ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবহৃত বোমা জঙ্গীদের

পুলিশকে হত্যা করতেই পরিকল্পিত হামলা হয়েছে

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৯ মে ২০১৯

পুলিশকে হত্যা করতেই পরিকল্পিত হামলা হয়েছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। মূলত পুলিশকে হত্যা করতেই ওই হামলা চালানো হয়েছিল। আর হামলার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের বোমা ছিনতাইকারী বা কোন সাধারণমানের সন্ত্রাসীদের তৈরি করার কথা নয়। হামলায় যে ধরনের বোমা ব্যবহৃত হয়েছে, ওই ধরনের বোমা সাধারণত জঙ্গীরা তৈরি করে থাকে। বিশেষ করে এ ধরনের বোমা জেএমবি জঙ্গীরাই বেশি তৈরি করে থাকে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, জেএমবি জঙ্গীদেরই কোন একটি অংশ আইএসের অনুসারী হয়ে এ ধরণের পরিকল্পিত হামলা চালাতে পারে। যদিও পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, কোন গোষ্ঠী দেশে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই এ ধরনের হামলা চালাচ্ছে। আর তার দায় চাপাচ্ছে আইএসের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনটির ঘাড়ে। আর সরকারের তরফ থেকে দেশে কোন আইএসের তৎপরতা নেই বলে বার বারই দাবি করা হয়েছে। গত ২৬ মে রাত পৌনে নয়টার দিকে মালিবাগ মোড়ে গ্যাস পাম্পের উল্টো দিকে ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একটি গাড়িতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গাড়িটির চালক পুলিশের বিশেষ শাখার কনস্টেবল মোঃ শফিক চৌধুরী বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত করছেন পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আলী। মামলার অভিযোগে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কনস্টেবল গাড়িটির চালক শফিক চৌধুরী বলেন, তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-৫১৭৪ নম্বর সিঙ্গেল কেবিন পিকআপের চালক হিসেবে স্ট্যান্ডবাই ডিউটি করছিলেন। ওই গাড়িটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা জরুরী কাজে ব্যবহার করে থাকেন। রাত পৌনে নয়টার দিকে তিনি গাড়িতে উঠে চালু করার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে বোমা হামলা হয়। প্রচ- বেগে বোমা বিস্ফোরিত হয়। আর চালকের সিটের পেছনে বসার সিটে ও ওপরে সাইরেন বাজানোর জন্য থাকা হুটারে সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। এ সময় সিএনজি পাম্প থেকে আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি এনে গাড়ির আগুন নেভায় আশপাশের লোকজন ও পুলিশ সদস্যরা। গাড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে ডিএমপির ট্রাফিকের পূর্ব বিভাগের কর্মকর্তা এএসআই রাশেদা খাতুন মারাত্মক আহত হন। তার বাম পায়ের হাঁটু থেকে নিচের অংশ মারাত্মক জখম হয়। জখমের কারণে অনবরত রক্ত পড়ছিল। আর তার পাশেই থাকা রিক্সাচালক লাল মিয়াও (৫০) মারাত্মক আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই ওই হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি হামলার ধরন বলছে, হামলাকারীদের পুলিশকে হত্যার টার্গেট ছিল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে হয়তো পুলিশ মারা যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা, সিআইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থলে হাজির হন। সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থল থেকে বোমা হামলার নানা আলামত সংগ্রহ করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হামলার সঙ্গে জড়িত কেউ গ্রেফতার বা শনাক্ত হয়নি। এদিকে মালিবাগ মোড়ে পুলিশের গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে জঙ্গী গোষ্ঠী আইএস। টুইটারে দেয়া এক পোস্টে হামলার দায় স্বীকারের তথ্য জানিয়েছে জঙ্গী তৎপরতা বিষয়ক খবরের মুনাফাভিত্তিক ওয়েবসাইট ইন্টেলিজেন্স। এর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তুরাঁ ও বেকারি এবং গত ২৯ এপ্রিল ঢাকার গুলিস্তানে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করে আইএস। দায়িত্বশীল একটি সূত্র জব্দকৃত আলামতের প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশের গাড়িতে হামলায় ব্যবহৃত বোমাটি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। এ ধরনের বোমা ছিনতাইকারী বা সাধারণমানের সন্ত্রাসীদের তৈরির কথা নয়। এমনকি তারা এমন বোমা তৈরির কৌশলও হয়তো জানে না। এ ধরনের বোমা সাধারণত প্রশিক্ষিত জঙ্গীদের তৈরি করার তথ্য প্রমাণ মেলে। জেএমবি জঙ্গীদের মধ্যেই এ ধরনের বোমা তৈরি, মজুদ ও ব্যবহার করার প্রবণতা বেশি। অতীতে যার বহু প্রমাণ আছে। ইতোপূর্বে আবিষ্কৃত হওয়া জেএমবির আস্তানা থেকে জব্দ হওয়া বোমায় ব্যবহৃত কাঁচামালের সঙ্গে মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে হামলায় ব্যবহৃত বোমার যথেষ্ট মিল লক্ষ্য করা গেছে। জেএমবির কোন গোষ্ঠী আইএসের অনুসারী হয়ে এ ধরনের হামলা চালাতে পারে বলে সার্বিক পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে। মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া নিউমার্কেট এলাকার নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে হামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কাক্সিক্ষত গতিতে এগোচ্ছে। তবে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছুই বলা যাচ্ছে না। দেশে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতেই ওই হামলা হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সে রকম একটি ভীতিকর পরিস্থিতি হয়তো সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তিনি জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তবে যে বোমাটি দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে, সেটি সাধারণ কোন বোমা নয়। এটি সাধারণ বোমার চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
×