ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশাল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বরিশাল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বেহাল দশা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ সংস্কারের অভাবে দিনে দিনে ধ্বংসস্তুপে রূপ নিয়েছে বৃহত্তর বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত আবাসিক সুবিধা সম্পন্ন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৯৯৬ সাল থেকে এ কেন্দ্রটিতে বরিশালের ১০উপজেলার বেকার যুবকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সূত্রমতে, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কেন্দ্রটিতে যেমন প্রশিক্ষণার্থীরা স্বাভাবিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তেমনি বিষয়বস্তুরও সংকট থাকায় বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন না যুবকরা। সংস্কারের অভাবে পাঁচ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির (যুব ভবন) একাডেমিক ভবনের ক্লাস রুমসহ নিচ তলার ফ্লোরের বেশিরভাগ জায়গা দেবে গেছে। টিনশেড একাডেমিক ভবনের সিলিংয়ে ব্যবহৃত বোর্ড ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পরছে। দীর্ঘদিন থেকে ভাঙ্গা দরজা-জানালায় ও বাথরুমগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পরেছে। বাথরুমের পাইপগুলো ছিদ্র হয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, ছেলেদের জন্য তিনতলা আবাসিক হোস্টেলের জানালা ও বারান্দার লোহার গ্রিলগুলো মরিচা ধরে খয়ে যাচ্ছে। এমনকি আবাসিক হোস্টেলের রুমগুলোর পলেস্তারা খসে পরছে। ভবনের অনেক কলামের ঢালাইয়ে ধরেছে ফাঁটল। তিনতলার ছাদে বৃষ্টির পানি জমে চুইয়ে নিচের রুমে ঝড়ে পরছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে কেন্দ্রটির দোতলা বিশিষ্ট ছাত্রী হোস্টেল ও কর্মকর্তাদের ডরমিটরিতে। ছাত্রদের সরকারীভাবে বিছানা, চেয়ার-টেবিল, তোষক ও ফ্যান দেওয়া হলেও সেগুলো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। এতো খারাপ অবস্থার মধ্যে ছাত্ররা আবাসিক হোস্টেলে থাকলেও ছাত্রীরা থাকেন কেন্দ্রটির বাহিরের ছাত্রী হোস্টেলে। ওই হোস্টেলের নিচ তলায় পাঁচশত টাকা ভাড়ার বিনিময়ে কেন্দ্রটির দুইজন কর্মচারীর পরিবার কোনোভাবে বসবাস করছেন। একইভাবে ডরমিটরির দোতলায়ও কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা দুটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন। সীমানা প্রাচীর থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির গার্ড রুম, পানির পাম্প রুম, মসজিদসহ সবকিছুরই বেহাল দশা। এমনকি প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যবহারিকের জন্য তৈরি গোয়াল ঘর, হাঁস-মুরগির শেড, হ্যাচারি-পানির ট্যাংকি সবকিছুই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। গোয়ল ঘরের কোথাও মাটি ডেবে গেছে, দেয়াল ফেঁটে বিশাল ফাঁকা হয়ে গেছে। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে মালির পথ শূণ্য থাকায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির পুরো এলাকাতেই জঙ্গলের কারণে রাস্তা দিয়ে হাঁটা চলাও দুরহৃ হয়ে উঠেছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা বলছেন, ঘুর্ণিঝড় সিডরের পর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির বেহাল দশা শুরু হয়। ওইসময় কেন্দ্রটির ভেতরের গাছপালা উপড়ে পরে। বিভিন্ন স্থাপনার নিচের মাটি সরে যাওয়া ও সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে পড়াসহ কেন্দ্রটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সীমানা প্রাচীর সংস্কার করা হলেও অন্য স্থাপনায় কোনো কাজ হয়নি। ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রটিতে প্রশিক্ষণ চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সরকারীভাবে কোনো সংস্কারই করা হয়নি। আর সংস্কার না হওয়ার কারণে এখন অনেক উদ্যোগ নিতেই ভয় পাচ্ছেন দায়িত্বরতরা। সূত্রে আরও জানা গেছে, কেন্দ্রটিতে ২১টি পদের বিপরীতে ১৫জনের যে জনবল রয়েছে সেখানেও গার্ড, ক্লিনার ও মালির পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য রয়েছে। আবার বাবুর্চি পদে বেশি জনবল থাকলেও সেখানে রান্নার মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। এছাড়া যারা রয়েছেন তারা স্ব-স্ব কাজ করে অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব পালনে রাজি নন। যদিও তারা বলছেন, আবাসন সুবিধা না থাকায় কর্মঘন্টা শেষে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হয়। কেন্দ্রের প্রশিক্ষনার্থী শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকার আবাসনের ব্যবস্থা করলেও তা এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। মাথাপিছু প্রতিদিন একজন শিক্ষার্থীর পেছনে ১০০ টাকা খাওয়া বাবদ খরচ করছে। তারপরেও কেন্দ্রের বেহাল দশার কারণে এখানে আসতে ও থাকতে অনেকেই ভয় পান। এমনকি বেহাল দশার কারণে কেন্দ্রটিতে গবাদি পশু, হাঁস ও মাছ সরবরাহ করা হচ্ছেনা। ফলে ব্যবহারিক শিক্ষা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। সূত্রমতে, কেন্দ্রটির সব সুবিধা পেতে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীদের নূন্যতম একটি ফি (অফেরতযোগ্য ১৩০ টাকা ও ফেরতযোগ্য জামানত ১০০ টাকা) দিয়ে ভর্তি হতে হয়। এরপর আবাসিকে থাকা-খাওয়াসহ প্রশিক্ষণের সবধরনের খরচ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় করা হয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে তিন মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণের ৯৫তম ব্যাচে ৬০জন যুবক (এরমধ্যে তিনজন মেয়ে) প্রশিক্ষণার্থীরা বর্তমানে কেন্দ্রটিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এছাড়া কেন্দ্রটিতে রয়েছে এক মাস মেয়াদী বেশকিছু কোর্স। আর শুরু থেকে এ পর্যন্ত সবকোর্স সম্পন্ন করেছেন প্রায় ১০ হাজার প্রশিক্ষণার্থী। যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কো অর্ডিনেটর মোঃ সিদ্দিক আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কেন্দ্রের এমন দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণার্থীরাও ভর্তি হচ্ছেন এখানকার বিভিন্ন কোর্সে। তাদের সকল সমস্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শোয়েব ফারুক বলেন, আমাদের অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কেন্দ্রটি পরিদর্শন করার পর এটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলেছেন। তারাও কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন। আশা করি দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
×