ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাটির প্রতিমায় উৎসবের রং, মনে আনন্দ

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মাটির প্রতিমায়  উৎসবের রং,  মনে আনন্দ

মোরসালিন মিজান ॥ আর বিশেষ বাকি নেই। যেক’টা দিন হাতে, দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে। তার পরই বাড়ি পড়বে ঢাকে। বেজে উঠবে শঙ্খ। শারদীয় দুর্গোৎসবে মাতবে গোটা দেশ। স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোকে অতিথি হয়ে আসবেন দশভুজা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। নাচবেন। গাইবেন। চলবে খাওয়া দাওয়া। বেড়ানো। অসাম্প্রদায়িক বাঙালী চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষেরা এ উৎসবে যোগ দেবেন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। মূল উৎসব দৃশ্যমান হবে ৪ অক্টোবর থেকে। এদিন চলবে ষষ্ঠী পূজার আয়োজন। ক্রমে আসবে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন। দশমীর দিন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী জানান, এবার সারাদেশে প্রায় ৩১ হাজার ৫০০ মন্ডপে পূজার আয়োজন হবে। সংখ্যাটি গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড় হাজার বেশি। তবে ঢাকার আয়োজনগুলো আলাদাভাবে নজর কাড়ে। রাজধানী শহরে এবার প্রায় ২৩৭টি স্থানে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। বড়সরো উৎসব। হয়ত তাই আগে ভাগে কাজে নেমে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত আষাঢ়ে রথযাত্রার পর পরই শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমা গড়ার মূল কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন চলছে রং করার কাজ। এর পর শাড়ি, চুল, গহনা ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হবে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী পূজামন্ডপে গিয়ে দেখা যায়, দেবী দুর্গা ও সঙ্গী সাথীদের চমৎকার প্রতিমা গড়া হয়েছে। রং করার কাজও প্রায় শেষ। দেখে উৎসবের আগাম অনুভূতি হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ষষ্ঠীর দিন এই প্রতিমা মন্দিরে স্থাপন করা হবে। রমনা কালী মন্দিরও বহুকালের পুরনো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মন্দির ঘিরে ভক্তদের আগ্রহের শেষ নেই। এখানে আরও আগে শেষ হয়েছে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। রং করার কাজও প্রায় শেষ। সূক্ষ্ম কিছু তুলির টান দিলেই প্রস্তুত হয়ে যাবে প্রতিমা। মন্দিরের বহিরাংশে উৎসব ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি বড় তোরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশেই মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলছে। তাই সীমিত আকারে তোরণ নির্মাণ করা হতে পারে বলে জানায় উদ্যাপন কমিটি। তবে পুরান ঢাকা ঘুরে প্রতিমা দেখার আলাদা আনন্দ। সব বয়সী মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত প্রতিমা দেখেন। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। সব মাথায় রেখেই চলছে প্রস্তুতি। শাঁখারিবাজার, তাঁতিবাজার, লক্ষ্মীবাজারসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একটা সাজ সাজ রব। দেবীকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে তোড়ন নির্মাণ করা হচ্ছে। মন্দিরগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। বাংলাবাজারের জমিদার বাড়িতে সারা বছর চলে প্রতিমা তৈরির কাজ। তবে এখন ব্যস্ততা চরমে। এক জায়গাতেই দেখা গেল ১৫ থেকে ১৬ সেট প্রতিমা। এখানে কাজ করছিলেন ৮ জন প্রতিমা শিল্পী। মূল ব্যক্তিটির নাম বলাই পাল। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের বাপ দাদারা দেবী গড়ার কাজ করতেন। এখন আমি করছি। রথযাত্রার পর এবারের কাজে হাত দিয়েছিলাম। এখনও সকাল ১০টা থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত কাজ করছি। রং করার কাজ পুরোপুরি শেষ হলে প্রতিমার গায়ে শাড়ি গহনা ইত্যাদি পরানো হবে বলে জানান তিনি। নতুন ঢাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎসবটি যে বনানীতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে এখানে। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও স্বতন্ত্র শিল্প ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিমা গড়া হচ্ছে। এখানকার আয়োজকরা মন্ডপ নির্মাণের কাজটি খুব গুরুত্ব দিয়ে করেন। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বনানী খেলার মাঠের বিশাল এলাকাজুড়ে মন্ডপ নির্মাণ করা হয়েছে। দাঁড়িয়ে গেছে কাঠামো। দেয়ালের গায়ে সোনালি রঙ করা হচ্ছে। দেখে বোঝা যায়, পুরনো কোন মন্দিরের আদলে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে নির্মাণশৈলী। এরই মাঝে কৌতূহল নিয়ে মন্ডপ দেখছেন পথচারীরা। কেউ কেউ বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছেন। চলছে ছবি তোলা কাজ। একইভাবে কলাবাগান, সিদ্ধেশ্বরী, উত্তরা, খামারবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে পূজা মন্ডপ দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রাথমিক কাজ শেষ হওয়ার পর মন্ডপে আলোক সজ্জা করা হবে। এইসব মন্ডপ ঘিরেই চলবে বর্ণাঢ্য উৎসব। এদিকে, পূজা সামনে রেখে চলছে কেনাকাটাও। রাজধানীর প্রায় সব মার্কেট শপিংমলে পূজার পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় মোটামুটি ভিড় লেগে গিয়েছিল। বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, এলিফ্যান্ট রোড, বিশাল সেন্টার, আজিজ সুপার মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী মানুষ পছন্দের পোশাক কেনায় ব্যস্ত। কেনাকাটার ধরন দেখেই বোঝা যায়, দ্বারে কড়া নাড়ছে উৎসব। পূজা উদ্যাপন পরিষদ ঢাকার সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কিশোর ম-ল বলেন, ঢাকায় এবার মন্ডপের সংখ্যা আরও বেড়েছে। উৎসবও বর্ণাঢ্য হবে বলে আশা করছি আমরা। এই উৎসব শুধু সনাতনীদের নয়। অসাম্প্রদায়িক বাঙালীর উৎসব। সম্প্রীতির বাংলাদেশে উৎসবই সত্য হবে এমন আশা পূজা উদ্যাপন পরিষদের।
×