ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক লাখ মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে ভাষা শহীদদের স্মরণ

প্রকাশিত: ০২:৫৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এক লাখ মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে  ভাষা শহীদদের স্মরণ

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল ॥ এ এক চোখ ধাঁধানো আয়োজন। একটি দুটি নয় এক লাখ মোমবাতি জ্বেলে নড়াইলবাসী স্মরণ করলেন একুশের অমর ভাষা শহীদদের। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের কুড়িরডোব মাঠ প্রাঙ্গনে ‘অন্ধকার থেকে শত্রু করুক একুশের আলো’এই শ্লোগান নিয়ে প্রতিবছরের মত এবারও আয়োজন করে একুশ উদযাপন পর্ষদ। এসময় মঞ্চে “আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি”এই গান দিয়ে শুরু হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পরিবেশনা গণসঙ্গীত ও কবিতা। নড়াইলবাসীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার দর্শনার্থী উপভোগ করেন এই মনোহর দৃশ্য। একুশ ফেব্রুয়ারিতে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে নড়াইলবাসী অপেক্ষা করেন সন্ধ্যার মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের দৃশ্য দেখার জন্য। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ভিক্টোরিয়া কলেজের কুরিডোব মাঠ প্রাঙ্গনে আলোকিত হয়ে ওঠে। মোমবাতিগুলো জ্বলে ওঠে। ধীরে ধীরে আকার স্পষ্ট করে দেয় নানা বর্ণমালার, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতি সৌধ, জাতীয় সংসদ ভবন, শাপলা ফুল আর বিভিন্ন আল্পনার। এর মধ্যেই মাঠের পাশে তৈরী করা মঞ্চে শুরু হয় ভাষার গান আর কবিতা আবৃত্তির। প্রায় দুই ঘন্টার এই অনুষ্ঠানের খবর আর এই জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে অনেকদুর। একুশ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ৬ টা ৫ মিনিটে প্রজ্জলন শুরু হয় মোমবাতি। অন্ধকার ছাপিয়ে বাহারি ডিজাইনের আলোয় আলোকিত হয়ে যায় বিশাল এই মাঠ। এই সাথে ভাষা দিবসের ৬৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ১০০টি ফানুষ ওড়ায়। শহীদ মিনার,জাতীয় স্মৃতি সৌধ, জাতীয় ফুল শাপলা, বাংলা বর্ণমালা, ও প্রজন্ম’৭১,যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই, শিখা অনির্বাণ আল্পনাসহ বিভিন্ন ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে মোমবাতি প্রজ্জলনের মধ্য দিয়ে। আয়োজকরা আশা করছেন এবার এক লাখ মোমবাতি জ্বালিয়ে দেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বদের উপস্থিতি আর সংগীতশিল্পীদের অংশগ্রহনে প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য হবে অনুষ্ঠানটি। প্রতিবছরই আয়োজনে শ্লোগান থাকে ’ অন্ধকার থেকে মুক্ত করবে একুশের আলো’। একুশে উদযাপন পর্ষদের আহব্বায়ক প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমান ও সদস্য সচিব কচি খন্দকার জানান,আমাদের জ্ঞানের যে অন্ধকার, সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প, সমাজের কপমুন্ডুকতা - সামগ্রিক এসব অন্ধকারের বিরুদ্ধে একুশের আলো। এ আলো শুধু মাঠের আলো নয়। সামগ্রিক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রত্যয় জাগানিয়া আলো। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য সচিব শরফুল আলম লিটু জানান,এবারই প্রথম মোমবাতি প্রজ্জলনের পাশাপাশি বিকাল ৩টায় নড়াইলের সকল লেখকদের বই নিয়ে “বইমেলা”র আয়োজন করা হয়। একুশের আলো উদ্যাপন পর্ষদের আয়োজনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ এমদাদুল হক চৌধুরী। এসময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, পৌরমেয়র জাহাঙ্গীর বিশ^াস, একুশের আলো নড়াইলের আহ্বায়ক প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমান, সদস্য সচিব কচি খন্দকারসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার লোক উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম জানান, দীপশিখা প্রজ্বলন অনুষ্ঠান নড়াইলবাসীর প্রানের অনুষ্ঠান। আমরাও এ অনুষ্ঠানটি উপোভোগ করি। এ অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্নভাবে শেষ করা জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই সার্বিক সহযোগিতা করা হয়ে থেকে। আজও এ অনুষ্ঠান শান্তিপূর্নভাবে শেষ হয়েছে।
×