ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দখলদারদের অপতৎপরতা বিষয়ে সজাগ থাকুন ॥ নৌ প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  দখলদারদের  অপতৎপরতা  বিষয়ে সজাগ থাকুন ॥  নৌ প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের নদী রক্ষার চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করতে দখলদারদের নানামুখী অপতৎপরতার বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় ‘নদীর জন্য পদযাত্রা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রভাবশালীরা যেন কোনভাবেই নদীরক্ষা কার্যক্রমকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অপপ্রচার চালিয়ে বিফল না করতে পারে সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। শনিবার জাতীয় জাদুঘর থেকে বিশ্ব নদী দিবস-’১৯ এর একটি বর্ণিল উৎসবমুখর পদযাত্রা বের হয়। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন ও দেশের সত্তরের বেশি বেসরকারী নদী, পরিবেশ ও সামাজিক সংগঠন এতে অংশ নেয়। এবার নদী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা এর আইনী অধিকার নিশ্চিত করুন’। এই দাবি পূরণের প্রতিই জোর দেয়া হয়। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নদী রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই উদ্যোগ ব্যাহত হয়। নদীরক্ষার কথা বলতে গিয়ে অনেকেই অনেক সমস্যায় পড়েছেন, অনেকে জীবন পর্যন্ত Í দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারণে আমরা নদীরক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এই চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করতে দখলদাররা নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা যেন কোনভাবেই এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বানাতে না পারে সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। তারা যেন আইনী প্রক্রিয়ায় আমাদের কাজকে বাধা দিতে না পারে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকার নিজেই নদীরক্ষার আন্দোলনে নেমেছে, সঙ্গতকারণে এই আন্দোলন ব্যর্থ হতে পারে না। পদযাত্রার শুরুতে বলা হয়, বাংলাদেশের সব নদীকে আইনী সত্তা ঘোষণাকারী রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন হলে করতে হবে। জীবন্ত সত্তা নদীর আইনী অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও সরকারকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নদী পুনরুদ্ধার, সুরক্ষা ও এর সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট আন্তরিক ও উদ্যোগী। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এই সদিচ্ছার যথার্থ প্রতিফলন মাঠ পর্যায়েও ঘটাতে হবে। বলা হয়, শুধু দখল উচ্ছেদ নয়, নদ-নদীকে দূষণমুক্ত করতেও সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বিচার বালু উত্তোলনের মাধ্যমে নদীভাঙ্গন ও মৎস্যসম্পদ বিনষ্টের সর্বনাশা আয়োজন বন্ধ করতে হবে। দেশের সব নদী চূড়ান্ত অর্থে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল। নদ-নদীর জীবন্ত সত্তা টেকসই করতে হলে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলোর প্রবাহের পরিমাণগত ও গুণগত মান সুরক্ষিত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ সনদ ১৯৯৭ জাতীয় সংসদে অনুস্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। এই সনদ অবিলম্বে স্বাক্ষর করার বিষয়েও দাবি জানানো হয়। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদীর দূষণ ও দখল কিভাবে রোধ করা যায় সেই লক্ষ্যে সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করছি। সব নদী আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ে দেশের নদী রক্ষা করা সম্ভব। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, দখল-দূষণের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নদী রক্ষায় আমরা সারাবছর আন্দোলন করে আসছি। যারা নদী দখলের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকার ও নদী আন্দোলনে জড়িত সংগঠনগুলোর ঐক্য থাকলেই নদীরক্ষা সম্ভব হবে। সরকার যখন নদী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে তখন এর গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। পদযাত্রার আগে সমাবেশে ‘রিভারাইন পিপলের’ পরিচালক মোহাম্মদ এজাজের পরিচালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব শেখ রোকন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, বাপার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি শহীদুল্লাহ্, নোঙরের সামস সুমন, নদী পক্ষের হাসান ইউসুফ খান, নাগরিক উদ্যোগের মাহবুব আকতার প্রমুখ। প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পরে পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
×