ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে আফগানদের হারাল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অবশেষে আফগানদের হারাল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ অবশেষে আফগানিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই জয় এসেছে সাকিব আল হাসানের (৭০*) অসাধারণ ব্যাটিংয়ে। ৪ উইকেটে জিতে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশ। আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। আফগানিস্তানকে ১৩৮ রানের বেশি করতে দেয়নি। ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে এই স্কোর দাঁড় করাতে পারে আফগানরা। হযরতুল্লাহ জাজাই ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন। বল হাতে অফ স্পিনার আফিফ হোসেন ধ্রুব (২/৯) অসাধারণ বোলিং করেন। তার বোলিংয়েই আফগানরা বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেনি। ব্যাট হাতে সাকিব যে অসাধারণ ব্যাটিং করেন, তাতে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯ ওভারে ১৩৯ রান করে জিতে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক অপরাজিত ১৯ রান করেন। ফাইনালের আগে দুই দলের আরেকটি লড়াই। এই ম্যাচটি দুই দলের জন্যই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যে দল জিতত, তাদেরই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের জন্য আত্মবিশ্বাস বেড়ে থাকত। মানসিকতা থাকত চাঙ্গা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান টানা পাঁচ টি২০ জিতত। বাংলাদেশ ৯০ টি২০ খেলেই সব দলের চেয়ে বেশি ৫৯ ম্যাচে হারের লজ্জাতেও পড়ত। শনিবারই এই লজ্জা থেকে নিজেদের মুক্ত করল বাংলাদেশ। শেষপর্যন্ত ম্যাচটি জিতে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাস ও মানসিক ভীত বাড়িয়ে নিল। ম্যাচটি যে দল জিতত, তারাই লীগ পর্বে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকেই ফাইনাল খেলতে নামতে পারত। বাংলাদেশ সেরা হয়েই মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনালে খেলবে। লেগ স্পিন অলরাউন্ডার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব শেষপর্যন্ত একাদশে ছিলেন না। তিনি বাঁ হাতে চোট পেয়ে সেলাই হয়েছে। শুক্রবার দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেও ম্যাচ খেলার মতো অবস্থা হয়নি। তাই তাকে বাদ দিয়ে একাদশে একজন ব্যাটসম্যান বাড়ানো হয়েছে। সাব্বির রহমান রুম্মনকে নেয়া হয়েছে। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশ জিতে। সেই ম্যাচটির একাদশে ছিলেন না সাব্বির। আমিনুল না থাকাতে আবার সুযোগ মিলে। নিজেকে প্রমাণ করার তাড়া ছিল। আমিনুল না থাকাতে তার অভাব আফিফ পূরণ করেছেন। কিন্তু সাব্বির ব্যর্থতাতেই ডুবে থাকেন। টার্গেট কম। তাই শুরু থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে খেলার কথা। কিন্তু দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত কী ব্যর্থতাই না দেখালেন। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুজিব উর রহমানের স্পিন ঘূর্ণিতে কাত হন লিটন (৪)। শান্ত (৫) আবারও ব্যর্থ হন। অভিষিক্ত পেসার নবিন উল হকের গতির কাছে পরাস্ত হন শান্ত। দলের ১২ রানের মধ্যেই দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন। তাতে চাপ তৈরি হয়। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম মিলে সেই চাপ দূর করার চেষ্টা করেন। পাওয়ার প্লেতে দলের স্কোর দাঁড়ায় ২৮ রান। সাকিব মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। মুশফিক আরেকদিক আগলে রাখেন। যখনই টি২০ স্টাইলে খেলতে যান, তখন আউট হওয়ার সম্ভাবনায় পড়ে যান। কিন্তু দলের ৫৭ রানের সময় ১৪ রানে থাকা মুশফিক ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। ‘নতুন জীবন’ পেয়েই ছক্কা চার হাঁকাতে শুরু করে দেন। দুইজনের জুটিও পঞ্চম রান স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলে। জুটি যখন ৫৮ রানে যায়, তখন ঠিকমতো শট নিতে না পারায় ক্যাচ আউট হয়ে যান মুশফিক (২৬)। দলের ৭০ রানে গিয়ে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ততক্ষণে চাপ দূর হয়ে যায়। বাংলাদেশ যখন ১২.