ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বলার অপেক্ষা রাখে না, বাঙালীর পাঠাভ্যাস নষ্ট হয়েছে। অনেক কমে গেছে বই পড়া। আজকালকার ছেলেমেয়েরা বুক বোঝে না। ফেসবুকে সময় কাটায়। এর পরও কিছু বইয়ের বিক্রি বন্ধ হয় না। কোন কোন লেখক পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। বেঁচে থাকেন। গত সপ্তাহে ঢাকায় এসেছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। হ্যাঁ, তার কথা বলতেই উপরের কথাগুলো বলা। দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। এবার এসেছিলেন বুকশপ ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাতিঘরের আমন্ত্রণে। গত সোমবার ঢাকার ভক্ত পাঠকের সঙ্গে মিলিত হন তিনি। বাংলা মোটর এলাকায় অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। কেন্দ্রের সপ্তম তলা ভাড়া নিয়ে এই বইয়ের দোকান করা হয়েছে। এখানেই কথা বলেন শীর্ষেন্দু। আগেও তার কথা শোনা হয়েছে। জানাই ছিল, ভাল বক্তা। এদিনও সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করেন তিনি। খুবই রিয়ালিস্টিক জায়গা থেকে কথা বলেন। নিজের লেখালেখির জীবন, ভাবনা, উপন্যাসের চরিত্র, আজকের বাস্তবতাসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে তার কথায়। শীর্ষেন্দু শুরু করেন এই বলে যে, মনে হচ্ছে বাড়ি এসেছি। এখানে সব সময়ই ভাল লাগে। ভাল লাগার অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এত পাঠক নেই। পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় ঢাকায় পাঠক পাঁচ/সাতগুণ বেশি। নিজেদের সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তখন মফস্বল শহরে বইয়ের দোকানই ছিল না। যা হাতে পেতাম, তাই পড়তাম। লেখক হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে বলেন, আমি বাইচান্স লেখক। লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেয়ার ঘোর বিরোধী লেখক বলেন, এটাকে পেশা হিসেবে নেয়া খুবই বিপজ্জনক। লেখালেখি যখন পেশা হয়ে যাবে তখন পাঠক কী চায়, সেটা লিখতে হবে। তার মতে, পাঠক এখন যা খেতে চাইছে, তা-ই লিখলে লেখার সঙ্গে আপোস করা হয়। এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বিশ্বাসী শীর্ষেন্দু বলেন, লেখালেখি থেকে আমার ভাল টাকা আসে। তবে আমি পেশা হিসেবে এটিকে গ্রহণ করিনি। আমি লিখব। পাঠক সেটা নেবে কি নেবে না, তা তার বিষয়। লেখকের মতো তার উপন্যাসের কিছু চরিত্রও বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এসব চরিত্র নির্মাণে কী চিন্তা কাজ করে? এমন কৌতূহলের জবাবে তিনি বলেন, আমার উপন্যাসের চরিত্র আমি সৃষ্টি করি না। আমার তো মনে হয় তারা আমাকে সৃষ্টি করে। আমাকে দিয়ে সৃষ্টি করিয়ে নেয়। লেখালেখির বাইরে চারপাশের জগৎ সম্পর্কেও গভীর পর্যবেক্ষণ আছে শীর্ষেন্দুর। হয়ত তাই তিনি বলেন, আমরা যে ভুবনে বাস করছি সেই ভুবনটাকে আমরাই ধ্বংস করছি। আমাদের প্রিয় পৃথিবী আজ বিপদগ্রস্থ। নানাভাবে আক্রান্ত। আমরা যদি পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে না আসি, তাহলে আমাদেরই ধ্বংস অনিবার্য। উদাহরণ হিসেবে আমাজনের আগুনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, আমি তো মনে করি, আমাজনে আগুন লাগেনি। লাগানো হয়েছে। আরও নানা প্রসঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা বলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। পুরোটা সময় সমানে বসে তার বক্তব্য শোনেন ভক্ত পাঠক। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন তিনি। এর আগে ঢাকার অতিথি হয়েছিলেন সমরেশ মজুমদার। একই স্থানে শনিবার কথা বলেন তিনি। ওপার বাংলার খ্যাতিমান লেখক নিজস্বতার ওপর জোর দেন। বলেন, কোন কিছুতে আলাদা হতে না পারলে, কেউ গ্রহণ করবে না। কেউ ফিরেও তাকাবে না। একই রকম লিখলে তো হবে না। ভিন্ন কিছু লেখার চেষ্টা করতে হবে। নিজের উপন্যাসের চরিত্র ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, মাধবীলতা বিয়ে না করেও সন্তানের মা হন। বাঙালী পাঠক তো এমন চরিত্রকে অশ্লীলতার অভিযোগ তুলে বাজেয়াপ্ত করে দিতে পারত। কিন্তু কেন গ্রহণ করল? অনিমেষকে কেন তাদের এত পছন্দ হলো? দুই পাঠকের কাছ থেকে উত্তর শোনেন সমরেশ। এভাবে লেখক-পাঠকের দুটি চমৎকার আড্ডা অনুষ্ঠিত হলো গত সপ্তাহের ঢাকায়। অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। অবশেষে ঢাকার ফুটপাথের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সড়ক ও ফুটপাথ হতে সকল ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হবে। ডিএনসিসির উত্তরা অঞ্চল (অঞ্চল-১) থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পরে অন্যান্য অঞ্চলেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হবে। ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সম্প্রতি এ ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে কোন প্রকার বাণিজ্য করতে দেয়া হবে না। পথচারীদের জিম্মি করে দখলবাণিজ্য সহ্য করা হবে না। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার আগেই অবৈধভাবে দখল করে রাখা সড়ক ও ফুটপাথ ছেড়ে দেয়ার আহবান জানান মেয়র। আরও একটি ভাল খবর এই যে, মাদকাসক্ত চালক ধরতে ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার সড়কে ডোপ টেস্ট চালু হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সড়কে চালকের মূত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। পরীক্ষায় মাদকাসক্ত প্রাণিত হলে ওই চালকের লাইসেন্স বাতিল ও সরাসরি জেলে পাঠানো হবে। দুর্ঘটনা রোধ করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বুধবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথসভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সংগঠনটির আহ্বায়ক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, ঢাকায় যানজটের কারণে ঘণ্টায় গড়ে ৮/৯ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলে। তবুও দুর্ঘটনা ঘটছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে চালকের মাদকাসক্তি। রাজধানীর বাস চালকদের ৪০-৫০ শতাংশ মাদকাসক্ত। জানানো হয়, এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হবে। সেখানে ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হবে। টয়লেটে নিয়ে চালকদের মূত্র পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষায় মাদকের নমুনা পাওয়া গেলে সেই চালককে সঙ্গে সঙ্গে জেলে পাঠানো হবে। আর এমনটি হলে কিছু সুফল নিশ্চয় পাওয়া যাবে। আপাত সেই অপেক্ষা।
×