ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা

আশ্রয় ক্যাম্পে ২০ হাজার দোকান রোহিঙ্গাদের

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 আশ্রয় ক্যাম্পে ২০  হাজার দোকান রোহিঙ্গাদের

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, উখিয়া আশ্রয় শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের মালিকানাধীন অন্তত ২০ হাজার দোকান চালু রয়েছে। মোবাইল-ইন্টারনেট, স্বর্ণ ও কাপড়ের ব্যবসাসহ ছোটবড় ওইসব দোকানের মালিক বনে আশ্রিত রোহিঙ্গারা স্বদেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে বেমালুম ভুলে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ক্যাম্প অভ্যন্তরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ওইসব দোকান বন্ধে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, শরণার্থী আইন অনুসারে নিজ দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত উদ্বাস্তুরা আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করবে। ক্যাম্প অভ্যন্তরে দোকানপাট বসিয়ে আশ্রিতদের ব্যবসা চালানো শরণার্থী আইন বহির্ভূত। উখিয়া টেকনাফের প্রতিটি ক্যাম্পে গড়ে উঠা হাজার হাজার দোকানের কোন ধরনের বৈধতা নেই। ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে ঘুষ বাণিজ্য করে দোকান খুলে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। দিনে রাতে ওইসব দোকানে বসে মোবাইল ফোনে সকল অপরাধের পরিকল্পনা ও নীলনক্সা তৈরি করে থাকে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা। রাতে ওইসব দোকানের এক পাশে বসে পৃথক জুয়াড়ি ও মাদকসেবী। ওখানেই রোহিঙ্গারা আপাতত মিয়ানমারে না যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকে। সন্ত্রাসী যুবকদের কেউ কেউ ক্যাম্প ত্যাগ করে পুরনো রোহিঙ্গা নেতা (জঙ্গী) পরিচালিত বিভিন্ন মাদ্রাসা-এতিমখানায় ঠাঁই করে নিয়েছে। আরএসও জঙ্গীরাও তাদের দল ভারি করতে রোহিঙ্গা যুবকদের বিদ্রোহী দলে ভেড়াচ্ছে। বিকেল ৫টার মধ্যেই রোহিঙ্গা ছাড়া সকলের ক্যাম্প ত্যাগের জন্য প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে। অথচ এক শ্রেণীর পুরনো রোহিঙ্গা নেতা (আরএসও জঙ্গী) ও কিছু সংখ্যক এনজিও কর্মী ওই আদেশ মানছেনা। তারা ওইসব দোকানে রাতে অপেক্ষা ও সাক্ষাত করে সব রকমের পরিকল্পনায় সম্মতি দিচ্ছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের। ২০১৮ সালে নয়াপাড়া ক্যাম্প অভ্যন্তরে দোকান বসাতে না দেয়ায় রোহিঙ্গা রমনী ও তার সন্ত্রাসী স্বজনরা মিলে এক উপ-পুলিশ পরিদর্শককে (এসআই) মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। টেকনাফ ও উখিয়ার ৩২ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মালিকানায় গড়ে উঠা দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ছাড়াও হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা। রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ ও রোহিঙ্গা মালিকানার দোকানপাটগুলো উচ্ছেদ করা না গেলে আশ্রিত রোহিঙ্গারা কখনও মিয়ানমারে ফিওে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠবেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের চাল-ডাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি (রেশন) ব্যতীত অতিরিক্ত ত্রাণ প্রদান থেকে সরে আসা দরকার। ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা বেশি আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছে। ওইসব আয়েশী জীবনযাপন বন্ধ করা না গেলে রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে না। সূত্রে প্রকাশ, আশ্রিতদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন ও ক্যাম্প অভ্যন্তরে দোকান বসাতে কিছু কিছু রোহিঙ্গাকে ইতিপূর্বে নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে একাধিক এনজিও। উদ্দেশ্য আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী করে গড়ে তোলা। ক্যাম্প অভ্যন্তরে গড়ে উঠা দোকানগুলো খোলা থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। প্রতি রাতে সেখানে জমায়েত হয় সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। সূত্র মতে, অপরাধ জগতের কিং খ্যাত ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিম, ইতিপূর্বে কক্সবাজার ও বর্তমানে ক্যাম্পে বসবাসকারী আলইয়াকিন বিদ্রোহী সংগঠনের বাংলাদেশ সমন্বয়ক মৌলবি শফিক, হাফেজ জাবের ও ইয়াছিনসহ কুখ্যাত রোহিঙ্গাদের ওইসব দোকানে যাওয়া আসা রয়েছে। