ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আসামিদের ভূমিকা বিস্তারিত আদালতে উপস্থাপন করলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  আসামিদের ভূমিকা বিস্তারিত আদালতে উপস্থাপন করলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী, ১৫ সেপ্টেম্বর ॥ ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলায় রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামান যুক্তিতর্কে নুসরাত হত্যাকা-ে আসামিদের কার কি ভূমিকা ছিল তার বিস্তারিত আদালতে উপস্থাপন করেন। আদালতে মামলার পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তা নুসরাতকে আগুনে পোড়ানোর আগে-পরে আসামিদের মোবাইলে কথোপকথনের অডিও ও নুসরাতের ডাইং ডিক্লারেশনের যে ভিডিও ফুটেজ আদালতে উপস্থাপন করেছেন তা সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারায় সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য বলে উপস্থাপন করেন। নুসরাত মৃত্যুর আগে হাসপাতালের ডাক্তারের সামনে যে ডাইং ডিক্লারেশনে দিয়েছে তা সাক্ষ্য আইনের ৩২ ধারা হিসেবে গ্রহণযোগ্য। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দিতে হবে এমন কথা নেই। ডাইং ডিক্লারেশনে মুখে বা লিখিত বা ইলেক্ট্রনিক কোন ডিভাইসে হতে পারে। এ ডাইং ডিক্লারেশনে নুসরাত কারও নাম বলে নেই তাই্ এটা ইনটেনশনারি ডাইং ডিক্লারেশন নয়। করও নাম বললে শুধুমাত্র সে আসামি হতো। আসামি পক্ষের দাবি ঘটনার কোন প্রত্যক্ষ সাক্ষী না থাকা প্রসঙ্গে তিনি আদালতে হাইকোর্ট বিভাগের একটি মামলার রায়ের উদাহরণ উপস্থাপন করেন। সেই মামলার (এল আর -১১ রাষ্ট্র বনাম মন্জুর) রায়ে বলা হয়েছে- কোন প্রত্যক্ষদর্শী আদালতের কাঠগড়ায় এসে সাক্ষ্য দেবে এমন বাধা ধরা নিয়ম নেই। পারিপার্শ্বিক অবস্থা মূল বিষয়। প্রত্যক্ষদর্শী কেনা যায়, পারিপার্শ্বিক অবস্থা কেনা যায় না। নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো ঘটনাস্থল সাইক্লোন সেন্টারের ছাদের চারপাশে অনেক উচু দেয়াল। সেখানে কেউ থাকলে দেখা যায় না। তা ছাড়া সেখানে মেয়েদের ওয়াশ রুম থাকায় কে আসছে কে যাচ্ছে তা কেউ খেয়াল করে না। অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিচতলা থেকে দোতালায় তার অফিস স্থানান্তর করে সেখানে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানিসহ অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন। এ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামান আদালতে উপস্থাপন করেন যে গত ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির পর তার মা, ভাই, এক পৌর কাউন্সিলর মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কক্ষে এসে ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে নুসরাতের মা শিরিন আক্তারের সঙ্গে অধ্যক্ষের কথাকাটাকাটি হয়। ঘটনা সামাল দিতে না পেরে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা মোবাইলে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি বর্তমান মামলার আসামি রুহুল আমিনকে মাদ্রাসায় আসতে বলেন। রুহুল আমিন সঙ্গে কাউন্সিলর মকসুদ ও পুলিশের এক দারোগাকে নিয়ে আসেন। তরা মাদ্রসায় এসে আগের ঘটনাগুলোর মতো এ ঘটনাটিও ধামাচাপা দেয়া চেষ্টা করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা সোনাগাজী থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে আলোচনা করেন। এরই মধ্যে নুসরাত, নুসরাতের মা ও ভাই থানায় গিয়ে মামলা করার আবেদন জানান। ঘটনা জানাজানি হলে সোনাগাজীর মানুষ ফুসে উঠে। ওসি বাধ্য হয়ে মামলা গ্রহণ করে সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেফতার করে। এর পর পর কাউন্সিলর মকসুদ আলম ও শাহাদাত হোসেম শামীম সিরাজ উদদৌলার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করে। এরপর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সিরাজ উদদৌলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করে। ঘটনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকলে সিরাজ উদদৌলা কারাগার থেকে শামীমের মাধ্যমে তার অনুসরীদের সংবাদ দেয়। তারা যেন নুসরাতের কাছ থেকে মামলা প্রত্যহারের কাগজ আদায় করে নেয়। না হয় তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওসি মোয়াজ্জেম থানায় নুসরাতকে ডেকে নিয়ে অশ্লীল ভাষায় হেনস্থা করে। যা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ভাইরাল হয়ে যায়। সোমবার বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। বাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। বিচার শুরুর ৪৭ কার্য দিবসে ৮৭ সাক্ষী সশরীরে আদালতে এসে সাক্ষ্যপ্রদান করেন। মামলার অভিযোগ পত্রে ৯২ সাক্ষীর নাম দিয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই। বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখ রবিবার সকালে ফেনী করাগার থেকে ১৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়েছে। আসামি কামরুন নাহার মনি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকায় যুক্তিতর্ক চলাকালীন আদালতে হাজির থাকা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন আদালত। দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারিক মোঃ মামুনুর রসিদের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত আলিমের আরবী পরীক্ষা প্রথম পত্র দিতে মাদ্রাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচদিন পর গত ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকেলে সোনাগাজীতে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে প্রধান আসামিসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। পিবিআই ও পুলিশ এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে হত্যায় সরাসরি জড়িত পাঁচজনসহ ১২ আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। গত ২৯ মে দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর শাহ আলম আদালতে ১৬ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট জমা দেন। এ মামলায় আটক থাকা চার্জশীটের বাইরের পাঁজজনকে বিচারিক আদালত মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
×