ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিতের বিশ্বরেকর্ডে ভারত হারাল শ্রীলঙ্কাকে

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ৭ জুলাই ২০১৯

রোহিতের বিশ্বরেকর্ডে ভারত হারাল শ্রীলঙ্কাকে

রুমেল খান ॥ শনিবার আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ৪৪ নম্বর ম্যাচটিকে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচ না বলে যদি রোহিত শর্মার রেকর্ডের ম্যাচ বলা হয়, তাহলে কি খুব ভুল বা হবে? টিম ইন্ডিয়ার এই ওপেনারের দারুণ দুটি বিশ্বরেকর্ড এবং আরেকটি অর্জনে তার দল লিডসে জিতেছে হেসেখেলেই, ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে, ৩৯ বল হাতে রেখে। টসে জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭/২৬৪ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ভারত ৪৩.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৬৫ রান করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। অনবদ্য সেঞ্চুরির (১০৩) ফলে ম্যাচসেরার পুরস্কারটি লাভ করেন রোহিতই। তার সতীর্থ আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলও হাঁকান সেঞ্চুরি (১১৮ বলে ১১১ রান)। শ্রীলঙ্কার কাসুন রাজিথা, লাসিথ মালিঙ্গা এবং ইসরু উদানা ১টি করে উইকেট পান। আগেই সেমি নিশ্চিত হয়ে যাওয়া ভারতের নিজেদের নবম ম্যাচে এটা সপ্তম জয়। ১৫ পয়েন্ট তাদের। পক্ষান্তরে আগেই সেমিতে উঠতে ব্যর্থ হওয়া লঙ্কার সমান ম্যাচে এটা চতুর্থ হার। পয়েন্ট ৮। প্রতিপক্ষের রান তাড়া করতে নেমে ওপেনিং জুটিতেই ৩০.১ ওভারে ১৮৯ রান তুলে ফেলেন রোহিত-রাহুল জুটি। সেই সঙ্গে দুটি বিশ্বরেকর্ড ও আরেকটি অর্জন করায়ত্ত করেন ওপেনার রোহিত। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি শতক হয়তো তার নেই, কিন্তু সবচেয়ে বেশি দ্বি-শতক (তাও তিনটি, যেখানে অন্য ৫ জনের মাত্র ১টি করে!) তারই। তাছাড়া ওয়ানডেতে এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটিও (২৬৪) রোহিতের। মজার ব্যাপার, তার তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির দুটিই আবার লঙ্কার বিরুদ্ধে এবং সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটিও ছিল এই লঙ্কার বিপক্ষেই! এবারের বিশ্বকাপে সেই রোহিত শনিবার লঙ্কানদের বিরুদ্ধে হাঁকান আরেকটি সেঞ্চুরি (৯৪ বলে ১০৩ রান। ৪-১৪, ৬-২, স্ট্রাইকরেট ১০৯.৫৭)। চলতি বিশ্বকাপে এটা তার পঞ্চম ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি, যা সবার চেয়ে বেশি। এছাড়া এটা তার ওয়ানডেতে ২৭তম এবং লঙ্কার বিপক্ষে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। ফলে টপকে যান শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারার এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৪টি সেঞ্চুরির রেকর্ড। তবে সাঙ্গাকারার ওই সেঞ্চুরির সবগুলোই ছিল টানা ম্যাচে, যেটি ছিল ওয়ানডে ইতিহাসেরই বিশ্বরেকর্ড। শনিবারের সেঞ্চুরিটি ছিল রোহিতের এই বিশ্বকাপের টানা তৃতীয় শতক। ফলে সাঙ্গাকে স্পর্শ করার সুযোগ পাচ্ছেন রোহিত। কেননা তার হাতে এখনও দুটি ম্যাচ বাকি (সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল)। এখানেই শেষ নয়, শনিবার শতক হাঁকিয়ে রোহিত স্পর্শ করেছেন স্বদেশী আরেক কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকারকেও। ছয় বিশ্বকাপ খেলে শচীনের মোট বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি ৬টি। আর মাত্র দুই বিশ্বকাপ খেলেই শচীনের সমান শতক হাঁকিয়ে ফেললেন বিস্ময়কর রোহিত! এখন সেমিতে ও ফাইনালে কমপক্ষে ১টি শতক হাঁকাতে পারলে মোট শতকসংখ্যাতেও শচীনকে পেছনে ফেলে দিতে পারবেন ৩০ বছর বয়সী রোহিত। তবে বিশ্বকাপে সাঙ্গাকারা ও শচীনকে যথাক্রমে টানা সেঞ্চুরিতে ও মোট সেঞ্চুরিতে পেছনে ফেলতে না পারলেও তাদের অন্য একটা পরিসংখ্যানে ঠিকই টপকে গেছেন রোহিত। সেটা হলো