ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন মাসের বেশি পূর্ণকালীন ভিসি নেই ;###;সীমানা প্রাচীর নির্মাণ বন্ধ

স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি চবিতে সক্রিয়

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি চবিতে সক্রিয়

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পূর্ণকালীন কোন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) নেই। যিনি প্রো-ভিসি তিনিই রুটিন দায়িত্ব পালনকারী ভিসি। সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, সরকারের নীতি নির্ধারক মহল টেস্ট কেস হিসেবে প্রো-ভিসি ড. শিরীণ আখতারকে ভিসির রুটিন দায়িত্ব পালনে নিযুক্ত করে। দায়িত্ব পালনের তিন মাসেরও বেশি সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ ৫০ বছর পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ কিলোমিটারব্যাপী চিহ্নিত সীমানা প্রাচীরের নির্মাণ কাজে এখন বন্ধ রয়েছে। গত ১৩ জুন তৎকালীন ভিসির দায়িত্ব শেষ হওয়ার একদিন আগেই প্রো-ভিসি ড. শিরীণ আখতার নিজেকে ভিসি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বিতর্কিত হয়ে যান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ড. শরীণই প্রথম প্রো-ভিসি যিনি ভিসির রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জামায়াত-বিএনপির সমর্থনে স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র তাকে নানাভাবে ঘিরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। আর এ ঘটনার কারণে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে এ ধরনের অস্থিরতা। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির শিক্ষক কর্মচারীরা বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন। আর অতীতে বর্তমান সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচীতে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসছেন। ভিসির দায়িত্ব পালনকারী ড. শিরীণ আখতার রুটিন দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সরকারবিরোধী চক্রের ফাঁদে পড়ে। সবচেয়ে বড় যে ঘটনার জন্ম হয়েছে সেটি হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এর নির্দিষ্ট সীমানা প্রাচীর ছিল না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী, ছাত্রনেতা এবং বহিরাগতরা বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানার জমি বেদখল করে রেখেছিল। বিদায়ী ভিসির আমলে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর চিহ্নিত হয়। এবং এর নির্মাণ কাজও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখলকারী ওই চক্রটি আবারও সক্রিয় হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্মিত সীমানা প্রাচীরের বিভিন্ন অংশ ভাঙ্গা হয়েছে এবং জমি দখলে নেয়ার অপচেষ্টা চলছে। এ চক্রটি সীমানা প্রাচীরে লৌহ নির্মিত গ্রিলও খুলে নিয়ে গেছে। ঘাপটিমেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ইন্ধনে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে অনেক অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় গ্রেফতার হন সমাজতত্ত্ব বিভাগের এক অধ্যাপক। ওই শিক্ষকের মুক্তির দাবির আন্দোলনে নেমেছিলেন একই বিভাগের আরেক শিক্ষক। রুটিন দায়িত্ব পালনকারী বর্তমান ভিসি ওই শিক্ষককে গত ৫ সেপ্টেম্বর চবির সহকারী প্রক্টর পদে নিয়োগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ওই সময়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দফতরের পদস্থ কর্মকর্তার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাকে বর্তমানে রুটিন দায়িত্ব পালনকারী ভিসির প্রশাসনের নীতি নির্ধারকদের অন্যতম বলে মনে করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগ, চবির প্রশাসনিক দায়িত্বে জেঁকে বসছে সরকারবিরোধীরা। এর নেপথ্যে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে জামায়াতপন্থীরা। প্রশ্ন উঠেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে প্রণীত নীল নক্সার সঙ্গে জড়িতরা কিভাবে বর্তমান চবি প্রশাসনকে গ্রাস করতে সক্ষম হচ্ছে। চবিতে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে বর্তমান সরকার সমর্থিত কাউকে কাউকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার সমর্থক অধ্যাপক গোলাম কবীরকে বিভাগীয় সভাপতির পদ থেকে কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে অপসারণ করা হয়েছে। যা নজিরবিহীন। ওই বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন খোদ ড. শিরীণ। তিনি এখন থ্রি ইন ওয়ান। অর্থাৎ তিনি একদিকে প্রো-ভিসি, আরেকদিকে রুটিন দায়িত্ব পালনকারী ভিসি আবার একটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানও। অধ্যাপক গোলাম কবীর ছাত্র জীবনে ১৯৯৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এবং জাপান বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের ভোটে চবির সিন্ডিকেট সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। সূত্র জানায়, রুটিন দায়িত্ব পালনকারী ভিসিকে যারা বর্তমানে ঘিরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক যিনি রীতিমতো উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিসে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, বিল সংক্রান্তে খবরদারি করছেন লোক প্রশাসন বিভাগের এক অধ্যাপক। যিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন দায়িত্বে নেই। তাকে বর্তমানে অনেকে ‘ছায়া ভিসি’র মতই ভাবছেন। ভিসি হিসেবে রুটিন দায়িত্ব পালনে ড. শিরীণের দায়িত্ব নেয়ার ৬ দিনের মাথায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির এবং এক সময়ের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের ক্যাডার হামিদুর রহমান আজাদ তার ছাত্রত্ব না থাকার পরও পিএইচডির জন্য অতি গোপনে তড়িঘড়ি করে সেমিনারের আয়োজন করেন। সম্প্রতি চবি নিয়ন্ত্রিত স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জামায়াতের আমির ঔদ্ধ্যতপূর্ণ আচরণ করেন। অধ্যক্ষ ফজলুল হক রণাঙ্গনের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন সুপরিচিত লেখকও বটে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আইইআরের ১৮ শিক্ষককে যোগদান করানোর অপতৎপরতা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের পক্ষের এক আইনজীবীকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নেয়া হয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলের এক আইনজীবীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকায় ইউজিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাকরিচ্যুত ওই ১৮ শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার অপপ্রয়াসে আইনজীবীর পরিবর্তন ঘটেছে অভিযোগ উঠেছে। এদের যোগদান করাতে মোটা অংকের লেনদেন হয়েছে বলে দাবি করে ক্যাম্পাসে প্রচারপত্র বিলি হয়েছে। ইউজিসির শর্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মেনে চবি স্কুল এ্যান্ড কলেজের ১৮ শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে আত্তীকরণ করা হয়। ওই ১৮ শিক্ষককে তাদের অতীত কর্মস্থলে ফেরত পাঠাতে ইউজিসি নির্দেশনা জারি করে।
×