ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মাধ্যমিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তিতে ঢাকা পিছিয়ে, এগিয়ে বরিশাল

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মাধ্যমিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তিতে ঢাকা পিছিয়ে, এগিয়ে বরিশাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাধ্যমিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তিতে সারা দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এই শহরের ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মাত্র ৫৯ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে একই বয়সী শিশুদের মাধ্যমিক স্কুলে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বরিশাল। এ শহরের ৭৪ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক শিক্ষা নিচ্ছে। যদিও মাধ্যমিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তির জাতীয় হারের (৮৫ শতাংশ) তুলনায় সবগুলো শহরই পিছিয়ে আছে। আবার শহরে আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে শিশুদের স্কুলে অন্তর্ভুক্তিতে ব্যবধান আছে। শহর অঞ্চলের অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম পরিবারের ৫ শিশুর মধ্যে ৪ জনই মাধ্যমিক স্কুলে পড়ে। কিন্তু গরিব পরিবারের ৫ শিশুর মধ্যে মাত্র ২ জন শিশু মাধ্যমিক স্কুলে যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ’চাইল্ড ওয়েল-বিং সার্ভে ইন আরবান এরিয়াস অব বাংলাদেশ-২০১৬’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও-এ পরিসংখ্যান ভবন সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বিবিএস মহাপরিচালক আমীর হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপানা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কিশোর দাস, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব কাজী আশরাফ উদ্দিন এবং ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এ্যাডওয়ার্ড বেগবেদার। জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জরিপের ফোকাল পয়েন্ট অফিসার এ কে এম আশরাফুল হক। জরিপের বিভিন্ন দিক ॥ জরিপটি বিবিএস, এসোসিয়েটস ফর কমিউনিটি এ্যান্ড পপুলেশন রিসার্চ (এসিপিআর) ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে সম্পন্ন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে মূল জরিপের কাজটি করেছে এসিপিআর। স্যাম্পল ডিজাইন প্রণয়ন ও তদারকি কার্যক্রমে সহায়তা করে দিয়েছে বিবিএস ও ইউনিসেফ। অর্থায়ন ও রিপোর্ট প্রস্তুতকরণে সহায়তা দিয়েছে ইউনিসেফ ও এসিপিআর। জরিপে দেশের আট বিভাগীয় শহরসহ সকল শহরাঞ্চলকে ১৯টি ভাগে ভাগ ৯২০টি গুচ্ছ করা হয়। এরপর প্রতিটি গুচ্ছ থেকে ২২টি পরিবার বাছাই করে মোট ২০ হাজার ১৩৪টি খানা নির্বাচন করা হয়েছে। জরিপে মহিলা ও শিশুবিষয়ক সকল তথ্য ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১৯ হাজার ১৩২ জন মহিলার কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করা হয়েছে। আর ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর তথ্যের ক্ষেত্রে মা অথবা শিশুর দেখভালকারী অভিভাবকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিপের তথ্য সংগ্রহের কাজটি করা হয়েছে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে। শহরের ৮২ শতাংশ শিশুনির্যাতনের শিকার ॥ পারিবারিক অনুশাসন মেনে না চলা বা বড়দের কথার অবাধ্য হওয়ায় ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৮ জনই মানসিক বা শারীরিকভাবে শাস্তির শিকার হয়েছে। এক্ষেত্রে জরিপ চলাকালীন সময় থেকে তার এক মাস আগে পরিবার কিংবা পরিবারের বাইরে কোন না কোনভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৮২ দশমিক ৪ শতাংশ। এরমধ্যে বস্তি এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ শিশুনির্যাতনের শিকার। সিটি করপোরেশনের বস্তি এলাকার বাইরে ৮১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য শহর এলাকায় সাড়ে ৮২ শতাংশ। নির্যাতনের ধরন হিসেবে এক্ষেত্রে ধমক, চর থাপ্পড়, কানমলাসহ বিভিন্ন নির্যাতন বোঝানো হয়েছে। ৯৩ শতাংশ শিশুশ্রমিক বস্তির ॥ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরের ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের মধ্যে ১৩ শতাংশ শিশুশ্রমে যুক্ত। শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ বসবাস করে শহরের বস্তিতে। ধনী পরিবারের চেয়ে গরিব পরিবারের শিশুরা পাঁচ গুণ বেশি শিশুশ্রমে জড়িত। খুলনা শহরে বাল্যবিবাহ সবচেয়ে বেশি ॥ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে খুলনায় বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি, ৬৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম সিলেটে, ৪০ শতাংশ। জন্মনিবন্ধন সনদ প্রতি তিনজনে একজনের ॥ শহরের প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে মাত্র একজনের জন্ম নিবন্ধন সনদ রয়েছে। তবে বস্তি এলাকায় শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের হার তুলনামূলক কম এবং বাল্যবিবাহের হার বেশি। পুষ্টিহীনতা সবচেয়ে বেশি সিলেটে ॥ প্রতিবেদনে শিশুর পুষ্টি বিষয়ে বলা হয়েছে, বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সিলেটে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টিহীনতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি ৪ জনে ১ জন খর্বাকৃতির শিকার। এছাড়া প্রতি ৫ জনে ১ জন ওজনহীনতায় ভুগছে। বস্তি এলাকার শিশুদের খর্বাকৃতির ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় তিন গুণ বেশি। হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রাজশাহী ॥ রাজশাহীর ৬২ শতাংশ পরিবারে যথাযথভাবে হাত ধোয়ার সুবিধা রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বরিশাল, মাত্র ৪৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে দেশের শহরাঞ্চলে ৫৫ শতাংশ পরিবারে হাত ধোয়ার সুবিধা রয়েছে। হাত ধোয়ার সুবিধা বলতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সাবান ও পানির ব্যবস্থা বুঝানো হয়েছে। সার্বিকভাবে শহরাঞ্চলে উন্নত স্যানিটেশনের হার ৫৭ শতাংশ। তবে বস্তি এলাকার এ হারমাত্র ১৯ শতাংশ। এছাড়া প্রতি ৫ জনে তিনজন শিশু জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধপানের সুযোগ পায়। জন্মের পরপর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বস্তির মায়েরা এগিয়ে আছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, সরকার শিশুদের সুরক্ষায় ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। এসডিজি বাস্তবায়নে এ প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি এ্যাডওয়ার্ড বেগবেদার বলেন, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে সাড়ে ৫ কোটি মানুষ ছিল। ২০২৯ সালে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৮ কোটি ১০ লাখে। শহরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সামষ্টিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। এ পরিকল্পনায় শিশুদের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
×