ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের আগেই সরকার পতনের চক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 নির্বাচনের আগেই সরকার পতনের  চক্রান্ত

শংকর কুমার দে ॥ সরকার যখন দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, অবাধ নির্বাচন দেয়ার চেষ্টার পথ খুঁজছে তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের চক্রান্ত শুরু করেছে পর্দার অন্তরালে থাকা একটি মহল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই কীভাবে সরকারের পতন ত্বরান্বিত করা যায় এমন ষড়যন্ত্রের ছক কষছে তারা। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দায়ে সাজা হওয়ার প্রতিবাদে নানা ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচীর আড়ালে নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে এগুচ্ছে দেশে-বিদেশে থাকা বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীর দোসর ও উগ্রপন্থী গোষ্ঠী। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেয়া এক প্রতিবেদনে এই ধরনের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুর্নীতির দায়ে আদালতে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজনৈতিক আন্দোলনের আড়ালে বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধপরাধীর দোসর ও উগ্রপন্থীদের সংগঠিত করে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দেয়ার চেষ্টা করাচ্ছে অদৃশ্য মহলটি। এই চক্র আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে তৈরি করছে নীলনক্সা। কিন্তু সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে এ ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকায় তা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অতীতে দেশের ভেতরে যত নাশকতা, নৈরাজ্য, জ্বালাও-পোড়াও করা হয়েছে তার খবর সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে অবহিত করার পর শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা হয়। এ জন্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলে পতন ঘটনানোর ছক ব্যর্থ হয়ে যায়। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার দাবি, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে নতুন করে বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আবারও বিশৃঙ্খলা এবং নাশকতার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে বিদেশের মাটিতে বসে। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে কথিত সতর্কবার্তা জারির জন্য যে ধরনের আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হয়, সেটিও অব্যাহত রেখেছে। সরকারের পতন ঘটানোর জন্য মাঠে নামানো হয়েছে বিরোধীদেরকেও। বিএনপি-জামায়াত মাঠের রাজনীতির নামে ওই ধরনের সরকার বিরোধীদের দিয়েই ককটেল বোমা নিক্ষেপ এবং জ্বালাও-পোড়াও করেছিল বিগত বছরগুলোতে। টানা ৯২ দিনের সেই জ্বালাও- পোড়াও সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে প্রতিহত করে। তারপর শুরু হয়েছিল হত্যাকা-। এসব হত্যাকা-ের নেপথ্যে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন কাজ করে। মূলত এ ধরনের হত্যাকা-ের গোড়ায় পরিকল্পনায় রাজনৈতিক শক্তির জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ পায় গোয়েন্দা সংস্থা। এদের মূল লক্ষ্যই হলো- দেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে হামলার মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ এবং বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোকে কীভাবে রুষ্ট করা যায়; এমন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে চক্রান্তকারীরা। দেশের ভেতরে বিদেশীদের হত্যা করানো, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি, শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার মাধ্যমে সরকারের পতন ত্বরান্বিত করার যে ব্যর্থ চেষ্টা চালায় জঙ্গীরা এর পেছনে যে শক্তি কাজ করে তারাই এখন দেশ-বিদেশে সক্রিয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা জানান, দেশের ভেতরে দুই বিদেশীকে খুন করানো, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে ও শোলাকিয়া ঈদগাহের মাঠে জঙ্গী হামলা, ব্লগার হত্যাকা-ের টার্গেট কিলিংগুলো ঘটানোর পর বিদেশীদের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপবাদ ও কুৎসা রটিয়ে পতন ঘটানোর চেষ্টার ছক কষা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা তৎপরতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ভেস্তে যায়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও ব্যাংকক, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন হোটেলে, বাড়িতে গোপন বৈঠক হওয়ার কথা ইতোমধ্যেই সরকারের নীতিনির্র্ধারক মহলকে অবহিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের মধ্যেও বিরোধী পক্ষের লোকজন ঢুকিয়ে গোপন খবর নিয়ে কোন অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতির দায়ে সাজা হওয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যখন লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন তখন ষড়যন্ত্রের নতুন মাত্রা পায় গোয়েন্দারা। লন্ডনে বসে একাধিক নেতা তার সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সব বৈঠকের পরিকল্পনার ষড়যন্ত্রমূলক তথ্যগুলো সরকার জেনে যায়। সরকারকে হটাতে কাদের সহযোগিতা নেয়ার চেষ্টা করছিল সরকারবিরোধীরা, সেই তথ্য জানতে পেরেছেন সরকারের লোকজন। যদিও বিএনপির পক্ষে বলা হচ্ছে, চিকিৎসার জন্য লন্ডন সফর করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু সরকারের কাছে সেই সফরের গোপন সব তথ্য চলে আসে মুহূর্তেই। লন্ডনে ওই সব বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তখন যারা ছিলেন তারা তো আছেই; তাদের বাইরেও কিছু নেতা গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন। সন্দেহের তালিকায় এমন ৭/৮ নেতার ওপর কঠোর নজরদারি আছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দারা। সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হোটেলে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও গোপন বৈঠক হওয়ার খবর তখন ঢাকায়ও চাউর হয়। ওই বৈঠকে তখন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান, জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও লন্ডন জামায়াতের কয়েক নেতা অংশ নেন বলে প্রচার পায় গণমাধ্যমে। চিকিৎসার নামে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে থাকার সময় রাজনৈতিকভাবে যে গোপন বৈঠক হয়েছে- ওই সব বৈঠকের বেশিরভাগ সময় সরকারের পতন ঘটানোর ছক করা সরকারকে বেকায়দায় ফেলে পতন ঘটাতে বিশেষ গোষ্ঠী অব্যাহত ষড়যন্ত্র করার নেপথ্যে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে এক হয়ে ক্ষমতায় যেতে দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত করছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×