ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন বছরে হাতে পেয়েছেন অল্পসংখ্যক ভোটার

এক বছরের মধ্যে সবার হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দিতে পারেনি ইসি

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

এক বছরের মধ্যে সবার হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দিতে পারেনি ইসি

শাহীন রহমান ॥ সবার হাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ’১৬ সালের অক্টোবরে শুরু হয় স্মার্টকার্ড বিতরণ। এক বছরের মধ্যে সবার হাতে এটি পৌঁছে দেয়ার কথা বলা হলেও পেরিয়ে গেছে প্রায় তিন বছর। এই সময়ের মধ্যে খুব কমসংখ্যক মানুষের হাতেই স্মার্টকার্ড পৌঁছাতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সারাদেশে ১০ কোটির বেশি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড কবে পৌঁছবে। যদিও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম বলেছেন, সব ধরনের জটিলতা কাটিয়ে স্মার্টকার্ডের মুদ্রণ ও বিতরণ কাজ দ্রুততর করার চেষ্টা চলছে। আশা করি ’২০ সালের মধ্যে সব ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দিতে পারব। তবে গত জুলাইয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ সংক্রান্ত সর্বশেষ সভার কার্যবিবরণীতে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৬০ লাখ স্মাটকার্ড মুদ্রণ সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ৩ কোটি ৩৩ লাখ পরিচয়পত্র নাগরিকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন বছরে মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে এখনও উপজেলা নির্বাচন অফিসে অনেক কার্ড রয়ে গেছে, যেগুলো বিতরণ করা হয়নি- অনেক নাগরিক স্মার্টকার্ড নিতেই আসেনি। এছাড়া নাগরিকের তথ্য না মেলায় অনেক স্মার্টকার্ড মুদ্রণ করা এখনও সম্ভব হয়নি বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণে বলতে গেলে শম্বুক গতি। অভিযোগ রয়েছে সঠিক প্রচারের অভাবেই ভোটারদের কার্ড সংগ্রহে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। আবার অনেকে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে অন্য এলাকায় চলে গেছেন। কর্মস্থলে থাকায় যথাসময়ে বিতরণের সময় কেন্দ্রে যেতে পারেনি। রাজধানীতে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বিতরণ কাজ করা হয়েছে, এরপর এখনও অনেক স্মার্টকার্ড থানা নির্বাচন অফিসে পড়ে আছে। জরুরী না হওয়ায় কেউ স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে যান না। কয়েক ভুক্তভোগী জনকণ্ঠকে বলেন সঠিক সময় কেন্দ্রে গিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। পরে থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে যোগাযোাগ করা হয়। কিন্তু প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় আর স্মাটকার্ড সংগ্রহ করা হয়নি। তারা বলেন, প্রথমে থানা অফিসে গিয়ে ১০ আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ দেয়া হয়েছে। এরপর লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্রে ফটোকপি রেখে দীর্ঘ সময় দেয়া হচ্ছে স্মার্টকার্ড সংগ্রহের জন্য। এ জন্য অনেকে কার্ড সংগ্রহে আগ্রহ দেখাননি। বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, যারা কেন্দ্রে গিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে পারেনি তাদের নির্বাচন অফিসে গিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে হবে। তবে এ জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাঠ পর্যায়ের বিতরণ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্মার্টকার্ড পাওয়া না গেলে এ জন্য আবার বিতরণ শেষ হওয়া পর্যন্ত কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এলাকায় মাইকিং এবং অন্যান্য মাধ্যমে প্রচারের পরও কেন্দ্রে গিয়ে খুব কম সংখ্যক ভোটারই স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করছেন। বিশেষ করে যারা দিনের বেলায় অফিস আদালতে কাজে ব্যস্ত থাকেন তারা কেন্দ্রে গিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে পারেননি। আবার বিতরণের নির্ধারিত দিনের পরে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে গেলেও তাৎক্ষণিক সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। থানা নির্বাচন অফিস থেকে তাকে