ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ মায়ের মুখের ভাষাটিও কেড়ে নিতে চেয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানীরা। বাঙালী বাংলা ভুলে যাবে। কথা বলবে উর্দুতে। এমন অবাস্তব চিন্তা নিয়ে দিব্যি এগোচ্ছিল শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু সফল হয়নি তারা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বুকের রক্ত দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়েছিল বাঙালী। বুধবার সেই ইতিহাসের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করল জাতি। সারা দেশের মতো ঢাকায়ও ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা। একুশের প্রথম প্রহরে মানুষের ঢল নেমেছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। একসময় ভাষাশহীদদের স্মরণে কালো রঙের ব্যাজ ধারণ করতেন সবাই। এখন সেটি কালো পোশাকে পরিবর্তিত হয়েছে। আছে সাদা রঙের মিশেল। অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল রঙে ভাই হারানোর বেদনাকে ধারণ করেছিল ঢাকাবাসী। নারী পুরুষ এমনকি ছোট্ট শিশুটি একুশের রং গায়ে মেখে শহর ঘুরে বেড়িয়েছে। তবে দৃশ্যমান রঙের চেয়ে মনের ভাব ও ভাষা বেশি মুগ্ধ করে রেখেছিল। অবশ্য ২১ ফেব্রুয়ারি এখন শুধু বাঙালীর নয়। সারা বিশ্বের। ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে হিসেবে পৃথিবীর বহু দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। অর্জনের এই আনন্দও ছিল সকলের চোখে মুখে। ২১ ফেব্রুয়ারি গত হলেও, চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই নিয়ে বিশাল আয়োজন। মাসের শেষ দিন পর্যন্ত চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ২২তম দিন। বিভিন্ন বয়সী পাঠকের আগমনে মুখরিত ছিল মেলা। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৩টি। বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বেশকিছু বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ‘পাগলা গারদে দুই বৎসর’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। ডাঃ মোহাম্মদ হোসেন গাঙ্গুলীর লেখা বই পাঠের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবনে, ১৯৫০ সালে প্রথম এই বইটি পাঠ করেছিলাম। তখন এটি খুব আলোচিত গ্রন্থ। অনেকেই পড়েছেন। আমিও পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। বহু বছর পর আবারও প্রকাশিত হওয়ায় নতুন প্রজন্মের পাঠকও চমৎকার রচনাটির স্বাদ নিতে পারবেন। লেখকের পরিবারের পক্ষে তার নাতনি শহানাজ আহমেদ বলেন, লেখক অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু দেখেছেন। সেই দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বই লেখা। রাঁচি ইন্ডিয়া মেন্টাল হসপিটালে দুই বছর কর্মরত অবস্থায় যে অভিজ্ঞতা হয়, তাই বইতে লেখার চেষ্টা করেছেন ডাঃ মোহাম্মদ হোসেন গাঙ্গুলী। বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জেব্রা ক্রসিং। মেলায় আসা কয়েকটি নতুন বইয়ের কথা বলা যাক এবার। পাঞ্জেরী থেকে এসেছে ইউনুস এমরের কবিতা। অনুবাদ করেছেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অ্যাডর্ন থেকে প্রকাশিত হয়েছে মাস্টারদা সূর্যসেনের প্রেমআখ্যান ‘পুষ্পকুন্তলা তুমি।’ লিখিছেন আতা সরকার। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে স্মৃতিকথা ‘আমলাতন্ত্রের অন্দরমহলে বত্রিশ বছর।’ লিখেছেন সিরাজ উদ্দিন সাথী। তবারক হোসেনের ‘একরাত্রি’ প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। সাহিত্য প্রকাশ থেকে এসেছে ‘আধুনিক রুশ গল্প।’ অনুবাদ করেছেন ইলা মিত্র। এদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী ‘দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক সাহিত্য’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। এটিও বাংলা একাডেমির উদ্যোগ। সকালে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. ফকরুল আলম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের অনুবাদক ও গবেষক রাধা চক্রবর্তী। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আজ শুক্রবার শেষ হবে সম্মেলন।
×