ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেবার মাধ্যমে ব্যথাহীন মৃত্যু নিশ্চিত করা সম্ভব

দেশে কয়েকটি প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দেশে কয়েকটি প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা

নিখিল মানখিন ॥ সমন্বিত উদ্যোগে বড় পরিসরে দেশে বেশ কয়েকটি প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে সরকার। বর্তমানে দেশে পূর্ণাঙ্গ প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেন্টার নেই। পাইলট প্রকল্প হিসেবে সীমিত পরিসরে দেশের একমাত্র প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে সাড়ে তিন কোটি মানুষের মৃত্যুপূর্ব ব্যথামুক্তি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশেও এমন রোগীর সংখ্যা অনেক। ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল ও অনিরাময়যোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু শয্যায় থাকে দেশের প্রায় ছয় লাখ মানুষ। তাদের ব্যথার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার দেয়া সম্ভব। এমন রোগীরা মৃত্যুপূর্ব একটা দীর্ঘসময় ভুগতে হয় অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায়। মৃত্যু এসে মুক্তি দেয় তাদের। অথচ অতি অল্প প্রশিক্ষণেই সেবা ও সহযোগিতা দিয়ে এ ধরনের রোগীর ব্যাথাহীন মৃত্যু নিশ্চিত করা সম্ভব। একজন রোগীর মৃত্যুপূর্ব যন্ত্রণা প্রশমিত কাজে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার হ্রাস করতে পারে নিরাময়-অযোগ্য রোগে আক্রান্ত অন্তিম শয্যায় শায়িত রোগীদের শারীরিক বেদনা। জোগাতে পারে মানসিক সমর্থন, স্বস্তি ও বাস্তবকে মেনে নেয়ার শক্তি, আধ্যাত্মিক শান্তি। আর সেই সঙ্গে রোগীর পরিবারের জন্যও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি তাদের জীবনে নতুন দিন আনে না; কিন্তু তাদের প্রতিটি দিনে যোগ করে নতুন জীবন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান বলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার স্বাস্থ্যসেবা এমন একটি ক্ষেত্র, যার প্রয়োজনীয়তা বর্তমান বছরগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি এমন একটি উদ্যোগ যা জীবন সংশয়ী রোগে আক্রান্ত রোগী এবং তাদের পরিবারের জীবনের মানোন্নয়ন করা, যা প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ এবং দক্ষ নির্ণয়ের মাধ্যমে ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ সমূহের চিকিৎসা এবং শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক সমস্যাগুলোর সমাধান দিয়ে থাকে। উপাচার্য আরও বলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার রোগী এবং রোগীর পরিবারের ব্যথা নিরাময়, উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ, মানসিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদানে জোর দিয়ে থাকে। এটি বিভিন্ন ধরনের রোগের শেষ পর্যায়ে যেমন, হৃদপি-, ফুসফুস, বৃক্ক এবং যকৃত ও ক্যান্সার রোগীদের কষ্ট হতে মুক্তি প্রদানে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। প্যালিয়েটিভ সেবার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয় বিষয়ে তুলে ধরে সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রকল্পের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মাধ্যমে হাতে কলমে শেখানো হবে প্রান্তিক রোগীদের ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ, উপযুক্ত কথোপকথন এবং সার্বিক সেবার বিভিন্ন বিষয়। চিকিৎসাসেবা কর্মীরা নিরাময় অযোগ্য রোগীদের যে গভীর কষ্ট এবং দুর্দশা পর্যবেক্ষণ করেন, তার যথাযথ যতœ নেয়া প্রয়োজন। আমরা আশা করি, তাদের দক্ষতা শুধুমাত্র ব্যথা কমানো নয়, বরং এর গভীরে কী হচ্ছে, তা কিভাবে বর্ণনা করতে হবে এবং রোগী ও তার পরিবারকে কিভাবে আশা যোগাতে হবে সে ক্ষেত্রেও দক্ষতা বাড়ানো দরকার। তিনি আরও বলেন, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম আরোগ্য-নির্ভরতার সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে নতুন আশার সম্ভাবনা নিয়েই এগিয়ে এসেছে ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ অথবা ‘প্রশমন সেবা’র দর্শন। যখন কোনও রোগীর রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়, তখন তার রোগ সংক্রান্ত উপসর্গগুলো নিরাময় বা সুরাহা করাকে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বলে। সমাজসেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি যথাযথ সম্মেলনে কতিপয় উন্নয়নশীল দেশে যে ‘কমিউনিটি প্যালিয়েটিভ কেয়ার’-এর ধারণা গড়ে উঠেছে, তা বাংলাদেশেও বহু পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন হয় সেসব রোগীদের যাদের দীর্ঘমেয়াদী স্নায়ুরোগ। যেমন- স্ট্রোক, প্যারালাইসিস আছে। অথবা যারা এইডস বা ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত। যেসব রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। কিন্তু এসব রোগের উপসর্গগুলোর অন্যতম হচ্ছে তীব্র ব্যথা, যা অনেক কষ্টকর। এ রোগীরা যেহেতু জানতে পারে সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই তার মানসিক কষ্টও কম নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা শারীরিকভাবে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন। অধ্যাপক ডাঃ নিজাম উদ্দীন আরও বলেন, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কষ্ট লাঘব করে চিকিৎসাসেবা এবং সহানুভূতি ও মমতার সমন্বয়ে রোগীকে পরিচর্যা করাই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের লক্ষ্য।
×