আবার দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে বলা হয়। ফলে তারা বারবার গিয়ে স্মাটকার্ড সংগ্রহ করতে না পেরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ কারণে আনুষ্ঠানিক বিতরণের পর থানা অফিসেই অনেক স্মার্টকার্ড পড়ে থাকছে, সময়মতো কেউ এটি সংগ্রহ করছেন না। একজন বেসরকারী চাকুরে প্রসেনজিত জানান, স্মার্টকার্ড সংগ্রহের জন্য ছুটি নিয়ে কয়েকবার এলাকায় গেছেন। থানা নির্বাচন অফিসে গিয়েও স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে পারিনি। থানা নির্বাচন অফিস থেকে টেকনিক্যাল ত্রুটির কথা জানানো হয়েছে। তিনি জানান, আমি এখনও জানি না আমার স্মার্টকার্ড কোথায় আছে অথবা আদৌ ছাপা হয়েছে কি না। থানা নির্বাচন অফিস থেকেও এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। তিনি জানান বেসরকারী চাকরি করি বারবার ছুটি নিয়ে কার্ড সংগ্রহ করার সম্ভব নয়। আমার স্মার্টকার্ড কোথায় রয়েছে বা অদৌ ছাপা হয়েছে কি না তা থানা নির্বাচন অফিস থেকে জানাতে পারেনি। অথচ আগেই এলাকায় বিতরণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে পরে যাদের ভোটার নম্বর তারা অনেক আগেই স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করেছে। আমারটা কি অবস্থায় আছে এখনো জানতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনিক্যাল সমস্যায় অনেকে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে পারছেন না। তাদের স্মার্টকার্ড থানা নির্বাচন অফিস থেকে কবে দেয়া হবে তাও জানাতে পারছে না। এছাড়া অনেকে নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় সময়মতো স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে যান না। একবার বিতরণ কাজ শেষ হয়ে গেলে অনেকে স্মার্টকার্ড সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অনেকে আবার পরে সংগ্রহ করতে গেলেও সময়ের দীর্ঘসূত্রতায় স্মার্টকার্ড সংগ্রহ না করে ফিরে আসেন। এ কারণে বেশিরভাগ স্মার্টকার্ড এখনো বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। থানা পর্যায়ের এক উর্ধতন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, স্মার্টকার্ড ছাপা হওয়ার আগেই অনেকে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু তার স্মার্টকার্ডটি আগের ঠিকানায় ছাপা হয়েছে। ফলে তিনি সংশোধিত এলাকায় গিয়ে স্মার্টকার্ড খোঁজ করেছেন, কিন্তু পাননি। স্মার্টকার্ড বিতরণে এই ধরনের জটিলতা রয়ে গেছে। এ কারণে থানা অফিসে এখনও অনেক স্মাটকার্ড পড়ে রয়েছে, যেগুলো বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ’১৬ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে রাজধানীতে বিতরণ কাজ শুরু হয়। রাজধানীতে কয়েক দফা স্মার্টকার্ড বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত সাড়া পাওয়া যায়নি। রাজধানীর থানা অফিসে এখনও অনেক স্মার্টকার্ড পড়ে রয়েছে যেগুলো কেউ সংগ্রহ করছেন না। ইসি কর্মকর্তারা বলেন, কর্মজীবী অনেক গ্রামবাসীই এখন আর গ্রামে থাকেন না। তাই স্মার্টকার্ড বিতরণে দেরি হয়, বিতরণে বিকল্প পদ্ধতি চিন্তাভাবনা না করলে সঠিক সময়ে সবার হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে না। তারা জানান, স্মার্টকার্ড বিতরণের সবচেয়ে জটিল সমস্যা হলো যার কার্ড তাকেই উপস্থিত থেকে সংগ্রহ করতে হবে। একজনের কার্ড অন্যজনের হাতে দেয়া যাবে না। কারণ বিতরণের সময় প্রত্যেক ব্যক্তির চোখের আইরিশ ও ১০ আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হয়। এ কারণেও বিতরণে সময় লাগে বেশি। ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, বিদেশী সংস্থার সহযোগিতায় স্মার্টকার্ড মুদ্রণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। এখন নিজেরাই উৎপাদন করেছি। সব ধরনের জটিলতা কাটিয়ে মুদ্রণ ও বিতরণ কাজ দ্রুততর করার চেষ্টা চলছে। আশাকরি ২০ সালের মধ্যে সব ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দিতে পারব। প্রথম দিকে কাজটি করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে, এখন কাটিয়ে উঠেছি। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, মুদ্রণ কাজ এগিয়ে রাখা হচ্ছে। বিতরণ না হওয়া কার্ড ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে উপজেলা সিটি এলাকার নাগরিকদের হাতে পৌঁছানো হবে।
×