ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মসূচী ‘হান্ড্রেড প্লাস’

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 মুজিববর্ষে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মসূচী ‘হান্ড্রেড প্লাস’

ফিরোজ মান্না ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ‘হান্ড্রেড প্লাস’ নামে একটি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের মানুষকে এক শ’ রকমের সরকারী সেবা দেয়া হবে। বর্তমানে ৪০ ধরনের সেবা গ্রহণ করছেন দেশের মানুষ। মুজিব বর্ষে আরও ৬০ সেবা যুক্ত করা হবে। তবে এই ৬০ সেবার মধ্যে কি কি সেবা থাকবে এটা নিশ্চিত করেনি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই পরীক্ষামূলকভাবে টেলি সেন্টার, ওয়ানস্টপ সার্ভিস এবং ইনফরমেশন সেন্টার চালু রয়েছে। কিন্তু এমন কোন দেশের কথা জানা নেই যারা স্থানীয় সরকারের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদে (সারাদেশে) তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এই কাজটি একমাত্র বাংলাদেশেই করা সম্ভব হয়েছে। এমন মন্তব্য করে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র থেকে বর্তমানে ৪০ ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে। এবার মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রসমূহকে আরও গণমুখী করা হচ্ছে। ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারী-বেসরকারী সেবা পৌঁছানো, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজ এক সঙ্গে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় এটি ছিল অচিন্তনীয়। কিন্তু এখন এটি বাস্তব। আমরা সরকারের ৪০ ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছি। মুজিব বর্ষ হিসেবে আরও ৬০ সেবা যোগ করতে পারব। এটা আর কোন অকল্পনীয় বিষয় না। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ দেশের প্রাচীনতম স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। এটি তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সবচেয়ে কাছের সরকার। ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কেন্দ্র ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার’ (ইউডিসি) পরিষদকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২০১০ সালের ১১ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয় থেকে এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) একযোগে উদ্বোধন করেন। ইউডিসির মূল লক্ষ্য হলো ইউনিয়ন পরিষদকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। এসব প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের মধ্যে একটি তথ্য ও জ্ঞানভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি এসব কেন্দ্র সরকারী-বেসরকারী তথ্য ও সেবাসমূহ জনগণের কাছাকাছি নিয়ে যেতে এবং প্রযুক্তি বিভেদ দূর করে দেশের সব নাগরিককে তথ্য প্রবাহের আধুনিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে পারে । ইউডিসির উল্লেখযোগ্য সরকারী সেবাসমূহ হচ্ছে জমির পর্চা, জীবন বীমা, পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, সরকারী ফরম, পাবলিক পরীক্ষার ফল, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভিজিএফ-ভিজিডি তালিকা, নাগরিক সনদ, নাগরিক আবেদন, কৃষি তথ্য, স্বাস্থ্য পরামর্শ, ওয়াসার বিল, মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেল, চাকরির তথ্য, কম্পোজ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজী শিক্ষা, ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, ভিডিও কনফারেন্সিং, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ফটোকপি, লেমিনেটিংসহ আরও কয়েকটি সেবা রয়েছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের ফলে সাধারণ নাগরিক এখন সহজে, কম খরচে ও ঝামেলাহীনভাবে ৪০ ধরনের সরকারী-বেসরকারী সেবা ইউডিসি থেকে পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ কোটি সেবা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি, তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ ও উদ্যোক্তা তৈরি করতে সহায়ক হবে। আগামী বছর নাগাদ দেশের ১০০ স্টার্টআপ বা উদ্যোগকে বড় আকারে কার্যক্রম শুরু করতে ফান্ডিং বা তহবিল গঠন করা হবে। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেবা। একটি প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলাই সরকারের লক্ষ্য। আমরা সেই কাজটি করে যাচ্ছি। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, একজন দরিদ্র কৃষক ইউডিসি থেকে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পাওয়ার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায়িত হচ্ছে। এতে তার কৃষি উৎপাদন ও উপার্জন-দুটোই বাড়ছে। একজন সাধারণ নাগরিক উপজেলা বা জেলা অফিসে না গিয়েও জমির পর্চার নকলের জন্য আবেদন করতে পারছেন। যা তার সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। একজন গ্রামের শিক্ষার্থী তার নিজ গ্রামে বসেই এসএমএস’র মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারছেন। একজন অভিবাসী কর্মী ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ইংরেজী শিখছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও একজন সাধারণ মানুষ ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্থানীয় দুর্যোগ পূর্বাভাস নিচ্ছেন। এভাবে ইউডিসি গ্রামীণ মানুষকে বিভিন্ন সরকারী তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদকে ‘কার্যকর ও জনগণের প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে পরিণত করেছে। এর বাইরে আরও ৬০ সেবা যুক্ত হলে মানুষকে আর সরকারী-বেসরকারী অফিসগুলোতে দিনের পর দিন কোন কাজের জন্য ঘুরতে হবে না। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে।
×