ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতিবাজ জনবলের প্রয়োজন নেই ॥ কাদের

বিআরটিসির দুর্নীতি শক্ত হাতে দমনের নির্দেশ মন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বিআরটিসির দুর্নীতি শক্ত হাতে দমনের নির্দেশ মন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর। গত প্রায় দুই বছরের বেশি সময় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই সংস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। কিন্তু কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছে না। বিআরটিসি নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। বলা হয় সংস্থাটির পদে পদে দুর্নীতি। ফলে বেহাল দশা একেবারেই পিছু ছাড়ছে না। সোমবার এক অনুষ্ঠানে বিআরটিসির দুর্নীতি কঠোর হাতে দমনে নতুন চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনবল কম হলে কম দিয়ে চলব। কিন্তু দুর্নীতিবাজ জনবলের প্রয়োজন নেই। এই সংস্থায় চেয়ারম্যান আসে আর যায়। আসার সময় শুনি তিনি সৎ মানুষ। কিছুদিন পরেই দেখি নানা অভিযোগ। ডিপো ম্যানেজারকে সঙ্গে নিয়ে তিনিও দুর্নীতি অনিয়মে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যানকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দুর্নীতিবাজ অভিজ্ঞ হলেও তাকে প্রয়োজন নেই। রাজধানীর বিআরটিসি ভবনে প্রতিষ্ঠানের চলমান ও ভবিষ্যত কার্যক্রম নিয়ে এক দিক-নির্দেশনামূলক ও মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিআরটিসি’র দুর্নীতিবাজদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিআরটিসিতে যারা দায়িত্ব অবহেলা এবং দুর্নীতি করে তাদের যদি শাস্তির আওতায় না আনা হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানটি জনস্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না। যারা অনিয়ম, অপকর্ম এবং দুর্নীতি করবে তারা যতই অভিজ্ঞ অফিসার হোক তাদের বিআরটিসিতে প্রয়োজন নেই। বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজাররা যদি ঠিক না হয় তাহলে বারবার গাড়ি আমদানি করেও বিআরটিসিকে লাভজনক করা যাবে না। বিআরটিসিকে লাভজনক করতে হলে ভেতরের দুর্নীতি দূর করতে হবে। দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে একে লাভজনক করা দুঃস্বপ্নের মতো বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, এখানকার শ্রমিকরা বেতন পায়নি এ ধরনের কোন অভিযোগ যেন বারবার আমাকে শুনতে না হয়। আর হেলপার দিয়ে যেন বাস চালানো না হয়। চালক সঙ্কট হলে বাস চালানো বন্ধ থাকবে কিন্তু হেলপার দিয়ে বাস চালানো নয়। বিআরটিসি’র বাস নতুন করে ইজারা দেয়া বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেসব বাস ইজারা দেয়া হয়েছে সেসব বাসের লাভ-ক্ষতির হিসাব আগে করতে হবে। এমনকি প্রভাবশালী কোন ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে যেন বাস দেয়া না হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেন সেতুমন্ত্রী। বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যানের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন চেয়ারম্যান আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি যা বলেছেন তাতে নিরাশ হতে চাই না। নতুন চেয়ারম্যানকে মন্ত্রণালয়ে আমি নিজে দেখেছি। তার ব্যাপারে আমার আত্মবিশ্বাস রয়েছে। তিনি এখানে দুর্নীতি দূর করতে পারবেন বলে বিশ^াস আছে। এ সময় নতুন চেয়ারম্যান মোঃ এহছানে এলাহী বিআরটিসিতে তার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে জানান, এখানে গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বাসে ভেহিক্যাল ট্রাকিং সিস্টেম লাগানো থাকবে। প্রতিটি বাসের ট্রিপ হিসাব অনলাইনে মনিটরিং করা হবে। ডিপো ম্যানেজারদের টার্গেট দেয়া হয়েছে। তারা প্রতি মাসের বেতন দেবেন এবং সঙ্গে এক মাসের বকেয়া বেতনও দিতে হবে। দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বিআরটিসির দুর্নীতি ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কমে এসেছে বলে দাবি করেন নতুন চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী। দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ ॥ ভারতীয় নতুন বাস আনতে ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং যার নেতৃত্বে আনা হয়েছে তাদের কোন কারসাজি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিছু বাসে ছাদ ফুটো হয় পানি পড়ার পর সরবরাহকারীকে ডাকা হয়েছিল। যারা গাড়িগুলো সরবরাহ করেছে তারা ক্ষতি পুষিয়ে দেবে, সে দায়িত্ব তারা নিয়েছে। আর যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি রেখে গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের নির্দেশও দেন তিনি। এ সময় বিআরটিসি’র সাবেক চেয়ারম্যানের প্রসঙ্গ উঠলে মন্ত্রী বলেন, যার নেতৃত্বে ত্রুটি-বিচ্যুতি পূর্ণ বাসগুলো নিয়ে আসা হলো সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। কারা গাড়িগুলো এনেছে, কি ত্রুটি-বিচ্যুতি? কেন ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি দেয়া হয়েছে এবং যারা এগুলো গ্রহণ করেছে সেই সময়, তারা ত্রুটি-বিচ্যুতি পূর্ণ গাড়ি কেন গ্রহণ করল। তাতে কোন কারসাজি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারত থেকে তিন শতাধিক বাস ও ট্রাক আমদানি করেছে বিআরটিসি। এর মধ্যে কিছু বাসের অবস্থা একেবারেই বেহাল। আমদানির পর চলাচলের শুরু থেকে ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়তে দেখা যায়। সমস্যা জানিয়ে কল্যাণপুর বাস ডিপো ম্যানেজার মন্ত্রণালয় ও বিআরটিসি চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠান। দলীয় নেতাদের দুর্নীতি খুঁজতে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রীর সেল ॥ ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের দুর্নীতি খুঁজতে গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সেল কাজ করছে। বিআরটিসির চলমান ও ভবিষ্যত কার্যক্রম সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা ও মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুবলীগ নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল করেছে। নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করছে, এটা ভাল।
×