৪ ওভারে ৮৩ রানে থাকে, তখন ফ্লাডলাইট বিভ্রাটে, স্টেডিয়ামের একটি টাওয়ারের সব বাতি নিভে যাওয়ায় ৭ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। খেলা যখন শুরু হয়, তখন ১৪তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে আসেন অষ্টম ওভারের সময় ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পাওয়া রশিদ খান। বোলিং করতে এসেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে (৬) এলবিডব্লিউ করে দেন রশিদ। খুব বেশি সময় উইকেটে থাকতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ মিসের পর ব্যাটিংয়েও দিনটিতে খারাপ সময় যায় তার। সাব্বির রহমান রুম্মন তো (১) আগে থেকেই ব্যর্থতার গোলকধাঁধায় আটকে আছেন। ব্যাট হাতে নামলেন। দলের ভরসা হবেন কি, উল্টো দলকে বিপদে ফেললেন। ১০০ রান হওয়ার আগেই, ৯৬ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ায় এ মুহূর্তে গিয়ে চাপ তৈরি হয়। তবে সেই চাপ দূর করার জন্য ৩৪ বলে হাফসেঞ্চুরি করা সাকিব তো উইকেটে থাকেন। সিরিজটিতে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। অবশেষে হাফসেঞ্চুরি করেই ব্যাট হাতে নিজের দক্ষতা দেখালেন। টি২০তে নবম হাফসেঞ্চুরি করেন সাকিব। তার ব্যাটেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ। ১৫তম ওভারে গিয়ে দলের স্কোরবোর্ডে ১০০ রানও হয়ে যায়। শেষের দিকে গিয়ে সব যেন এলোমেলো হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। ৯৩ রান থেকে ১০৪ রান পর্যন্ত ১১ রানের মধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট পড়ে যায়। আফিফ হোসেন ধ্রুব (২) অহেতুক শট খেলতে গিয়ে যখন রশীদের বলে বোল্ড হয়ে যান, তখন বিপদ ঘনিয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ৬ উইকেট হারানোর সঙ্গে জিততে ২৪ বলে ৩৪ রান লাগে। সাকিব থাকায় ভালভাবেই ভরসা থাকে। সঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শফিউল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান ব্যাট হাতে থাকেন। ১৮ বলে জিততে ২৭ রান দরকার ছিল। রশিদ ১৮তম ওভারে বোলিং করতে আসেন। এই এক ওভারেই ১৮ রান আসে। মোসাদ্দেক একটি বাউন্ডারি হাকান। এরপর সাকিব ছক্কা, চার হাঁকানোর সঙ্গে ১৩ রান নেন। জিততে ১২ বলে ৯ রান লাগে। ৬ বল বাকি থাকতেই ১৩৯ রান করে জিতে যায় বাংলাদেশ। সাকিব (৪৫ বলে অপরাজিত ৭০ রান) ও মোসাদ্দেক (১৯*) মিলে ম্যাচ জিতিয়ে দেন। টানা দুই ম্যাচ জেতার পর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে হেরে যায় আফগানিস্তান। বাংলাদেশ যে দলটিকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করেছে। সেই দলের কাছে হেরেছে আফগানরা। তাতে তাদের দুর্বলতা বের হয়েছে। সেই দুর্বলতা ঢাকতে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টানা চার টি২০ জেতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই কিনা দৌলত জাদরান ও ফজল নিয়াজাইকে একাদশের বাইরে রেখে নাভিন উল হক ও করিম জানাতকে একাদশে নেয়া হয়। শুরুতেই আফগানদের চাপে ফেলা যেত। যদি পেসার শফিউল ইসলামের করা দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে রহমানুল্লাহ গুরবাজের ক্যাচটি ধরতে পারতেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তখন আফগানিস্তানের ৭ রান ছিল। ওপেনার গুরবাজের স্কোর ছিল ১। কিন্তু ফাইন লেগে একেবারে সহজ ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন মাহমুদুল্লাহ। ‘নতুন জীবন’ পেয়ে গুরবাজ একটু নিজেকে সামলে নিলেও আরেক ওপেনার হযরতুল্লাহ জাজাই যেন বিধ্বংসী ব্যাটিং শুরু করে দেন। শফিউলের পরের ওভারেই দুটি চার হাকান জাজাই।
×