ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে শিক্ষার্থী নির্যাতন ॥ শিক্ষিকাকে অপসারণের দাবি

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

   মাদারীপুরে শিক্ষার্থী নির্যাতন ॥ শিক্ষিকাকে অপসারণের দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ পড়া না পারায় বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগে পৌর-পেয়ারপুর ১০৯নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে অপসারণ করার তিন দিন সময় নিলেও এখনও সেই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে আসছে ক্লাস করার জন্য। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোখলেসুর রহমানর বলেছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা আয়শা সিদ্দিকাকে ১৫ সেপ্টেম্বর-এর মধ্যে গৌরবর্দ্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হবে এবং প্রধান শিক্ষিকাকে শোকজ করা হবে। এরপরেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে অভিবাবকরা স্কুল মাঠে বিক্ষোভ করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০৯নং পৌর-পেয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আয়শা সিদ্দিকা নামে এক শিক্ষিকা শ্রেণী কক্ষে গেলে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকে। অনেকে তার অমানবিক অত্যাচারে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তার নামে একাধিক অভিযোগ করার পরও ক্ষমতার বলে এখনো তিনি বিদ্যালয়ে চাকুরি করে যাচ্ছে এবং আগের মতই শিক্ষার্থীদের অমানবিক নির্যাতন করছেন। গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ৫ম শ্রেণীর পড়া না পাড়ায় ৬জন শিক্ষার্থীকে বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে শাস্তি দেওয়ায় দুইজন ছাত্রী ও একজন ছাত্রের নাক দিয়ে রক্ত ঝরে। এরপর তাদের অভিভাবক বিষয়টি জানতে পেরে তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়টি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানালে তিনি তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে তিন দিনের সময় নেন। কিন্তু তিন দিন পার হলেও ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অভিবাবকরা তাদের বিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় অভিবাবকসহ এলাকার সচেতন জনগণ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আয়শা সিদ্দিকার অপশারনের দাবীতে বিক্ষোভ করেন। আহত ছাত্রী তৃষার মা মিলি দাস বলেন, ‘আমার মেয়েকে পড়া না পাড়ায় আয়শা ম্যাডাম দীর্ঘ সময় বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে শাস্তি দিয়েছে। এমনকি মাথা উঠাতে দেয়নি, মাথা উঠালেই স্কেল দিয়ে পিঠে আঘাত করেছে। এভাবে দীর্ঘ সময় বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে রাখায় তার নাক দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। আমি আমার মেয়েকে পড়াশুনা করতে দিয়েছি। মার খেতে দেই নাই।’ আহত ঐশি দাসের বাবা টিটু দাস বলেন, ‘এই ম্যাডাম এর আগেও বাচ্চাদের মারধর করত। আজ আমার মেয়েকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলে অমানুষিক অত্যাচার করেছে। আমি এই ম্যাডামের শাস্তি চাই। এই ম্যাডাম স্কুলে আসলে আমি আমার সন্তানকে স্কুলে দেবো না।’ ৫ম শ্রেনীর ছাত্র নব মালো বলে, ‘আমি পড়া না পাড়ায় আমাকে বেঞ্চের নিচে মাথা রেখে স্কেল দিয়ে পিঠে ও কোমরে পিটিয়েছে। এতে আমার অনেক সমস্যা হচ্ছে, আমার হাটতে কষ্ট হচ্ছে। জেলা যুবলীগ নেতা সুমন তালুকদার বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে স্কুল হওয়ায় আমি কয়েকবার এই বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটিকে জানিয়েছি। তারা এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’ অর্পনা নামের এক ছাত্রীর অভিভাবক (নানী) শিউলি বেগম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষিকা নাঈমা আক্তার বিদ্যালয়ে ঠিকমত আসেন না। অনেক দিন পর স্কুলে এসে কেবল হাজিরা দিয়ে চলে যান। আবার অনেক দিন দুপুর ১টার পর আর তাকে স্কুলে দেখা যায় না। আয়শা ম্যাডাম কয়েকদিন আগে আমার নাতনিকে প্রাইভেট পড়াতেন। বেতন দিতে দেরি হয়েছে বলে অর্পনাকে স্কুলে বই-খাতা রেখে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।’ প্রধান শিক্ষিকা নাঈমা আক্তার বলেন, ‘আমি আয়শা সিদ্দিকার বিরুদ্ধে ৩দিনের মধ্যে একটি ব্যবস্থা নেব।’ মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি বিষয়টা শুনেছি, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
×