ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ মেডিক্যালে সিটি স্ক্যান মেশিন বিকল ॥ দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ময়মনসিংহ মেডিক্যালে সিটি স্ক্যান মেশিন বিকল ॥ দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত সাত দিন বিকল হয়ে পড়ে আছে জরুরী সেবার সিটি স্ক্যান মেশিন। রেডিওলজি এ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের একমাত্র এই সিটি স্ক্যান মেশিনটি হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে রোগীরা। জরুরী রোগীদের বাধ্য হয়ে বেশি ফি গুনে হাসপাতালের বাইরের ল্যাব থেকে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। আর যাদের এই সামর্থ্য নেই তাদের রোগ নির্ণয়ের অভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। এ সময়ে রোগীদের মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। তবে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডাঃ লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার শনিবার জনকণ্ঠকে জানান, মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাওয়ার পাশাপাশি রোগ নির্ণয়ের এই মেশিনটি সচলে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সিটি স্ক্যান মেশিনের কক্ষের সামনে অনেক রোগীর ভিড়। কেউ বসে আছেন, কেউবা দাঁড়িয়ে। অনেকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এসব রোগীকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সিটি স্ক্যান পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালের ভেতর পরীক্ষা করাতে গিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে তাদের। কারণ সিটি স্ক্যান মেশিন বিকল। সংশ্লিষ্ট বিভাগের টেকনেশিয়ান ইনচার্জ গণেশ চন্দ্র বাড়ৈ জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন বিকল হয়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ রোগী আসছেন সিটি স্ক্যান পরীক্ষার জন্য। কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছে না। প্রচ- মাথাব্যথার সঙ্গে মারাত্মক রক্তক্ষরণ সমস্যা নিয়ে শেরপুর সদর থেকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন গৃহবধূ রোকেয়া বেগম। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের পরামর্শ ছিল জরুরী সিটি স্ক্যান পরীক্ষার। হাসপাতালের মেশিন বিকল থাকায় রোকেয়া দার দেনা করে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে বাইরের ল্যাব থেকে করাতে হয়েছে এই পরীক্ষা। হাসপাতালের মেশিন চালু থাকলে অনেক কম মাত্র ২ হাজার টাকায় এই পরীক্ষা করানো যেত বলে জানান রোকেয়ার স্বজনেরা। ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে অসহনীয় বুক ব্যথা নিয়ে একই দিন ময়মনসিংহ মেডিক্যালের করোনারি কেয়ার ইউনিট-সিসিইউতে ভর্তি হয়েছেন মোশাররফ হোসেন (৫৫)। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু বাইরের ল্যাবে ৩/৪ হাজার টাকা দিয়ে এই পরীক্ষা করানোর সামর্থ্য নেই কৃষক মোশাররফের। ফলে গত সাত দিনেও মোশাররফের রোগ নির্নয় না হওয়ায় কার্যত চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। মেশিনটি বিকল থাকায় একদিকে ভোগান্তিসহ মরণাপন্ন রোগীদের বাইরের ল্যাবে যেতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, গুনতে হচ্ছে বেশি টাকার ফি। অন্যদিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যালের সিটি স্ক্যান মেশিন থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সিটি স্ক্যান মেশিন থেকে প্রতিদিন ৫০টি পরীক্ষা করানোর সক্ষমতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, স্ট্রোক করা রোগীদের প্রথমেই প্রয়োজন পড়ছে সিটি স্ক্যান পরীক্ষার। কিন্তু মেশিন নষ্ট থাকায় গরিব রোগীদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বাইরে থেকে এই পরীক্ষা করাতে হয়। এটা রোগী ও স্বজনদের জন্য কষ্টসাধ্য। একাধিক মেশিন স্থাপনের দাবি করেছেন চিকিৎসকরা। ময়মনসিংহ মেডিক্যালের হৃদরোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ এস কে অপু জানান, হাসপাতালে একাধিক সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করা গেলে গরিব রোগীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে। রোগ নির্ণয়সহ দ্রুত চিকিৎসাসেবা প্রদানও সহজ হবে।
×