ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে পুঁজিবাজারে

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে পুঁজিবাজারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনে পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বাজার উন্নয়নে ট্যাক্স সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ‘অর্থনীতির প্রাণ’ পুঁজিবাজার উন্নয়নে আনা হবে বিদেশী বিনিয়োগ। এছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হলে বীমা কোম্পানিগুলোর সনদ বাতিল করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ভাল ভাল সরকারী কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে ফিরিয়ে আনা হবে। সোমবার শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে পুঁজিবাজারে দরপতনের কারণ খুঁজতে বেলা এগারোটায় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, ‘আজ সবাইকে এই বলে আশ্বস্ত করব যে আমরা পুঁজিবাজারকে সুশাসন দেব, আমরা গবর্নেন্সে ভাল করব। যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, সেগুলো টেককেয়ার করব। পুঁজিবাজারকে এভাবে আমরা একটি শক্তিশালী বাজারে রূপান্তরিত করব।’ পুঁজিবাজার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বিএসইসি চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন, বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সি কিউ কে মুস্তাক আহমদ, ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মজিব উদ্দিন, এমডি আবুল হোসেন ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও ডিএসই ও সিএসই চেয়ারম্যান ও পরিচালক, ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়শনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, এ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডসের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক-সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের এমডিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আ হ ম মুস্তফা কামাল জোর দিয়ে বলেন, পুঁজিবাজারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবোই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’। এই বাজারে আমরা শতভাগ আস্থা অর্জন করতে চাই। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের শেয়ার যেন যথাযথ দামে আসে এটা নিশ্চিত করা হবে। এখন থেকে কেউ আর অপবাদ দিতে পারবেন না যে আমরা ন্যায়বিচার করি না অথবা আমরা কারো প্রতি দুর্বল। পুঁজিবাজারে যিনি অপরাধ করবেন, তিনি যেই হোন না কেন, যত বড় শক্তিশালী হোন না কেন, আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের যেসব চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাজারের সক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে, যাতে পুঁজিবাজারটা টেকসই হয়। বাজারটি যেন একটা ভাল অবস্থানে আসতে পারে। তিনি বলেন, সবাই জানেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন কত শক্তিশালী। আমরা অবশ্য বেশি কিছু আশা করি না। আমাদের অর্থনীতি যতটা গতিশীল, পুঁজিবাজারকে ততটা গতিশীল হিসেবে দেখতে চাই। বাজারে যে বিশ্বাস-অবিশ্বাস আছে এগুলো দূর করব। পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির অন্যতম মৌলিক এলাকা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় পুঁজিবাজার উন্নয়নের কথা বলেন। মধ্য উচ্চ থেকে সাধারণÑ সবাই পুঁজিবাজারে জড়িত। এই বাজারে আরও কিছু কাজ করতে হবে। সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছি, পুঁজিবাজার উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারের সব সংস্থাও একমত পোষণ করেছে যে কোন মূল্যে পুঁজিবাজার উন্নয়ন করতেই হবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ভাল ভাল সরকারী কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে। পুঁজিবাজারে শেয়ারের মূল্য যাতে যথাযথ হয় সেই কাজ করব। এজন্য বিশেষ কমিটি করে দিয়েছি, তারা ঘুরে ঘুরে এসব দেখবে। যারা লাফিয়ে লাফিয়ে পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবে তারা ছাড় পাবে না। প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারের সূচক পতনের দিকে রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোকসানের মুখে মতিঝিল স্টক মার্কেটের সামনে সম্প্রতি মিছিল পর্যন্ত করেছেন। গত ’১০ সালে বড় ধসের পর ২০১৭ সাল থেকে পুঁজিবাজারে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু পরের বছর আবার কমতে শুরু করে সূচক। ’১৯ সালে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে সবাই প্রত্যাশা করলেও তেমনটি হয়নি। দিন যত যাচ্ছে বাজারের অবস্থা ততোই খারাপ হচ্ছে। এছাড়া এই বাজারের গতি বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতিতে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই বাজারে সূচকের উর্ধগতি দেখা গেছে। আরও ট্যাক্স সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা ॥ পুঁজিবাজার উন্নয়নে ট্যাক্স সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের যে অবস্থা, এভাবে চলতে দেয়া যায় না। এটা উন্নতি করতে হবে। প্রয়োজন হলে এর চেয়ে বেশি ট্যাক্স সুবিধা দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের বর্তমানে পুঁজিবাজারের যে অবস্থা এভাবে তো চলতে দেয়া যায় না। এটার নিশ্চয়ই উন্নতি করতে হবে। আমি এখানে বলেছি, বর্তমানে আমরা যে ট্যাক্স সুবিধা দিয়েছি, যথেষ্ট ভাল ট্যাক্স সুবিধা, প্রয়োজনে সুবিধা আরও বাড়ানো হবে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যেমন শেয়ার বিক্রি করার পর যে ক্যাপিটাল গেইন (লাভ) হয়, ১০ টাকার শেয়ার কেউ ২০ টাকা দিয়ে কিনে ৩০ টাকায় বিক্রি করল প্রতি শেয়ার। সেই হিসাবে এক হাজার শেয়ার বিক্রি করলে আমার ৩০ হাজার টাকা গেইন হয়। এই ৩০ হাজার টাকার ওপর কোন ট্যাক্স নেই। এ রকম আরও অনেক কিছু আছে, যেসব সুবিধা আমরা দিয়ে রেখেছি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যদি প্রয়োজন হয়, এর চেয়ে বেশি ট্যাক্স সুবিধা দেব। বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার তাগিদ ॥ বীমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আনার তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সম্প্রতি এ বাজার উন্নয়ন সংক্রান্ত এক বৈঠকে তিনি বলেন, দেশে জীবন বীমা ও সাধারণ মিলিয়ে মোট ৭৫ বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বাকি ২৮ দ্রুত তালিকাভুক্ত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
×