ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীর সংকট ॥ পাকিস্তানের প্রতি ভারতের হুমকি

প্রকাশিত: ২২:১৪, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কাশ্মীর সংকট ॥ পাকিস্তানের প্রতি ভারতের হুমকি

অনলাইন ডেস্ক ॥ এই সপ্তাহের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, যিনি কূটনীতিবিদ থেকে রাজনীতিবিদ হয়েছেন, বলেছেন ভারত প্রত্যাশা করছে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে একদিন ভারতের "সরাসরি এখতিয়ার" থাকবে। দিল্লি এবং ইসলামাবাদ উভয়ই পুরো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণের দাবি করে, কিন্তু দুই দেশের অংশই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভারত শাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর নামে। কাশ্মীরের ১০ টি জেলায় ৪০ লাখের মত মানুষ বাস করে ১৩ হাজার স্কোয়ার কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুরে। বিতর্কিত এই অঞ্চল নিয়ে মি. জয়শঙ্কর বারবার ভারতের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। ১৯৯৪ সালে ভারতের সংসদ একটা রেজোলুশন করে, যেখানে দাবি করা হয় "পাকিস্তানকে অবশ্যই ভারতের প্রদেশ জম্মু এবং কাশ্মীরের ঐসব এলাকা থেকে সরে যেতে হবে যেসব এলাকা পাকিস্তান আগ্রাসনের মাধ্যমে দখল করে রেখেছে"। কিন্তু এবারে অনেকেই শঙ্কিত। অগাস্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার তিনজন মন্ত্রী - পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী - জোর দিয়ে বলেছেন এ পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর, এবং বরফে ঢাকা এলাকা আকসাই চিন ভারতের জম্মু এবং কাশ্মীরের অংশ। এই তিন মন্ত্রী দেশটির নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা রাখে। ভারত এটাও বলেছে যে "আগে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার না" দীর্ঘদিনের এই নীতির পূর্নমূল্যায়ন করতে পারে তারা। অনেকেই বলছেন এটা ঐ অঞ্চলকে নিজেদের করে নেয়ার সত্যিকারের হুমকি। যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি প্রতিবেদককে বলেছেন "ভারত এবং পাকিস্তানের নেতারা যেসব কথা বলেছেন, সেসব তারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বক্তব্য দেন নি।" "এটা হতে পারে পাকিস্তান যে ভারত শাসিত জম্মু এবং কাশ্মীরের দুর্বল মানবাধিকার রেকর্ড দিয়েছে, তারা পাল্টা জবাব দেয়ার জন্য নতুন ইস্যু তৈরি করছে।" তবে বিষয়টা নিয়ে কেউ নিশ্চিত না। অনেকে বলছেন মি. মোদী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগের নীতি অনুসরণ করছেন। ফেব্রয়ারিতে কাশ্মীরের এক আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন ভারতের সেনা নিহত হলে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে জঙ্গিদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা করেছিল। পাকিস্তান ভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ গ্রুপ বলেছিল তারাই ঐ হামলাটি করেছিল। ১৯৭১ সালে এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের পর প্রথমবারের মত ফেব্রুয়ারির হামলা লাইন অব কন্ট্রোল, যেটাকে এলওসি বলা হয়, সেটার সীমা অতিক্রম করেছিল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মি. মোদী খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন এই আদেশ দিয়ে যে একই সীমান্ত এলাকায় জঙ্গিদের উপর "সার্জিকাল স্ট্রাইক" করতে হবে। ভারতের পক্ষ থেকে এই কথাটা তখন বলা হয়েছিল কারণ একটি সেনা-ঘাটিতে জঙ্গি হামলায় ১৮ জন সৈন্য নিহত হয়। দ্যা হিন্দু পত্রিকার কূটনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার বলছেন, ভারত সম্প্রতি যেভাবে উচ্চারণ করছে 'পাকিস্তানের দখলকৃত কাশ্মীর' তাতে করে যেকোন ব্যক্তি যারা উপমহাদেশে সংকট তীব্রতা বৃদ্ধির পথ নিয়ে গবেষণা করছেন তাদের অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত । দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ এর আগে দুই বার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে কাশ্মীর ইস্যুতে। ২০০৩ সালে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল সেটা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মারাত্মক ভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে এ বছর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোন উস্কানি ছাড়াই ২ হাজারের বেশি বার যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন হয়েছে যার ফলে ২১জন ভারতীয়র প্রাণ গেছে। এদিকে পাকিস্তান বলছে, ২০১৯ সালে ভারতের বাহিনীর গুলিতে ৪৫জন পাকিস্তানি নিহত হয়েছে যার মধ্যে ১৪ জন সৈন্য ছিল। দিল্লির জওহরলাল নেহুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যাপিমন জ্যাকবের মতে "সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করলে রাজনৈতিক বক্তব্য, সামরিক মহরা, কূটনৈতিক তৎপরতা স্থগিত - এসবের জন্ম দেয়। ফলে আরো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হতে পারে এবং এমনকি আরো উত্তেজনা বাড়তে পারে"। যদি ভারত পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় তাহলে তাদের সামরিক শক্তির প্রয়োগ করতে হবে। কারণ পাকিস্তানও একতরফা ভাবে সহজে সেটা হস্তান্তর করবে, এমনটা নয়। তবে যদি এখানে বাইরে থেকে কোন চাপ থাকে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমনটা তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। 'কাশ্মীর: দ্যা আনরিটেন হিস্ট্রি' বইয়ের লেখক ক্রিস্টোফার স্নেডেন বলছেন, "ভারতের এই ধরণের আকাঙ্খা মনে হচ্ছে খুব উচ্চাভিলাষী।" "উচ্চাভিলাষী এই মনোভাব শুধূ যুদ্ধের দিকেই ঠেলে নিয়ে যাবে না, বরং ভারতকে প্রথমে পাকিস্তানকে উস্কে দিতে হবে গুলি করার জন্য যাতে করে দিল্লি তাদের বড় ধরণের পদক্ষেপ নেয়াটা যে ন্যায্য হয়েছে সেটা প্রমান করতে পারে।" দিল্লি ভিত্তিক কৌশলগত বিষয়ের বিষেশজ্ঞ আজয় শুক্লা মনে করেন ভারতের কাছে তিনটি কৌশল রয়েছে। প্রথম, কাশ্মীরে এখন যা হচ্ছে সেটা থেকে মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়,আন্তর্জাতিক মহলে কাশ্মীর সম্পর্কে ভিন্ন বর্ণনা উপস্থাপন করে ইসলামাবাদকে ভারসাম্যহীন করে ফেলা। আর তৃতীয়, ভারতীয় কাশ্মীরিদের মধ্যে একটা আশাহীনতা তৈরি করা। এবং তাদের কাছে এই বার্তা দেয়া যে, প্রতিরোধ করা বৃথা। সূত্র- বিবিসি বাংলা
×