ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জোড়ামাথার যমজ শিশু ঢাকা মেডিক্যালে, অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জোড়ামাথার যমজ শিশু ঢাকা মেডিক্যালে, অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ যমজ দুই বোন রাবেয়া-রোকাইয়া ইসলাম। তাদের দুজনের হাত, পা ও মুখম-ল আলাদা হলেও জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে শিশু দুটি। বিগত বছরের নবেম্বরের শেষের দিকে এ শিশু দুটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে দীর্ঘ এক মাস ভর্তি থাকার পর চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়ি ফিরেছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাবেয়া-রোকাইয়া পুনরায় ঢামেকে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ঢামেকের ৬১২ নম্বর কেবিনে ভর্তি আছে ১৮ মাস বয়সী পাবনার জোড়া লাগানো মাথার যমজ শিশু রাবেয়া ইসলাম ও রোকাইয়া ইসলাম। মঙ্গলবার প্রথম দফায় তাদের জোড়া মাথায় অস্ত্রোপচার হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাদেরকে আবার ঢামেকে আনা হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে জানান এই শিশু দুটির বাবা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘২৬ ফেব্রুয়ারি বিদেশ থেকে কয়েকজন চিকিৎসক আসবেন। তারা এসে আমার মেয়েদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এজন্যই এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাবেয়া বা রোকাইয়ার শারীরিক কোন জটিলতা নেই। তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে। তবে তাদের মাথা জোড়া লাগানো। আর ওরা দু’জন যত বড় হচ্ছে তাদের মাথার আকৃতিও বড় হচ্ছে।’ শুক্রবার দুপুরে ঢামেকের কেবিনে গিয়ে দেখা গেল, রাবেয়া ও রোকাইয়া বিছানায় বসে হাতে ঝুনঝুনি নিয়ে খেলছে। তাদেরকে ধরে বসে আছেন মা। এ দুটি শিশু হাঁটি হাঁটি পা করে হাটতে জানে। তবে তাদের শরীরের চেয়ে মাথার ওজন বেশি হওয়ায় কারও সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারে না। বাড়ন্ত এ শিশু দুটি শুধু হাঁটতে চায় বলে জানালেন মা তাসলিমা। রাবেয়া-রোকাইয়া দুজনেই স্বাভাবিক খাবার খেয়েই বড় হচ্ছে। তারা শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মাথা জোড়া হওয়ায় তাদের বাবা মায়ের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। তারা তাদের সন্তানদেরকে আলাদা দেখতে চান বলে জানালেন মা তাসলিমা বেগম। রাবেয়া ও রোকাইয়ার বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘জন্মের পর থেকে এ দুটি শিশু পিজি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তখনই তাদের সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তাদের মতো করে চেষ্টা করেছেন এতদিন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশানুযায়ী মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশুকে গত বছরের নবেম্বরে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল ঢামেকে। এরপর থেকে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সোমবার জার্মানি ও হাঙ্গেরী থেকে কয়েকজন চিকিৎসক আসবেন। তারা আসার পর এই দুই জমজ শিশুকে পরীক্ষা করা হবে তারপর মঙ্গলবারই হয়ত আমরা প্রথম দফা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ব্রেইনের ব্লাড সাপ্লাইয়ের পরীক্ষা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওদের ব্রেইনে ব্লাড সাপ্লাই ঠিকঠাক হচ্ছে কি-না বোঝার জন্যই এ অস্ত্রোপচার করা হবে। ব্রেইনে ব্লাড সাপ্লাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওদের বিষয়টা খুবই জটিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ওদের চিকিৎসায় আমরা সব ধরনের চেষ্টা করছি। বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি ও জোগাড় করা হচ্ছে। তাদেরকে সুস্থ করে তুলতে নিউরো সার্জনদের দায়িত্ব অপরিসীম। প্রথম অস্ত্রোপচারের পরই জানা যাবে তাদের মাথা আলাদা করা সম্ভব কি-না!’ পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের মাথা জোড়া লাগা এ দুটি যমজ কন্যাশিশুকে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গত ২১ ফেব্রুয়ারি শিশু দু’টির বাবা রফিকুল ইসলাম ও তার মা তাসলিমা বেগম তাদের ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগে জোড়া লাগানো দুটি মেয়ে শিশুকে গত ২২ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু দুটির চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর তাদের ঢামেকে আনা হয়। চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামের স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম যমজ এ শিশু দুটির বাবা। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ‘রাবেয়া ও রোকাইয়াসহ আমার তিন সন্তান। বড় মেয়ের বয়স ৬ বছর। প্রথম কন্যা সন্তানের পর গত বছর পাবনা শহরের একটি ক্লিনিকে মাথা জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম হয় রাবেয়া-রোকাইয়ার। জন্মের ৫ দিন পরই আমরা শিশু দুটিকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু চিকিৎসকরা সব সময় অপেক্ষা করতে বলেছেন। পাশাপাশি চিকিৎসা চলেছে। এরপর থেকে এক দুই মাস পর পরই আমরা ঢাকায় এসে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছি। এবং তারা আশ্বাস দিয়েছেন শিশুদের অপারেশনের বিষয়ে। এবার ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এলাম ওদেরকে। আশাকরি ভাল হয়ে উঠবে আমার মেয়েরা। কারণ প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়েদের চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।’ জানা গেছে, গত বছরের ১৫ জুলাই তাসলিমা বেগম পাবনার পিডিসি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গেলে আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে তারা জানতে পারেন শিশুদের মাথা বড়। তবে তখনও তারা জানতে পারেননি তাদের যমজ শিশুর মাথা জোড়া। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১৬ জুলাই তারা সিজার করান। পাবনা সদর এলাকায় একটি হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে রাবেয়া ও রোকাইয়া যমজ দুই বোন জন্মগ্রহণ করে।
×