ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অপহরণের৩ বছরেও সন্ধান মিলেনি স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহ’র

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অপহরণের৩ বছরেও সন্ধান মিলেনি স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহ’র

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থেকে মুক্তিপণের দাবীতে অপহরণের ৩বছর দু’মাস পরেও অপহৃত স্কুল ছাত্র এক শিশুর সন্ধান পায়নি পুলিশ ও তার স্বজনরা। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ তদন্ত করলেও ওই অপহৃতের হদিস মিলেনি। শিশু সন্তানকে ফিরে পেতে বিভিন্ন মহলের সহায়তা চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরছেন তার বাবা-মা। অপহৃত ওই শিশুর নাম মোঃ আব্দুল্লাহ (৬)। সে জামালপুরের সরিষাবাড়ি থানার পোঘলদিঘা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। অপহৃতের বাবা রফিকুল ইসলাম ও স্বজনরা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি থানার (তৎকালীন জয়দেবপুর থানাধীন) জরুন এলাকায় ভাড়া বাসায় ছোট ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ (৬) ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রফিকুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরি করেন। আব্দুল্লাহ বাসার পার্শ্ববর্তী কুদ্দুসনগর এলাকায় সিকদার প্রি-ক্যাডেট স্কুলে লেখাপড়া করত। ২০১৬সালের ২০জুলাই সকালে রফিকুল ইসলামের বাসায় বেড়াতে যায় তার ছোটভাই সফিকুল ইসলাম। বিকেলে সফিকুল স্থানীয় কড্ডা এলাকায় তার বাসায় ফিরে যাওয়ার সময় আব্দুল্লাহ আঁচার খেতে বায়না ধরে। সফিকুল আচার কিনে দেওয়ার কথা বলে আব্দুল্লাহকে নিয়ে বাসার পাশর্^বর্তী শাহীনের দোকানে যায়। এরপর আব্দুল্লাহ আর বাসায় ফিরেনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত আব্দুল্লাহ বাসায় ফিরে না আসায় ছোটভাই সফিকুলকে ফোন করে রফিকুল। এসময় সফিকুল জানায় আব্দুল্লাহকে পাশের দোকান থেকে আচার কিনে দিয়ে তাকে সেখানে রেখে সে চলে এসেছে। এদিকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও আব্দুল্লাহর সন্ধান পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আব্দুল্লাহকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানায়। অপহৃতকে রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকায় আটকে রাখা হয়েছে। তাকে পেতে হলে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। এরপর থেকেই ওই মোবাইল ফোনটিতে যোগাাযোগ করেও আর খোলা পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জয়দেবপুর থানা পুলিশকে জানিয়ে ২৩ জুলাই তৎকালীন জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন অপহৃতের বাবা রফিকুল ইসলাম। পরে পুলিশ মোবাইল ফোনের কললিস্ট ধরে লোকমান ও সফিকুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অপহৃতের হদিস পাওয়া যায় নি। রফিকুল ইসলাম আরো জানান, এর প্রায় এক মাস পর মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তরিত হয়। গোয়েন্দা পুলিশের এসআই নূর মোহাম্মদ, মামলার অপর এক আসামি সোহাগকে আটক করে। কিন্তু আটককৃতরা পুলিশের কাছে শিশু আব্দুল্লাহ অপহরণ বিষয়ে কোন তথ্য দেয়নি। এভাবে প্রায় বছর খানেক মামলাটির তদন্ত করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআই’তে স্থানান্তরিত হয়। পিবিআই পরিদর্শক মো. জাহিদুল হক ২০১৮সালের ৯মার্চ সাহাদুল নামের আরো এক আসামিকে আটক করে এবং দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সাহাদুল ওই ব্যাপারে মুখ খোলেনি। এমতাবস্থায় পিবিআই ইন্সপেক্টর মো. জাহিদুল হক মামলা থেকে সোহাগ ও সফিকুলকে অব্যহতি দিয়ে এবং সাহাদুল ও লোকমানকে অভিযুক্ত করে ৩০জুন আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। এ ব্যাপারে মামলার বাদি আদালতে নারাজীর আবেদন দিলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের তৎকালীন বিচারক এমএলবি মেছবাহ উদ্দিন মামলাটি বর্তমান গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে তদন্তভার দেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. জিন্নাহ শেখ বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছেন। তিনি মামলার আসামি লোকমানকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও শিশু আব্দুল্লাহ অপহরণের ঘটনার কোন তথ্য পাননি। পরবর্তীতে আদালত থেকে গ্রেফতারকৃত সকলেই জামিনে মুক্তি পান। রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় তিন বছর দু’মাস পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ মামলা তদন্ত করলেও এ পর্যন্ত তারা অপহৃত আব্দুল্লাহকে উদ্ধার বা সন্ধান করতে পারেনি। বর্তমানে আব্দুল্লাহ বেঁচে আছে না তাকে খুন করা হয়েছে বা খুন করে তার লাশ কোথায় গুম করা হয়েছে তার কোন তথ্য পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি। আমার কলিজার টুকরো শিশু আব্দুল্লাহকে যদি হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়টিও নিশ্চিত হতে পারতাম তাহলে আমি আর তার খোঁজে বিভিন্ন মহলে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতাম না। আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফেরাত প্রার্থনা করেও নিজের মনকে সান্তনা দিতে পারতাম। কিন্তু আমার বুকের ধন বেঁচে আছে না-কি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে তার কোনটিই জানতে পারছি না। এরচেয়ে আমার জন্য বড় আর কোন কষ্ট কিছুই নেই।
×