ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মরুভূমিতেও চাষ উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবন করতে হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০০:৫১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মরুভূমিতেও চাষ উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবন করতে হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় মরুভূমিতেও চাষ উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবন করতে হবে। ভবিষ্যতে যতোই কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক, দেশের প্রয়োজনে সেই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করে ফসল ফলানোর চ্যালেঞ্জ আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের নিতে হবে। এজন্য বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও রোগবালাইসহ প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল ধানের জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কম পানিতে বেশি ধান উৎপাদন এবং উত্তরাঞ্চল কেন্দ্রিকতার পরিবর্তে ধান চাষাবাদকে দক্ষিণাঞ্চল কেন্দ্রিক করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, আমি কিন্তু কম স্বাদে বলেনি উত্তর থেকে দক্ষিণে যেতে। ভ’গর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নামছে। এভাবে চলতে থাকলে উত্তরাঞ্চলে পানি নির্ভর চাষাবাদ ব্যাপক ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। এতো পানি খরচ করে কতোদিন বোরো করবো তা চিন্তা করতে হবে। আমি আগে বলতাম লবণের বাটিতে ধান চাই, এখন আমি বলছি মরুভূমিতেও ধান উৎপাদন চাই। অর্থাৎ সবচেয়ে কম পানিতে বেশি ফলন দেয় এমন ধানের জাত আমরা চাই। শনিবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০১৬-১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠাণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গাজীপুরের প্রধান কার্যালয়ে ৫দিন ব্যাপী শুরু হওয়া এ কর্মশালা শেষ হবে আগামী বৃহস্পতিবার। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রয়োজন কি, দেশের প্রয়েজনে তা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কম পানিতে কিভাবে বেশি ধান উৎপাদন করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। পানির অর্থনীতি নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আগে শুধু বোরো জাত উদ্ভাবনের উপর গুরুত্ব দেয়া হতো। বর্তমানে আউশ ও আমনের উপর জোর দিচ্ছি। বোরো কিন্তু ইনকিউবেটর বেবি। বোরো উৎপাদনে পানির খরচও বেশি। এসময় ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনের আহবান মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, গত মৌসুমে শুধু বন্যার পানিই যে ফসল উৎপাদনে ক্ষতি করেছে তা নয়, ব্লাস্ট রোগেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। যেখানে ৫০ মন করে ধান হতো, সেখানে তা ৪০ মনে নেমে এসেছে। সব জায়গায় এ ক্ষতি হয়নি, তবে কিছু জায়গায় হয়েছে। এতে মোট উৎপাদন কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। তাই ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনে জোর দিতে হবে। এব্যপারে আমি কোন অজুহাত শুনতে চাই না। এসময় তিনি ব্রি উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতি কেন মাঠ পর্যায়ে কেন সমাদৃত হচ্ছে না সেদিকেও বিজ্ঞানীদের নজর দিতে বলেন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে গত নয় বছরে চারটি হাইব্রিডসহ আউশ, আমন ও বোরো ধানের সর্বমোট ৪০ টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। শুধুমাত্র গত বছরেই প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল এবং উন্নত পুষ্টি গুণ সম্পন্নসহ ব্রি ১০ টি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে, যা ব্রি’র ইতিহাসে মাইলফলক। তিনি বলেন, ধানের জাত উন্নয়নে আমরা আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। বর্তমানে আমাদের জিংক ব্যাংকে ৯৫০ ধরণের বিদেশী জার্মপ্লাজম সংরক্ষিত আছে। চীন থেকে প্রাপ্ত ৪১ টি উচ্চফলনশীন আউশ ধানের কৌলিক সারির গবেষণা চলছে। এছাড়াও খরা সহনশীল ৪৫২ টি কৌলিক সারি নিয়ে ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয় রাজশাহী ও কুষ্টিয়ায় গবেষণা চলমান রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবির ইকরামুল হক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মহসীন। এতে বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনার নানা তথ্য তুলে ধরে ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১৬-১৭’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি'র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তমাল লতা আদিত্য। ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনছার আলী এতে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় ব্রি, বারি, বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। কর্মশালার কারিগরী অধিবেশনগুলোতে গত এক বছরে ব্রি’র ১৯টি গবেষণা বিভাগ ও নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সামনে তুলে ধরা হবে।
×