ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও কলেজে ভর্তির বাইরে দেড় লাখের বেশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ১০:১৫, ৭ জুলাই ২০১৯

 এখনও কলেজে ভর্তির বাইরে দেড় লাখের বেশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী

বিভাষ বাড়ৈ ॥ একাদশ শ্রেণীতে তৃতীয় ধাপের ভর্তি শেষ। কিন্তু এখনও সারাদেশে ভর্তির বাইরে আছে দেড় লাখেরও বেশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৬ জন অথচ এবার কলেজ ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ১৪ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থী। এছাড়া মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির জন্য আবেদনই করেনি। যাদের একটি বড় অংশই শিক্ষা থেকে ঝরে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে আবেদনকারী সকল শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পাবে বলে আশ^স্ত করেছে শিক্ষা বোর্ড। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি কার্যক্রম উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছুরা কলেজে গিয়ে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে সরাসরি ভর্তি হতে পারবে। এই প্রক্রিয়ায় ভর্তিতে কোন বাণিজ্য হবে না বলেও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেছেন বোর্ড চেয়ারম্যানরা। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের ভর্তিই শেষ হয়েছে। সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ। যারা এখনও ভর্তির জন্য মনোনীত হয়নি বা ভর্তি হতে পারেনি তাদের চিন্তার কিছু নেই। কারণ সারাদেশের কলেজগুলোতে প্রচুর আসন খালি আছে। এক প্রশ্নের জবাবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সভাপতি বলেন, রবিবার (আজ) কলেজ নিশ্চায়ন না করা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে একটি বোর্ড মিটিং আছে। আমরা অবশ্যই তাদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেব। তবে তারা কি উপায়ে ভর্তি হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে ওই মিটিংয়ে। তবে শিক্ষার্থীরা কেন যথাসময়ে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি এর কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি যাতে করে পরের বছর এমনটা আর না হয়। দেরিতে ভর্তি হয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে এরা যেন পিছিয়ে না পড়ে সে বিষয়েও কলেজ অধ্যক্ষদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বছর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে তিন লাখ ১৬ হাজার ৮৬৩ শিক্ষার্থী। দেশের অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের তুলনায় এই বোর্ডে শিক্ষার্থী ভর্তির হার সবচেয়ে বেশি। এ বোর্ডে এখনও আসন খালি রয়েছে প্রায় দুই লাখ। তাই শেষ পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থীই ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে থাকবে না বলে আশা করছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান। জানা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু হয়েছে। অথচ ভর্তির বাইরে রয়ে গেছে চার লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ভর্তির জন্য আবেদন করা শিক্ষার্থীই আছে এক লাখ ৬০ হাজার। এবার মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ শিক্ষার্থী পাস করে। তাদের মধ্যে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেছে ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৬ শিক্ষার্থী। অথচ এবার কলেজ ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ১৪ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, ভর্তি না হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকে ভর্তির জন্য আবেদন করে কলেজ পেয়েও ভর্তি হয়নি। অন্যদিকে অনেকে আবার ভর্তির জন্য আবেদনই করেনি। কিন্তু এখন এদের ভর্তির প্রক্রিয়া কি হবে? তারা কি ভর্তি হতে পারবে? এমন প্রশ্নে সকলকে নিশ্চিন্ত হতে বলেছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, আবেদনকারী সকল শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পাবে। কারণ অসংখ্য আসন খালি আছে। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি কার্যক্রম উন্মুক্ত করার কথা আমরা চিন্তা করছি। এক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছুরা কলেজে গিয়ে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে সরাসরি ভর্তি হতে পারবে। যেখানে আসন খালি আছে সেখানে সরাসরি শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করবে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ মেধার বিবেচনায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। প্রথম তিন ধাপে অনলাইনে আবেদনের পর এখন কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভর্তিতে অনিয়মের আশঙ্কার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চেয়ারম্যান বলেন, প্রক্রিয়ায় ভর্তিতে কোন অনিয়ম বা ভর্তি বাণিজ্য হবে না। কারণ সারাদেশের বড় বড় কলেজে ভর্তি শেষ। প্রধান প্রধান কলেজে কোন আসন খালি নেই। যেখানে আসন খালি আছে সেখানে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা হবে না। এসব প্রতিষ্ঠানে দেখা যাবে শিক্ষার্থীই পাওয়া যায় না ভর্তির জন্য। অথচ আসন খালি প্রচুর। তাই ভর্তিতে অনিয়ম, বাণিজ্যের আশঙ্কা নেই। এর আগে গত ১২ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত ভর্তির জন্য অনলাইন ও মোবাইলে এসএমএস করে আবেদনের সুযোগ পায় এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। একেকজন শিক্ষার্থী অনলাইনে পাঁচ থেকে ১০টি কলেজের জন্য আবেদন করতে পারে। এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ ছাত্রী এবং ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪৪১ জন ছাত্র। এ পরীক্ষায় সারাদেশে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ শিক্ষার্থী। এদিকে জানা গেছে, এবার আবেদন করেছেন ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৮২৫ জন কলেজ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। মাধ্যমিকে উত্তীর্ণদের মধ্যে এবার দুই লাখ ৪২ হাজার ৪২ শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে আবেদন করেননি। গত বছরও প্রথম ধাপে আবেদনের বাইরে ছিল প্রায় আড়াই লাখ। তবু সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিবছরই এভাবে বেশ কিছু শিক্ষার্থী কলেজ পর্যায়ে এসে শিক্ষার সাধারন ধারায় থাকে না। তারা হয় কারিগরি ডিপ্লোমা বা অন্যান্য ধারায় চলে যায়। কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পরে। মেয়েদের অনেকের এই সময়ে বিয়ে হয়ে যায়। ফলে তারা সাধারণ কলেজ ভর্তির বাইরে থেকে যায়। এবার কলেজে ভর্তি হতে ১০ লাখ ৫২ হাজার ১৮৪ জন অনলাইনে এবং ৩ লাখ ৭৪ হাজার ২২২ জন এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করেছে। ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৮২৫ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯৫টি এবং এসএমএসের মাধ্যমে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫১টি আবেদন। এবার ঢাকা বোর্ডে তিন লাখ ৯৯ হাজার ১৯৫ জন, রাজশাহীতে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫৮২ জন, চট্টগ্রামে এক লাখ ২২ হাজার ৩৬ জন, কুমিল্লায় এক লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৫ জন, যশোরের এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৯৪ জন, বরিশালে ৭৭ হাজার ৪২০ জন, সিলেটে ৮০ হাজার ১৬২ জন, দিনাজপুরে এক লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৮ জন, ময়মনসিংহে ৯৬ হাজার ৫৪৩ জন এবং মাদ্রাসা বোর্ডে এক লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হতে আবেদন করেছে।
×