ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষায় অনৈতিক প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসুন

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩০ মার্চ ২০১৮

পরীক্ষায় অনৈতিক  প্রতিযোগিতা  থেকে সরে আসুন

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বৃহস্পতিবার রাজধানীর দুটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ পাবলিক পরীক্ষায় সন্তানদের ‘এ প্লাস’ অর্জনে সহায়তার জন্য কোন অশুভ ও অসৎ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান। খবর বাসস’র। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনাদের পরীক্ষায় অসুস্থ ও অনৈতিক প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসতে হবে। অনৈতিক শিক্ষা কখনও সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’ প্রশ্ন ফাঁসের সাম্প্রতিক ঘটনায় কিছুসংখ্যক অভিভাবকের জড়িত হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিভাবকদের শুধুমাত্র তাদের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার ফলাফল দেখলেই চলবে না, তাদের নৈতিক অধঃপতনের কথাও ভাবতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য রাষ্ট্রপতি মনে করেন, ‘নৈতিক শিক্ষার অভাবেই বর্তমানে সমাজে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।’ রাষ্ট্রপতি ইউআইটিএসের কারিকুলামে ‘মোরাল এডুকেশন’ ও ‘এমারজেন্স অব বাংলাদেশ’ বিষয়ক বিশেষ কোর্স চালু করায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এতে নতুন প্রজন্ম আদর্শ ও মূল্যবোধের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ তিনি তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশের জন্য দক্ষ, যোগ্য ও উৎসাহী তরুণ সমাজ গড়ায় অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি দেশের সব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘দ্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট-২০১০’ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গুণগতমানের শিক্ষা, অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহয়োপযোগী সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।’ রাষ্ট্রপতি হামিদ দেশ ও জনগণকে ভুলে না যাওয়া এবং অন্যায় ও অসত্যের সঙ্গে আপোস না করার জন্য ¯œাতকদের পরামর্শ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তাদের উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে তোমাদের ডিগ্রীর মর্যাদা সমুন্নত রাখবে এবং কখনও ব্যক্তিগত মর্যাদা ও নৈতিকতা বিসর্জন দেবে না।’ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং কলামিস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান, ইউআইটিএসের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলাইমান, ইউআইটিএস ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও রাষ্ট্রপতির সচিবগণ এতে উপস্থিত ছিলেন। ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য, বিরোধ বৈষম্য ও অশুভ কর্মকা-ের জন্য নয় ॥ অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশ থেকে চরমপন্থা ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএপি) অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ সম্মিলিতভাবে নির্মূল করতে হবে। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জঙ্গীবাদের মতো অপশক্তিকে দেশ ও জাতির শত্রু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এসব অপশক্তি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে বিকৃতি ঘটায়। সকলকে মনে রাখতে হবে ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য, বিরোধ, বৈষম্য ও অশুভ কর্মকা-ের জন্য নয়। আবদুল হামিদ এ সময় দেশের দীর্ঘ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যে কোন মূল্যে বজায় রাখতে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের মানসিকতা ছাড়া কোন জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি সুখী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আপনাদের অবশ্যই দেশপ্রেম, দৃঢ় চেতনা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং পেশাদারিত্ব থাকতে হবে। এ সময় রাষ্ট্রপতি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের কথা উদ্যোগের সঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, দেশ এখনও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। তিনি বলেন, দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক, বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম, যথাযথ শ্রেণীকক্ষ, সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, পরীক্ষাগার, অবকাঠামো, সহায়ক পরিবেশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে ভাল সম্পর্ক এবং প্রশিক্ষণের সুবিধা সংক্রান্ত ঘাটতির কারণে কাক্সিক্ষত অর্জিত হয়নি। রাষ্ট্রপতি এ সময় শিক্ষা বাণিজ্য এবং শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে পরিণত না করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ‘ভিশন-২০২১’ অনুযায়ী একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতি আহ্বান জানান। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ইউএপির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী, ইউএপির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. কবির।
×