ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর অবৈধ ৫০ বারে শীঘ্র বিশেষ অভিযান

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রাজধানীর অবৈধ ৫০ বারে শীঘ্র বিশেষ অভিযান

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর অভিজাত পরিবারের ধনাঢ্য সন্তানদের বিনোদনের জন্য এক শ’ দুটি বার আছে। এর মধ্যে বায়ান্নটি অনুমোদিত। অপর ৫০ বারের নেই কোন অনুমোদন, এগুলো অবৈধ। পুলিশের তালিকায় এসব অবৈধ বারের খোঁজ মিলেছে। অবৈধ এসব বারের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে শীঘ্রই নামছে পুলিশ। এসব অবৈধ বারে চলে অসামাজিক কার্যকলাপও। অবৈধ এসব বারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। গত দুই বছর ধরে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ অসৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে ‘ম্যানেজ’ করে এ ধরনের কার্যকলাপ চলে আসছে। এই অবৈধ বারগুলো থেকেই মাদক চলে যায় জুয়ার আসর ক্যাসিনোয়। ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি অবৈধ এসব বারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ডিএমপির একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ১০২ বার রয়েছে- যার মধ্যে ৫২ বার সরকার অনুমোদিত। এর পাশাপাশি অনুমোদন ছাড়াই ‘অলিখিত’ আরও অন্তত ৫০ বার চলছে। এক সময় রাজধানীতে পুলিশের অবৈধ আয়ের বড় উৎস ছিল মাদক স্পট। কিন্তু বিগত বছরগুলোয় মাদক স্পটের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানোয় মাদক স্পটগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে গেছে। এ কারণে অবৈধ আয়ের দৃষ্টি এখন বারগুলোর দিকে। অবৈধ একেকটি বার থেকে স্থানীয় থানা পুলিশ মাসোহারা পায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিএমপি সূত্র মতে, রাজধানীর ফাইভ স্টার ও ফোর স্টার হোটেলগুলোয় সরকার অনুমোদিত বারে চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই। এসব হোটেলের বাইরে মগবাজার, তেজগাঁও, কাকরাইল, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অবৈধ বার চলে। এসব অবৈধ বারে এক শ্রেণীর অসৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরেও চাঁদা দিতে হয় স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপকে। রাজধানীর একাধিক বার মালিক ও কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘সবই তো বোঝেন, চাঁদা না দিলে তো ব্যবসা করতে দেবে না। তার ওপর আছে প্রতিপক্ষ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের চাঁদার হুমকি। অনেককে ফ্রি খাওয়াতেও হয়। এ কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় থানা পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করতে হয়। বৈধ ব্যবসা চালাতে গেলেও যেখানে চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা চালানো যায় না সেখান বার ও ক্লাবে মদের ব্যবসার জন্য চাঁদাতো গুনতেই হবে।’ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে ১০২ বার রয়েছে, এর মধ্যে ৫২ বার সরকার অনুমোদিত। এর পাশাপাশি অনুমোদনবিহীন অলিখিত আরও অন্তত ৫০টি বার চরছে। মাদকদ্রব্য অধিদফতরের কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ বারগুলোকে সহযোগিতা বা আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। গোয়েন্দা সংস্থার এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর অভিজাত এলাকার বার ও ক্লাবগুলোতে প্রতিদিনই কোটি টাকার চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও পিছিয়ে নেই। বার ও ক্লাবগুলোয় মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবহার প্রতিরোধে নিয়োজিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিরুদ্ধেও রয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগ। এসব বার ও ক্লাবে অভিজাত পরিবারের ধনীর দুলাল দুলারীই বিনোদনের জন্য গিয়ে থাকেন, যা অভিভাবকদেরও অজানা নয়।
×