যাবলেই চাহিদা মেটানো যাবে না। এ কারণে তৃতীয় ক্যাবল বা বেসরকারী পর্যায়ে ক্যাবলের জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে নীতিমালায়।
×