ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:২৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ পদ্মা বিধৌত রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের বিশাল জনসমুদ্রে দাড়িয়ে নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন। দেশের উন্নয়নের ধারা যাতে অব্যাহত থাকে, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নৌকায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বিশাল জনসমুদ্রের লাখো জনতা দুই হাত তুলে নৌকায় ভোট দেয়ার ওয়াদা করেন। প্রধানমন্ত্রী দৃপ্তকন্ঠে বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা দেশকে উন্নয়ন করবো। ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে তুলেবো। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসমুদ্রে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয় আর বিএনপি জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিন খেলে। দেশের মানুষ এখন শান্তিতে আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, সরকার অবহেলিত এলাকার উন্নয়ন করছে। আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করতে পারে। উন্নয়ন করে। আর বিএনপির লক্ষ্য শুধু লুটপাট। তারা উন্নয়ন করতে পারে না। বোমাবাজি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে মানুষ নির্ভয়ে চলতে পারতো না, ঘর থেকে বের হতে পারতো না। রাজশাহীকে তারা ত্রাসের নগরীতে পরিণত করেছিল। তাদেরই সৃষ্টি বাংলাভাই। বিএনপি সরকার আমলে তাদের ক্যাডাররা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। বিএনপির সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিভাবে মানুষ কষ্ট করেছে আমরা দেখেছি। এই রাজশাহীতে তারা আপনাদের দিয়েছিলো লাশের উপহার। আগুন দিয়ে যারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে, তারা জনগনের জন্য কিছুই করতে পারে না। বিএনপি চোরের জন্য আন্দোলন করছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করে। কিসের আন্দোলন? টাকা চুরি করে তাদের নেত্রী জেলে গেছেন। তারা চোরের জন্য আন্দোলন করছে। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করেছেন বলেই আজ তাকে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন ‘খালেদা কারাভোগ করছেন। ১৯৯১ সালে এতিমখানা করবে বলে বিদেশে থেকে টাকা এনেছেন। সেই এতিমখানা কই? এতিম কই? এতিমদের নামে টাকা এনে ওই টাকা নয়-ছয় করে লুটেপুটে খেয়েছেন। লুট করা, চুরি করা তাদের চরিত্র। ২৭ বছরে এতিমের টাকা সুদে-আসলে বেড়েছে, তা খেয়েছেন খালেদা জিয়া আর তার দলের লোকজন। এতিমের কোনও কাজে লাগেনি। তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। লুটপাট করে খেতে পারে। কেউ এতিমের টাকার লোভ সামলাতে না পারলে দেশের মানুষকে দেবেটা কী? রাজশাহীবাসীদের উদ্দেশ্যে আ’লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আমরা আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে আসি। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কী করেছিল? তারা আপনাদের দিয়েছিল লাশ উপহার। মা- বোনদের করেছিল বিধবা। রাজশাহীকে সন্ত্রাসীদের নগরীতে পরিণত করেছিল। সৃষ্টি করেছিল বাংলা ভাই। এখানে ছিল সন্ত্রাসী বাংলা ভাইয়ের অভয় অরণ্য। আমরা উপহার দিই স্বস্তি। মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে। আর বিএনপি উপহার দেয় লাশ। মানুষ খুন করা তাদের কাজ। আমরা উন্নয়ন করি। তারা ধ্বংস করে। আমরা রাস্তা বানাই, তারা কেটে ফেলে। মানুষ পুড়িয়ে যারা হত্যা করে, তারা মানুষের কী মঙ্গল করতে পারে? ’রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাসিকের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশাল এ জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগনের জন্য কাজ করে। তিনি সভার শুরুতেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বাহান্ন ও একাত্তরের বীর শহীদদের। এছাড়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আপনাদের