ইনিংস সংখ্যায় তাদের পেছনে ফেলা। যেখানে ৬ সেঞ্চুরি করতে শচীন খেলেছেন ৪৪ ও ৫ সেঞ্চুরি করতে সাঙ্গা খেলেছেন ৪২ ইনিংস (অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিংও করেছেন ৪২ ইনিংসে ৫ সেঞ্চুরি), সেখানে ৬ সেঞ্চুরি হাঁকাতে রোহিতের লেগেছে মাত্র ১৬ ইনিংস! এছাড়া রোহিত শনিবার সেঞ্চুরি করে চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানকেও (৬০৬ রান) পেছনে ফেলে দিয়েছেন। চলতি আসরে রোহিতের রান এখন ৬৪৭। আর মাত্র ২৬ রান করলেই ভেঙ্গে দিতে পারতেন বিশ্বকাপের এক আসরে শচীনের সর্বোচ্চ ৬৭৩ রানের বিশ্বরেকর্ডটিও (২০০৩ আসরে)। এজন্য অবশ্য আরও দুই ম্যাচ হাতে পাচ্ছেন রোহিত। তবে তার আগে তাকে টপকাতে হবে অস্ট্রেলিয়ার আরেক সাবেক ওপেনার ম্যাথু হেইডেনকে। ২০০৭ বিশ্বকাপে হেইডেন করেছিলেন ৬৫৯ রান। এছাড়া শনিবার আরও ২৩ রান করলেই পূর্ণ করে ফেলতে পারতেন বিশ্বকাপে ১০০০ রান। সেটা তিনি না পারলেও তার অধিনায়ক বিরাট কোহলি ঠিকই পেরেছেন। শনিবার ৩৪ রানে নট আউট থাকা বিরাটের মোট বিশ্বকাপ রানসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০২৯। এ নিয়ে ১৫৯ ওয়ানডের ম্যাচের মোকাবেলায় ৯১টিতেই জিতলো ভারত। ৫৬টিতে জিতেছে লঙ্কা (১টি ম্যাচ টাই হয়, ১১ ম্যাচ হয় বাতিল)। বিশ্বকাপের ৯ বারের মোকাবেলায় উভয় দলই জিতেছে সমান ৪টি করে ম্যাচ (১টি ম্যাচ বাতিল)। বিশ্বকাপে সর্বশেষ মোকাবেলায় (২০১১) শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে সর্বশেষ ১১ মোকাবেলায় ৯টিতে জয় তাদেরই। কাজেই একবারের চাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যে দু’বারের শিরোপাধারী ভারতই যে ফেভারিট থাকবে, শনিবার ম্যাচের আগে ক্রিকেটবোদ্ধারা এমনটাই ভেবেছিলেন। তাদের এমন ধারণাকে সত্যি প্রতিপন্ন করেই খেলতে নেমে লঙ্কান সিংহদের ৭ উইকেটে ২৬৪ রানের বেশি করতে দেয়নি টিম ইন্ডিয়া। ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। ১২ ওভার শেষ হবার আগেই ৫৫ রানেই তারা খুইয়ে ফেলে ৪ উইকেট। টপ অর্ডারের প্রত্যেক উইলোবাজই পর্যবসিত হন ব্যাটিং-ব্যর্থতায়। শুরু থেকেই স্বস্তিতে ছিল না শ্রীলঙ্কা। একে একে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ (১০), কুসল পেরেরা (১৮), কুসল মেন্ডিস (৩) এবং আভিস্কা ফার্নান্দো (২০)। উইকেটগুলো ভাগাভাগি করে নেন জাসপ্রিত বুমরাহ, হারদিক পা-িয়া এবং রবীন্দ্র জাদেজা। এ অবস্থায় চরম বিপদে পড়ে শ্রীলঙ্কা। সেই সঙ্কট থেকে দলকে ওপরে টেনে তোলেন এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। পঞ্চম উইকেটে লাহিরু থিরিমান্নেকে নিয়ে ১২৪ রানের জুটি গড়েন লঙ্কান সাবেক অধিনায়ক। ৫৩ করে থিরিমান্নে ফেরার পর (দলের সংগ্রহ তখন ৩৭.৫ ওভারে ৫/১৭৯ রান, থিরিমান্নেকে আউট করেন কুলদীপ যাদব) আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন ম্যাথুজ, ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে। ভারতীয় বোলারদের আক্রমণ সামাল দিয়ে ঠা-া মাথায় চমৎকার এক এক শতক হাঁকান ম্যাথুস। ওয়ানডেতে এটা তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। মজার ব্যাপার, এ সেঞ্চুরির সবগুলোর প্রতিপক্ষ একই দল, ভারত! এর আগের দুটি সেঞ্চুরিই ছিল ভারতের মাটিতে এবং দুটিই অপরাজিত (১১১*, মোহালি, ১৩/১২/২০১৭ এবং ১৩৯* রাঁচি, ১৬/১১/২০১৪)। এবারের তৃতীয় শতকটি এল নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এবং এই সেঞ্চুরি আগের দুটির মতো এটা আউট হওয়া সেঞ্চুরি। ষষ্ঠ উইকেটে ৭৪ রানের জুটির পর ইনিংসের ৪৯তম ওভারে এসে ডানহাতি ব্যাটসম্যান ম্যাথুস আউট হয়ে যান ১২৮ বলে ১১৩ রান করে (৪-১০টি, ৬-২টি)। তাকে সাজঘরে ফেরান বুমরাহ। ম্যাথুস ধরা পড়েন রোহিত শর্মার হাতে। ম্যাথুসের এ সেঞ্চুরিতে ভর করেই ৭ উইকেটে ২৬৪ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় লঙ্কানরা। শেষদিকে যে মারদাঙ্গা ব্যাটিংয়ের দরকার ছিল, সে চাহিদা মেটাতে পারেননি ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (২৯*), থিসারা পেরেরা (২) এবং ইসুরু উদানা (১*)। ভারতের হয়ে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ১০ ওভারে মাত্র ৩৭ রান খরচা করে ৩টি উইকেট নেন ডানহাতি এই পেসার। এছাড়া ভূবনেশ্বর কুমার, হারদিক পা-িয়া, রবীন্দ্র জাদেজা এবং কুলদীপ যাদব প্রত্যেতেই লাভ করেন ১টি করে উইকেট। নিয়মরক্ষার ম্যাচ হলেও এই ম্যাচটিকে নিজেদের সম্মান রক্ষার ম্যাচ হিসেবেই দেখেছিল লঙ্কানরা। কেননা শেষটা ভাল করেই তারা ফিরতে চেয়েছিল দেশে। একইসঙ্গে ম্যাচ জিতে পয়েন্ট বাড়িয়ে এবারের আসরের শীর্ষ দল হতে চেয়েছিল ভারত। রোহিতের দুই বিশ্বরেকর্ডে সেই ইচ্ছাই পূর্ণ হয় তাদের। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে অসিদের হারাল প্রোটিয়ারা॥ স্পোর্টস রিপোর্টার জানান, আইসিসি ক্রিকেট বিশ^কাপে শনিবারের দ্বিতীয় ও শেষ লিগ ম্যাচে (ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত) দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। ম্যাচটি ছিল যথেষ্ট শ^াসরুদ্ধকর। শেষ ওভারে ১৮ রানের দরকার হয় তাদের। প্রোটিয়া বোলার আন্দিলের সেই ওভার থেকে ৮ রানের বেশি তুলতে পারেননি লিয়ন-বেহরেনডর্ফ জুটি। বরং ২ বল আগেই শেষ উইকেটটিও খুইয়ে ফেলে তারা। ফলে রোমাঞ্চকর জয় পায় প্রোটিয়ারা। শেষ চারের নিয়ম অনুযায়ী পয়েন্ট তালিকার এক নম্বর দলের সঙ্গে চার নম্বর আর দুই নম্বর দলের সঙ্গে তিন নম্বর দলের সেমিফাইনাল খেলা হবে। সে অনুযায়ী ৯ জুলাই প্রথম সেমিতে ভারত মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ডের। আর ১১ জুলাই দ্বিতীয় সেমিতে অস্ট্রেলিয়া মোকাবেলা করবে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১৪ জুলাই। আসরের ৪৫তম এই ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিং করে দক্ষিণ আফ্রিকা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬/৩২৫ রান করে তারা। অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস সেঞ্চুরি করেন (৯৪ বলে ১০০ রান)। এছাড়া ৫ রানের জন্য শতকবঞ্চিত হন ভ্যান ডার ডুসেন (৯৭ বলে ৯৫ রান)। ডি কক করেন অর্ধশতক (৫১ বলে ৫২ রান)। অসি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২টি করে উইকেট পান নাথান লিয়ন (২/৫৩) এবং মিচেল স্টার্ক (২/৫৯)। এছাড়া ১টি করে উইকেট পান বেহরেনডর্ফ এবং প্যাট কামিংস। স্টার্কের কথা না বললেই নয়। এই ২ উইকেট নিয়ে এ বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ২৬ উইকেট হয়ে গেল বাঁহাতি এই অসি পেসারের। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়ার রেকর্ড এখন যৌথভাবে স্টার্কের দখলে। রেকর্ডটি নিজের স্বদেশীর সঙ্গেই ভাগাভাগি করছেন স্টার্ক। ২০০৭ বিশ্বকাপে ২৬ উইকেট পেয়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রাও। তবে ম্যাকগ্রা খেলেছিলেন ১১ ম্যাচ। সেমিফাইনালে আর একটি উইকেট নিতে পারলেই ম্যাকগ্রাকে ছাড়িয়ে রেকর্ডটি এককভাবে নিজের করে নিতে পারবেন স্টার্ক। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৪ ওভারে ৩১৫ রান অলআউট হয়ে যায় গত আসরের ও সর্বাধিক ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। বিফলে যায় ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি (১১৭ বলে ১২২ রান)। চলতি আসরে এটি তার তৃতীয় শতক। এছাড়া সাত নম্বরে নেমে এ্যালেক্স ক্যারির ৮৫ রান ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া অন্য কোন উইলোবাজ তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে কাগিসো রাবাদা সর্বাধিক ৩টি উইকেট পান। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস পান ২টি উইকেট। ১টি করে উইকেট পান তাহির (এটাই ছিল তাহিরের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ), মরিস এবং আন্দিলে।
×