ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ কারণে বিখ্যাত

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বিশ্বের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ কারণে বিখ্যাত

অনলাইন ডেস্ক ॥ আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তার ভবনের স্থাপত্য কলা, শিক্ষাগত অর্জন, কিম্বা ক্যাম্পাসের আনন্দ-মুখর দিনগুলো - এসবই আপনার সারা জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় কিম্বা সুখকর স্মৃতি হয়ে থাকতে পারে। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি যে ডিগ্রি নিচ্ছেন সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস, পড়াশোনার পরিবেশ এসবও আপনার জীবনের নানা পর্যায়ে প্রভাব ফেলবে। সবসময় এগুলোর বিশেষ একটি তাৎপর্য আছে আপনার বাকি জীবনে। কিন্তু কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলো বিশেষ কিছু কারণে বিখ্যাত হয়ে আছে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে আবার কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভৌগলিকভাবে এমন এক জায়গায় অবস্থিত যা হয়তো একটু কল্পনা করাও কঠিন। এখানে এরকম কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তুলে ধরা হলো: সবচেয়ে প্রাচীন : পৃথিবীতে জ্ঞান চর্চা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার কোন দিন তারিখ উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে কোথায় কোথায় মানুষ জ্ঞানের ব্যাপারে কৌতূহলী ছিল সেসব জায়গার কথা হয়তো আমরা উল্লেখ করতে পারি। মরক্কোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ফেজ শহরে ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কারুয়েন বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানেও এটি চালু আছে। গিনেস রেকর্ড বুকেও এটি এই পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত। এর ২০০ বছর পর ১০৮৮ সালে ইটালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর বোলোনিয়াতে চালু হয়েছিল বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ধারণা করা হয় এটি ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। আর যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এটি চালু হয়েছিল ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে। তবে এটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই দিন তারিখ এখনও স্পষ্ট নয়। এখনও পর্যন্ত ব্রিটেনের ২৮ জন প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাদের মধ্যে সবশেষ হলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আর অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আর্ল অফ উইলমিংটন, ১৭৪২ সালে। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী : জনসংখ্যার হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারত। লোকসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। এই হিসেবে ভারতের কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করবেন সেটা হয়তো কারো কাছেই বিস্ময়কর মনে হবে না। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি। প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। এর উদ্দেশ্যই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত না হয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করা যা দূর-শিক্ষণ বলে পরিচিত। ভারতের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রীর নামেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে যে তথ্য পাওয়া যায় সে অনুসারে ২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। ভারত ছাড়াও সারা বিশ্ব থেকেই শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করেন। কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ লাখের মতো। কিন্তু এই দাবি সরকারি সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তারপরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া কমিউনিটি কলেজ যার ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২১ লাখের মতো। সবচেয়ে ধনী: যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বা সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত। ২০০৯ সালের হিসেবে অনুসারে ম্যাসাচুসেটস রাজ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ২৬০০ কোটি ডলার। সাধারণত ব্যক্তি পর্যায়ে এই পরিমাণ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দান করা হয়েছিল ভবিষ্যৎ প্রকল্প কিম্বা বৃত্তি চালু করার উদ্দেশ্যে। আন্তর্জাতিক সুনামের কারণে সারা বিশ্ব থেকেই প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জন এফ কেনেডি, ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ও মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। সবচেয়ে অদ্ভুত স্থানে: এরকম একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আইসল্যান্ডের বিফ্রস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। এটি এমন একটি উপত্যকায় অবস্থিত যেখানে গ্রাব্রক আগ্নেয়গিরি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, দ্রুত হেঁটে গেলে শিক্ষার্থীরা প্রায় ৪০ মিনিটের মধ্যে এর চূড়ায় উঠে আবার নেমে আসতে পারেন। এই আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখও সেখানে অবস্থিত যা দেখতে সেখানে দর্শনার্থীরাও যেতে পারেন। ব্যবসা, আইন ও সমাজ বিজ্ঞান পড়ার জন্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচিত। এটি রাজধানী থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। সবচেয়ে উঁচুতে : চিলির আতাকামা বিশ্ববিদ্যালয় ওজোস ডেল সালাদো আগ্নেয়গিরির ওপর একটি গবেষণাগার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এটি ৫,১০০ মিটার উঁচুতে। আর্জেন্টিনা সীমান্তের কাছে। যদি প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে এই পৃথিবীতে এটিই হবে সবচেয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়। আগ্নেয়গিরিটি একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। ফলে ভূতত্ব, জ্যোতির্বিদ্যা এসব বিষয়ে পড়াশোনার জন্যে এটি হবে আদর্শ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সবশেষ অগ্নুৎপাত হয়েছিল ৭০০ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৯৩ সালেও এখান থেকে গ্যাস ও ছাই নির্গত হয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি নেপালে। নাম পিরামিড ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবরেটরি। কিন্তু চিলির গবেষণাগারটি হবে এর চেয়েও ৫০ মিটার উঁচুতে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×