জন্য উপহার এনেছি। আমরা ক্ষমতায় আসার পর কী কী কাজ করেছি, ইতোমধ্যে আপনারা অনেক কাজ পেয়েছেন। অনেকগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি, বাকি যেগুলো কাজ আমরা শুরু করতে যাচ্ছি সেগুলোর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছি। তিনি বলেন , আপনারা জানেন বাংলাদেশে কোন মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় ছিল না, আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করে। রাজশাহীতেও মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জামায়াত যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন কি দিয়েছে? এই রাজশাহীকে করেছিল তারা সন্ত্রাসের নগরী। সৃষ্টি করেছিল বাংলা ভাই। ২০০১ এ ক্ষমতায় আসার পর এই বিএনপি এখানে যে অত্যাচার করেছিল আপনাদের এখনও মনে আছে। বিএনপি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই এলাকায় কিভাবে মানুষ কষ্ট পেয়েছে। এই বিএনপির লোকেরা ছয় বছরের বাচ্চা শিশুকে গ্যাং রেপ করেছিল। কারণ তার বাবা-মা আওয়ামী লীগ করত। এই বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইউনুস এবং ড. তাহেরকে হত্যা করেছিল। জোট সরকারের আমলে আমাদের আওয়ামী লীগ নেতা আযহার মেম্বার, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল বাকি, সাদেক আলীসহ রাজশাহীর বিভিন্ন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আপনাদের দিয়েছিল লাশ উপহার, সৃষ্টি করেছিল বিধবা আর পিতাহারা সন্তান। এই রাজশাহীতে আমাদের ছাত্রলীগ নেতা রুস্তম আলী আখন্দ, রবিউল ইসলাম রবি, যুবলীগের শামসুল আলম বিএনপি-জামায়াত নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। শিবির ক্যাডাররা হাত পায়ের রগ কেটেছিল যুবলীগ নেতা আনোয়ার ইসলামকে। ২০১০ সালে শিবির ক্যাডাররা রাবির ছাত্র ফারুককে মেরে ডাস্টবিনে ফেলে রেখেছিল। এই বাংলা ভাইয়ের হাতে আবুল কাইয়ুম বাদশাকে মেরে বাসার সামনে উল্টো ঝুলিয়ে রেখেছিল। বিএনপি-জামায়াতের আমলে এই এলাকা ছিল জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। এখানে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারতো না। এরকম এক অবস্থা সৃষ্টি করেছিল দেশব্যাপি। উন্নয়ন তারা করতে পারে নাই। কি পেরেছে বোমাবাজি। একই দিনে পাঁচশ জায়গায় বোমা হামলা করেছিলো। এই ভাবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলো। পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ২০১৪, ১৫, ১৬ পরপর এই তিন বছর তাদের তান্ডবে প্রায় ৫০০ মানুষকে তারা পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা গাড়ি পুড়িয়েছে। ২৯ টি লঞ্চে আগুন দিয়েছে। রেল লাইন তুলে দিয়ে মানুষ হত্যার চেষ্টা করেছে। তারা রেল লাইন ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার এসে আবার রেল লাইন চালু করেছে। সরকারি অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াত। তারা (বিএনপি) বিদ্যুৎ দিতে পারে না, বিদ্যুতের টাকা লুটপাট করেছে। আর অপর দিকে আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে তারা বিদ্যুত কেন্দ্র পুড়িয়েছে, কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারকে আগুনে ফেলে পুড়িয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে মানুষ মারা তাদের কাজ ছিলো। আপনার দেখেছেন রাজশাহীর রাস্তায় তারা কিভাবে পুলিশ মেরেছে। এই বিএনপি মানুষের কল্যাণ করতে পারে না, তারা লুটপাট করে। আপনারা জানেন, বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হয়েছে। কেন হয়েছে? এতিমের টাকা। ৯১ সালে এতিমখানা তৈরি করবে বলে বিদেশ থেকে টাকা এনেছে। কিন্তু এতিমখানা কই? কেউ এতিমখানার ঠিকানা জানে না। তারা এতিমখানার টাকা নয়-ছয় করে খেয়েছে। আজ প্রায় ২৭ বছর পর তার বিনিময় সুদে আসলে পেয়েছে। এতিমের টাকা এতিমের হাতে যায়নাই, সেটাকা লুট করেছে তারা। সেই মামলা দিয়েছে তত্বাবধায়ক সরকার। সেই মামলায় তার সাজা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে। তাদের জন্য পাঁচ পাঁচ বার বাংলাদেশ বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার ছেলে যে ঘুষ খেয়েছে, চুরি করেছে এটা তারাই বলেছে। তার আরেক ছেলে টাকা পাচার করেছে। এই দেশের টাকা জনগণের কাজে লাগেনি। বিদেশে পাচার করেছে। সেই পাচার করা টাকা আমরা ফেরত এনেছি। সেটার জন্য আবার তারা আন্দোলন করেছে। তাদের নেত্রী টাকা চুরি করে জেলে গেছে। তাদের এখন আন্দোলন চোরের জন্য। তারা ২৭ বছরে এতিমের টাকা এতিমকে দিতে পারে নাই। এতিমের টাকা সুদে আসলে খেয়েছে খালেদা জিয়া ও তার পরিবার। সেই টাকা তার নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। সেটার জন্য সে সাজা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের জন্য কাজ করে। আপনারা জানেন তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জাতির পিতার নামে ট্রাস্ট করেছি। প্রায় আঠারশ শিক্ষার্থী, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত এবং আমাদের দুস্থ নেতাকর্মীদের জন্য সাহায্য দিয়ে থাকি। ওই তত্বাবধায়ক সরকার তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে, কোন অনিয়ম পায়নি। আমি বলেছিলাম ভালোভাবে তদন্ত করে দেখেন। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি, জনগণের সম্পদ কেড়ে খেতে না। আমরা দুই বোন, আমাদের বাবা-মা সব হারিয়েছি, আমাদের সম্পদ ও পৈত্রিক সূত্রে যে বাড়ি পেয়েছি সেটা জনগণকে দিয়েছি। যে অর্থ পেয়েছি সেটা ট্রাস্ট করে এদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা বৃত্তি দিচ্ছি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। আমরা তো এতিমের টাকা মেরে খাইনি, বরং মানুষকে দিয়েছি। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি, উন্নয়ন করি, তারা ধ্বংস করে। আমরা গাছ লাগাই, তারা গাছ কেটে ফেলে, রাস্তা বানাই, তারা রাস্তা কেটে ফেলে। হাজার হাজার বাস ট্রাক পুড়িয়ে জ্বালিয়ে শেষ করে দিয়েছে। সিএনজিতে ড্রাইভারকে আটকে পুড়িয়েছে। মানুষকে পুড়িয়ে যারা হত্যা করে তারা মানুষের কি কল্যাণ করতে পারে? আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। আজ আমরা বিধবা ভাতা দিচ্ছি, বয়স্ক ভাতা দিচ্ছি, সদ্য প্রসূতি মাকে ভাতা দিচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছি। আমরা যেখানে জনগণের কল্যাণে কাজ করছি, সেখানে তারা জনগণের সম্পদ লুটে খাচ্ছে। দুই কোটি তিন লক্ষ শিক্ষার্থীকে আমরা প্রতিমাসে বৃত্তি দিচ্ছি, একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত। আপনাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য আমরা বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। বই কেনার জন্য আপনাদের খরচ করতে হয়না, খরচ করি আমি। প্রায় চার কোটি ৪২ লক্ষ ৪ হাজার ১৯৭টা শিক্ষার্থীকে আমরা ৩৫ কোটি ৪২ লক্ষ ৯০ হাজার ১৬২ খানা বই পহেলা জানুয়ারি হাতে তুলে দিয়েছি। যে সমস্ত এলাকায় স্কুল নাই, সেখানে স্কুল করে দিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রাইমারিতে ১ কোটি ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থীর মা মোবাইল ফোনে বৃত্তির টাকা পায়। কে দিয়েছে এই ফোন এটাও আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিয়েছিল বেসরকারি খাতে। আজকে সবার হাতে মোবাইল ফোন। বিএনপির আমলে মোবাইল ফোন তো কেউ চোখে দেখে নাই। তখন একটা মোবাইল ফোন কিনতে লাগতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এক মিনিট মোবাইলে কথা বলার জন্য দিতে হত ১০ টাকা। ধরলেও ১০ টাকা করলেও দশ টাকা। এই ছিল বিএনপির সময়। আর এখন সবার হাতে মোবাইল ফোন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো ঘোষণা দিয়েছিলাম। আপনাদের ছেলে মেয়েরা ল্যাপটপ চালাবে, কম্পিউটার চালাবে। আমরা ৫২৭৫ ডিজিটাল সেন্টার সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছি। আমরা ট্রেনিং দিচ্ছি। শিক্ষা গ্রহণ কর, পয়সা কামাই কর। সেই ট্রেনিং করে ঘরে বসে টাকা কামাই করতে পারছে আপনাদের ছেলে মেয়েরা। বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য আমরা প্রায় এক বছরে ১০ লাখ লোক বিদেশে পাঠিয়েছি। এই মোবাইল ফোন আরও আধুনিক করে আমরা ফোরজিতে চলে গেছি। মানুষ সেবা পাচ্ছে। মানুষ চিকিৎসা সেবা যেন পায় সেজন্য কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিচ্ছি। ত্রিশ প্রকার ঔষধ বিনা পয়সায় দিচ্ছি। যেন আমাদের মা বোনেরা কারও মুখাপেক্ষি না হয়, নিজে হেঁটে কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল, আমি উদ্যোগ নিলাম ৪৩০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ করে রেখেছিলাম। এরপর ২০০৮ এর নির্বাচনে আপনার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আমরা সরকার গঠন করেছি। সরকার গঠন করে দেখি বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত যে সময়ে ছিল সে সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। তারা বিদ্যুৎ দিতে পারে নাই, দিয়েছে খাম্বা। খালেদা জিয়ার ছেলে খাম্বার ব্যবসা করত, সবাইকে খাম্বা কিনে দিয়েছে, রাস্তার পাশে শুধু খাম্বা আর খাম্বা। বিদ্যুৎ নাই। খুটি আছে কিন্তু বিদ্যুৎ নাই। খুটি তো আর বিদ্যুৎ দিতে পারে না, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়। আমরা ২০০৯ এ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়িয়েছি। এই রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করে দিয়েছি। আজকে আমরা ১৬ হাজার মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। সেই সঙ্গে ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পায়। ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে কোন ঘর অন্ধকার থাকবে না। সব ঘরেই আমরা আলো জ্বালবো। যেখানে বিদ্যুৎ লাইন নাই, সেখানে আমরা সোলার প্যানেল করে দিবো। বায়োগ্যাস করে দিচ্ছি। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছি। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছি, যাতে কোন বিদ্যুৎ সমস্যা না থাকে। রাস্তা ঘাট পুল ব্রিজ ব্যাপক ভাবে আমরা করে দিয়েছি। এই রাজশাহীতে কোন ইন্ডাস্ট্রি ছিল না, গ্যাসের লাইন ছিল না, আমরা গ্যাসের লাইন দিয়েছি। গোটা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে দিয়েছি। যাতে করে সেখানে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে, মানুষের কর্মসংস্থান হয়। আমাদের কৃষক তারা কষ্ট করে। আমরা তাদের মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা করে দিয়েছি। ৯৮ এর বন্যার পর যেসব বর্গা চাষি যারা আমানত রাখতে পারে না তাদের জন্য বিনা জামানতে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করেছি। এখন ২ কোটি কৃষক উপকরণ কার্ড বিনা মূল্যে পাচ্ছে, যে কার্ডের মাধ্যমে বীজ, সার কৃষকরা কিনতে পারে। ভুর্তকির টাকা সরাসরি কৃষকের কাছে আসে। বিশাল এ জনসমুদ্রে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ম-লির সদস্য প্রফেসর ড. আবদুল খালেক ও প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান খান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানাক, মাহবুবুল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্যা ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আকতার জাহান, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নূরুল ইসলাম ঠা-ু, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সসম্পাদক আসাদুজ্জামান প্রমুখ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে পৌছে একযোগে ২১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। তিনি এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড রাজশাহীবাসীর জন্য উপহার বলেও ঘোষণা দেন। পরে জনসভায় তিনি এসব উন্নয়নের বর্ননাও দেন। প্রধানমন্ত্রী বেলা ৩ টা ৫৫ মিনিটে মাদ্রাসা মাঠে উপস্থিত হলে মুহুর্মহু করতালি ও স্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। পরে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণ শুরু করেন। আজানের জন্য তিনমিনিট বিরতিও দেন তিনি। ৩৭ মিনিটের বক্তব্যে তিনি সরকারের উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন।
×