ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জিপি-রবির সঙ্গে দ্বন্দ্ব তিন সপ্তাহের মধ্যেই মিটে যাবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জিপি-রবির সঙ্গে দ্বন্দ্ব তিন সপ্তাহের মধ্যেই মিটে যাবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আলোচনার মাধ্যমে গ্রামীণফোন ও রবির কাছে সরকারের রাজস্ব ও বিটিআরসির পাওনার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে। পাওনার বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া হবে না। তবে এই পাওনা আদায়ের বিষয়টি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করা হবে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই একটি সুন্দর সমাধান হবে। আমরা নিজেরা হারব না, কাউকে হারাব না। বুধবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা বলেন। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, বিটিআরসির চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, গ্রামীণ ও রবি গত ২২ বছর ধরে নিয়মিতভাবে ভ্যাট, ট্যাক্স ও বিটিআরসির পাওনা পরিশোধ করে আসছিল। এরমধ্যে বিভিন্নভাবে গ্রামীণের কাছে চার থেকে সাড়ে চার হাজার ও রবির কাছে আটশ’ থেকে সাড়ে আটশ’ কোটি টাকার দাবি আছে। এ দুটি অপারেটরের কাছে আবার বিটিআরসির পাওনা সুদসহ আট হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, রাজস্ব বাবদ গ্রামীণের কাছে যে চার হাজার কোটি টাকা পাওনা, তা এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তির অপেক্ষা আছে। আর বিটিআরসির যে পাওনা, তা আলোচনার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হবে। আমরা মনে করেছি, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসা উচিত। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে দুই অপারেটরের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে যাচ্ছিল। এ অবস্থা চলমান থাকলে আমাদের ক্ষতি হতো, আমরা রাজস্ব হারাতাম। তারা ব্যবসা করবে, আমরা নিজেদের পাওনা বুঝে নেব। তারা (দুই অপারেটর) যে মামলা করেছে, সে মামলা তারা প্রত্যাহার করে নেবে। অপরদিকে সরকারের তরফ থেকে যে নোটিস দেয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হবে। অর্থমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব, তা কখনই দেশের স্বার্থের বিপক্ষে যাবে না। এটি উইন উইন পদ্ধতিতে সমাধান হবে। সব ধরনের রাজস্ব হিসাব করে চূড়ান্ত করা হবে। তারা ব্যবসা করবে পাওনা বুঝিয়ে দিয়েই। তবে তাদের ব্যবসা পরিচালনায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। আলাপ-আলোচনা ব্যর্থ হয়ে বিটিআরসি হার্ডলাইনে চলে গিয়েছিল, তারা শোকজও করেছে- এ বিষয়ে তাহলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটা এখনও আছে। আমরা মনে করি, অন্য কোনভাবে গেলে অনেক সময় লাগবে। এতে কে লাভবান হবে, কে লুজার হবে, সেটা জানি না। তবে আমাদের লসের আশঙ্কা বেশি। পাওনার ক্ষেত্রে সরকার ছাড় দেবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমার বলা ঠিক হবে না। আমরা একটা সমাধানের দিকে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে বেশি দিন লাগবে না। দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হবে। এটা আমার ধারণা। আদালতে যে মামলা রয়েছে, সে বিষয় কী হবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা আর আদালতে যাব না। মামলা তারা প্রত্যাহার করবে। এটা না হলে তো আলোচনায় যেতে পারব না। তাই বসে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করার চেষ্টা করব। এ মুহূর্তে কতদিনের মধ্যে এটা হবে, সেটা বলা মুশকিল। সমাধান অবশ্যই হবে। সেটা অবশ্যই দেশের বিরুদ্ধে যাবে না। তারাও জিতবে, আমরাও জিতব। আমাদের যে ভুল বোঝাবুঝি আছে, সেটার অবসান ঘটিয়ে পূর্ণাঙ্গ সুষ্ঠু সমাধানে যাব। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, (গতকাল) মঙ্গলবার থেকে দৃশ্যপট বদলে গেছে, বিটিআরসির সঙ্গে দেনা-পাওনার বিরোধ আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে মিটিয়ে নেব। মোবাইল কোম্পানিগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখছে। গত ২২ বছরে এ দুটি অপারেটরের সঙ্গে এই পাওনা ছাড়া আর কোন বিষয় নিয়ে বিরোধ হয়নি। আমরা ব্যবসার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই, তবে জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষিত হতে পারে না। পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত করব। এনবিআরের চেয়ারম্যান জানান, গ্রামীণফোন চেয়েছিল আরবিট্রেশনের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা করতে। তবে বিটিআরসির আইনে আরবিট্রেশনের কোন সুযোগ না থাকায়, তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য অতি দ্রুত টেলিনরের সঙ্গে কথা বলতে। তারা আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পাব। এখানে সুদ বাবদ কোন পাওনা নেই। কিন্তু বিটিআরসির ৮ হাজার কোটি টাকা পাবে। এরমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সুদ বাবদ পাওনা। আমাদের পাওনার বিষয়টি এডিআরের মাধ্যমে সমাধান হবে। গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন, ‘আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ যে, আমাদের একত্রিত করে এটির সমাধান খোঁজা হচ্ছে। কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে গেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এখন আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান হবে।
×