ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে রেলের জমি নিয়ে দুই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের রশি টানাটানি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৮ এপ্রিল ২০১৮

চট্টগ্রামে রেলের জমি নিয়ে দুই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের রশি টানাটানি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলের জমি নিয়ে দুটি বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের রশি টানাটানিতে প্রতারণার ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে খোদ রেল কর্তৃপক্ষের। কারণ কেউ লাইসেন্স চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে আর কেউ ভুয়া তথ্যে দিয়ে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ইচ্ছামাফিক ভোগ দখলের চেষ্টা করে। প্রশ্ন উঠেছে, রেল পিএইচপিকে বিতর্কিত ভূমি বরাদ্দ না দেয়ার পরও কেন ব্যবহার বা দখলের চেষ্টা করছে। আবার কেএসআরএম কেন কৃষি ভূমিতে বাঁশের বেড়া না দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। সম্প্রতি বিভাগীয় ভূসম্পত্তি বিভাগের কানুনগো জায়গাটি পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট দাখিল করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৮ সালের জুনের পর থেকে যে কোন লেনদেন বা চুক্তিনামা কমপক্ষে তিনশ’ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে সম্পাদন করার নিয়ম রয়েছে। ফলে দেড়শ টাকার স্ট্যাম্প বর্তমানে আদালতে মূল্যায়ন যোগ্য নয়। আবার অক্ষরজ্ঞান জানা মানুষ কেন টিপসই দিয়ে পিএইচপিকে অধিকার হস্তান্তর করবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে পিএইচপির দেড়শ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে। আরও অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৮ সালের ৩০ জুনের পর ২০০৫ সালের ৩০ জুন দেড়শ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে পিএইচপি যে চুক্তিনামার তথ্য দিয়েছে তা অনিয়মতান্ত্রিক। তবে ১৯৯৮ সালের ৩১ জুলাই থেকে অদ্যাবধি তিনশ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বিভিন্ন চুক্তিনামা আদালত আমলে নিচ্ছে। এছাড়াও রেলের কৃষি লাইসেন্স গ্রহীতা নুরুল আলম অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন বাংলাদেশী নাগরিক। সে অনুযায়ী কেএসআরএমের কাছে হস্তান্তর করা ভূমি তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে আদালতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু পিএইচপি রেলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগে দাখিলকৃত আবেদনে ও জমাকৃত স্ট্যাম্পে নুরুল আলমের টিপসই দিয়ে রেলের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও রেলওয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত রেজা জনকণ্ঠকে জানান, নুরুল আলম কেএসআরএমকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে লাইসেন্স ও ভূমি ব্যবহারের অধিকার হস্তান্তর করেছে। মিউটেশনের মাধ্যমে লাইসেন্সি স্বত্ব হস্তান্তর করার বিধান রয়েছে। রেলের জমিতে স্থায়ী স্থাপনা বা বেড়া দেয়া লাইসেন্স শর্তের বহির্ভূত। জানা গেছে, সীতাকু- উপজেলার বাড়বকু-ের কাটঘর এলাকার ১০টি আর এস দাগ, ১২টি বিএস খতিয়ানে ২৬টি বিএস দাগের মোট ভূমির পরিমাণ ৭ দশমিক ৭৪ একর। এই ভূমি আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ (এল.এ) মামলা ২২৪/৬৩-৬৪ মূলে হুকুম দখল করে। যার নক্সা নং- সিই/এলপি/ডিএল/১৮। রেল হুকুম দখলেরর পর পূর্ববর্তী মালিকরা এ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করে মালিকানা স্বত্ব হস্তান্তর করেন। তবে পরে এই ভূমির মধ্যে স্থানীয় আব্দুল করিমের ছেলে নুরুল আলম এর অনুকূলে ১ দশমিক ৬৪ একর ভূমি রেল একসনা কৃষি লাইসেন্স প্রদান করে ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর। কেএসআরএমের পক্ষ থেকে জানা গেছে, নুরুল আলম গং ১৯৭৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর এই ভূমি কৃষি লাইসেন্সের মাধ্যমে রেলের কাছ থেকে ব্যবহারের অধিকার পায়। ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে আদলতের বিজ্ঞ বিচারক এই ভূমি কেএসআরএমকে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেছেন। কারণ রেলের বিধান অনুযায়ী লাইসেন্স হস্তান্তরে মিউটেশনের মাধ্যমে স্বত্ব বা অধিকার হস্তান্তর করা যায়। সীতাকু- উপজেলার বাড়বকু-ের কাঠঘর এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে নুরুল আলম কেএসআরএমের স্বত্বাধিকারী মৃত কবির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের মধ্যে ভোগ দখল স্বত্ব হস্তান্তর হয়। একশ’ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের (নং-কট-৭৬৮১১৯২-৯৩-৯৪) তিনটি স্ট্যাম্পে চট্টগ্রামে নোটারি পাবলিকের আদালতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও পিএইচপির অবৈধ হস্তক্ষেপ থেকে পরিত্রাণ পেতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এদিকে পিএইচপির পক্ষ থেকে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ৩০ জুন মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের নামে ৫০ টাকা মূল্যের তিনটি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে (নং-থ-৮৭৪৫১৬৫-৬৬-৬৭) সীতাকু- উপজেলার বাড়বকু-ের কাঠঘর এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে নুরুল আলমের কাছ থেকে টিপ সইয়ের মাধ্যমে ভোগ দখলের জন্য গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পাহাড়তলীর বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, কৃষি জমি ব্যবহারের লাইসেন্স গ্রহণের শর্তে লেখা রয়েছে কোন ধরনের স্থায়ী স্থাপনা বা বেড়া দেয়া যাবে না কৃষি ভূমিতে। পিএইচপি এর পক্ষ থেকে অত্র দফতরে ভূমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে পিএইচপির চীফ এস্টেট অফিসারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে অত্র দফতরে ত্রিপক্ষীয় শুনানিও হয়েছে। শুনানিতে আবেদনকারী ইকবাল হোসেনের পক্ষে পিএইচপির এস্টেট কর্মকর্তা আমির হোসাইন এই ভূমির কোন লাইসেন্স নেই বলে স্বীকার করেছেন।
×