ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সমালোচনার মুখে শিক্ষা ক্যাডারের আলোচিত ৩২ কর্মকর্তা বদলি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সমালোচনার মুখে শিক্ষা ক্যাডারের আলোচিত ৩২ কর্মকর্তা বদলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় কর্মরত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের আলোচিত ৩২ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন জেলায় বদলি করেছে সরকার। তবে ঢাকায় দু’বছর হয়নি-এমন দু’জন কর্মকর্তাকেও শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে, যারা অতীতে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বৃহস্পতিবার এ আদেশ জারি করা হয়। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক, উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক; ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ও বিদ্যালয় পরিদর্শক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রয়েছেন। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, লক্ষ্মীপুর, খুলনা, যশোর, কিশোরগঞ্জ, ভোলা, সিলেট, জয়পুরহাট, ফেনী, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, বগুড়া, বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুরের বিভিন্ন কলেজে পাঠানো হয়েছে। ৩২ জন কর্মকর্তাকে বদলি করে বৃহস্পতিবার আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) এসব কর্মকর্তাকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত নিজ বেতন ও বেতনক্রমে পাশে বর্ণিত পদ ও কর্মস্থলে বদলি করা হলো। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে চলমান এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ব্যবস্থা নিল। তাদের মধ্যে পদোন্নতিজনিত কারণে বদলি হয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-সচিব নাজমুল হক এবং কলেজ অধ্যাপক ড. আশফাকুস সালেহীন ও বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক এটিএম মঈনুল হক। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দু’জন কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেফিরে ঢাকায় পোস্টিং টিকিয়ে রেখেছিলেন। তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। ক্ষমতার প্রভাব খাটানো, ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে খুব শীঘ্রই আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করার প্রক্রিয়া চলছে। মাউশির পরিচালক (মনিটরিং এ্যান্ড ইভালুয়েশন উইং) ড. মোঃ সেলিম, উপ-পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) ফজলে এলাহী, উপ-পরিচালক (কলেজ-২) মেসবাহ উদ্দিন সরকার, উপ-পরিচালক এসএম কামাল উদ্দিন, উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী বদলি করে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ড. মোঃ সেলিম ও কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কাজে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের নামে ইচ্ছেমত বিল-ভাউচার বানিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-৪) জাকির হোসেন, উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) খ ম রাশেদুল হাসান এবং সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকেও বদলি করেছে সরকার। তাদের মধ্যে জাকির হোসেন ও মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন মাউশিতে পদায়নের দু’বছরও হয়নি। তারা দু’জন অতীতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। তারা বিসিএস ২৪তম ফোরামের গ্রুপিংয়ের শিকার বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাসুদা বেগম, কলেজ উপ-পরিদর্শক মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ (শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এপিএস) এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অদ্বৈত কুমার রায়কে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে। আর এনসিটিবির সম্পাদক দিলরুবা আহমেদ, বিশেষজ্ঞ ফাতেমা নাসিমা আক্তার, বিশেষজ্ঞ মনিরা বেগম ও শাহীনারা বেগম, এনসিটিবির গবেষণা কর্মকর্তা মারুফা বেগম, মোঃ হাবিবুল্লাহ ও মোহাম্মদ শাহ আলম এবং উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আব্দুল মজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক কাওসার হোসেনকে বদলি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই দিনে অপর এক আদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) খুলনা অঞ্চলের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা উপপরিচালক টিএম জাকির হোসেনকে বদলি করে নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার ও ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর মন্ত্রণালয়, মাউশি ও শিক্ষা বোর্ডে বদলি আতঙ্ক শুরু হয়।
×