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের এক দোকানি জানায়, ক্যাম্প অভ্যন্তরে সারারাত দোকান খোলা রেখে অপরাধ কর্মকা-ের শত পরিকল্পনা করলেও রোহিঙ্গাদের জন্য কোন ধরনের বাধা নেই বা বাধা দেয়ারও কেউ নেই। যেহেতু দায়িত্ব পালন শেষে বিকেলে (৪টা) ব্যারাকে ফিরে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিকেল ৫টার পর থেকে কতিপয় এনজিও কর্মী, রোহিঙ্গা জঙ্গী গ্রুপ আলইয়াকিন, আরএসও এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের খেয়ালখুশিতে চলে ক্যাম্প এরিয়া। তখন দিনের বেলায় মুখোশধারী রোহিঙ্গারা অস্ত্র উঁচিয়ে প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুকদের হুমকি দিয়ে প্রতিটি শেড ও ব্লকে ঘোরাঘুরি করে। দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, মানবতার খাতিরে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে প্রথমে জব্দ করতে হবে মোবাইল ফোন। দ্বিতীয়ত ক্যাম্প অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের মালিকানাধীন দোকান উচ্ছেদ করা দরকার। রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ, এনজিওতে চাকরি ও শ্রমদান স্থানীয়দের পেটে লাথি পড়ার শামিল দাবি করে সমাজের একাধিক ব্যক্তি বলেন, অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গা এখানে শ্রমদান, জমি ক্রয়, স্থানীয়দের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হতে বাদ দিতে হবে। পুরনো রোহিঙ্গা নেতা আরএসও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে আশ্রিত রোহিঙ্গারা সহজে ফিরে যাবেনা মিয়ানমারে। তারা বলেন, ২০১৭ সালে অনুপ্রবেশকারীরা উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা অবাধ বিচরণের সুযোগ পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ওইসব রোহিঙ্গাদের কারণে সমাজ ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও স্থানীয় বাংলাদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার আশ্রয় শিবিরে মোবাইল ফোন বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সিম এনে মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। অর্থাৎ শুধু মোবাইল ফোন বন্ধ ও প্রত্যাবাসন নয়, কতিপয় এনজিও এবং পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের ইন্ধনে সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তের উল্টো কিছু করে চলেছে রোহিঙ্গারা। মঙ্গলবার রাতে ২২২টি মিয়ানমারের সিমসহ তিন রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ। সরকার ক্যাম্পে মোবাইল ফোন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় মিয়ানমারে গিয়ে আটককৃত উখিয়ার জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোঃ শরীফের পুত্র রবি আলম, টেকনাফ নয়াপাড়া মৌচনি ক্যাম্পের মোঃ হোসেনের পুত্র সেলিম ও মিয়ানমারে বসবাসকারী নুর আলমের পুত্র নুর হাসান দেশটির এমপিটি অপারেটর কোম্পানির এ বিপুল সিম আশ্রয় শিবিরে নিয়ে আসছিল। প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা মূল্যের ওইসব সিম আনতে অর্থ সহায়তাকারী কারা? তাদের খুঁজে বের করার দাবি উঠেছে অভিজ্ঞ মহল থেকে। কতিপয় এনজিওর ইন্ধনে এক সময় বিপুল এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই সময় থাকতে সরকারকে রোহিঙ্গা বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে মর্মে মন্তব্য করেছেন অভিজ্ঞজনরা। অভিজ্ঞ মহল বলে, রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রিত মাত্র। যখন তাদের নাম ঠিকানা (ক্লিয়ারেন্স) ওপার থেকে আসবে, তখনই তাদের ফেরত যেতে হবে মিয়ানমারে। তাহলে ক্যাম্পে আশ্রয় থাকাকালীন রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোন ও নেটওয়ার্কের প্রয়োজন কি? রোহিঙ্গাদের যত সব দাবি তা পূরণ করবে মিয়ানমার সরকার। এখানে বাংলাদেশের মাথা ঘামানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। বাংলাদেশ শুধু আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
×