ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কবীর চৌধুরী তন্ময়

কিছুটা চ্যালেঞ্জ আপনিও নিন

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ২৭ মে ২০১৯

 কিছুটা চ্যালেঞ্জ  আপনিও নিন

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে, তারা মূলত বাংলাদেশকে গড়তে কাজ করেনি। আমি বাংলাদেশী- এই মর্যাদা বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার বিপরীতে উল্টো বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের অকার্যকর করার সব ধরনের চেষ্টা করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে যারা হত্যা করেছে, ওইসব খুনীকে সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছে। যার ধারাবাহিকতায় অধিকাংশ অযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, যারা এই বাংলাদেশ চায়নি, যারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করতে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে আল বদর, আল সামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে, বাড়ি-ঘর, শিল্প-কলকারখানা ধ্বংস করেছে, যারা এদেশের ত্রিশ লাখ সূর্য সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। দুই লাখেরও বেশি নারীর সম্ভ্রব বিনাশ করেছে- এই তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষক করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও অধিষ্ঠিত করেছে। আর এই তারাই পাকিস্তানী ভাবধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে যেসব অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়েছে, সেখান থেকে আমরা আজও বের হয়ে আসতে পারিনি। কয়েকটি জেনারেশন ওই সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় সভ্যতায় ফেরাতে শেখ হাসিনাকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এর দায় কি শুধু শেখ হাসিনার? সব কিছু শেখ হাসিনাকেই করতে হবে? তাহলে আমি কে? আপনার পরিচয় কী? এই সমাজ, সভ্যতা নিয়ে আমাদের দায়বদ্ধতা কী- এই ধরনের হাজারো প্রশ্ন নিয়ে আমি-আপনি বা আমরা হয়তো বিব্রতবোধ করব, কিন্তু কতজন প্রকৃত চিত্র একটু বোঝার চেষ্টা করি বা করেছি? তার সংখ্যানুপাত কত? সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়ক আন্দোলন রাজধানীসহ দেশের প্রত্যেক জেলা-উপজেলার মানুষকে একত্রিত করেছে। আমরা সবাই নিরাপদ সড়ক চাই- এই দাবি নিয়ে মাঠে-ময়দানে এবং মিডিয়া ও স্যোশাল মিডিয়াতে বিপ্লব করেছি। অনেকে আবার এই আন্দোলনকে পুঁজি করে নানান ধরনের ষড়যন্ত্রও করেছে। সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে চলচ্চিত্র জগতের কতিপয় বিতর্কিত মডেলও ফেসবুক লাইভে এসে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের বংশধর মুখ ঢেকে স্যোশাল মিডিয়ায় তাদের চিরাচরিত মিথ্যাচারের নোংরা চরিত্রটুকু তুলে ধরেছে। আবার অনেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও পাকিস্তানী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অসত্য, বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছে। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী যারা রাস্তা পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে, যারা জেব্রা ক্রসিংয়ের অভিযোগ তুলেছে, যারা ফুটপাথ দখলমুক্ত করার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে, তারা কি সত্যিকার অর্থে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে? আমরা কি সবাই জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হই? দখলমুক্ত ফুটপাথ দিয়ে আমরা অনেকেই কি মোটরসাইকেল চলাচল করা থেকে বিরত আছি- এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোর মানুষের চোখে দৃশ্যমান। কিছু একটা হলেই শেখ হাসিনার দোষ দিয়ে বসি। সঙ্গে শেখ হাসিনার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে নেমে পড়ি। কিন্তু একবারও ভাবি না- ফুটওভার ব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার আমার-আপনার শুধু দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই নয়, এটি সভ্যতার অংশ এবং আমাদের নিরাপত্তাও বিরাজমান। যে ফুটপাথে মানুষ চলাচল করবে, সেই ফুটপাথে আমি বা আমরা অনেকেই মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজের কর্তব্যবোধের জায়গাকে প্রশ্নবিদ্ধ করি। লালন করা অসভ্যতা আর বর্বরতাকে তুলে ধরি। শুধু তাই নয়, সেদিন রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ে ফুটওভার ব্রিজে প্রায় ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে দেখেছি, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে যে সব স্বেচ্ছাসেবক ছেলেমেয়েরা কাজ করছে, পথচারীরা তাদের রীতিমতো অপমান, অপদস্থ করেছে। কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছে না। একটি ব্যাপার মাঝে মাঝে আমাকেও অবাক করে তোলে। একজন অপরাধ করলে কতিপয় মানুষ পুরো বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে গেছে, এই দেশে আর থাকা যাবে না, এই দেশ আমার জন্য নয়, নোংরাদের দেশে সভ্যতার কোন মূল্য নেই ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে খুব হতাশ হয়ে পড়ে। খুব অল্পতেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। তখন ওই সব মানুষকে একটি প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার পরিবারের কী ভূমিকা ছিল? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আপনি কী ভূমিকা গ্রহণ করেছেন? দেশের ক্রান্তিলগ্নে আপনার উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ কী? এদের বলবো, এড়িয়ে চলার চেয়ে একটু দায়িত্ব গ্রহণ করুন। কিছুটা চ্যালেঞ্জ আপনিও নেন। শুধু সরকারের ওপর সব দায়িত্বভার তুলে দিয়ে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন যে, আপনি বাংলাদেশী হিসেবে কতটুকু যোগ্য? দেশ ও দশের জন্য আপনি কী অবদান রেখেছেন? কারণ, দেশটা তো আপনারও। আপনিও এদেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছেন। এদেশের আলো বাতাসে বড় হয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী আপনিও এ দেশের মালিক। এই মালিক হয়ে এই দেশটাকে সাজাতে কী কী কর্মকা- করেছেন- একবার হলেও নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। শুধু শেখ হাসিনার ওপর দায় চাপিয়ে বসে না থেকে আপনিও একটু দায়িত্ব নেন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সচেতন হলে, আমাদের পরিবারকে সচেতন ও শিক্ষিত করার দায়িত্ব নিলে- খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাদুঘরে চলে যাবে। দেশপ্রেমে আমাদের উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) [email protected]
×