ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি না এলেও সব দলেই নির্বাচনের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিএনপি না এলেও সব দলেই নির্বাচনের প্রস্তুতি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা ও নির্বাচন সময়ের সরকার ইস্যুতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার হুমকি দিচ্ছে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার সাজা আদালতের বিষয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান করার কথাও বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এবার বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বলছে, নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও মাঠে থাকবে তারা। অর্থাৎ বিএনপি না এলে জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে না। এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এরশাদের দলে যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার রংপুরে এক অনুষ্ঠানে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয়ে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক আর না করুক তাতে কিছুই যায় আসে না। তাদের জন্য নির্বাচন বন্ধ হবে না, নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (এ) অংশ নেবে। এছাড়া অন্য রাজনৈতিক দল আছে আর আওয়ামী লীগ তো আছেই। ফলে নির্বাচন না করার ব্যাপারে বিএনপির হুমকি-ধামকি দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়া প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, রাজনীতি করলে জেলে যেতে হবে। আমিও জেলে গিয়েছি। আর রায় দিয়েছেন বিচারক। দুর্নীতির মামলায় তার বিচার হয়েছে, তার জেল হয়েছে। এ নিয়ে এত বাড়াবাড়ি, এত হৈ-চৈ করে কি লাভ। বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ ও জনপ্রিয় নেতা জাতীয় পার্টিতে যোগদান করছেন বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। তবে তাদের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এরশাদ বলেন, কেউ যদি ইচ্ছে করে আমার দলে যোগ দিতে চান কেন তাদের নেব না। তারা যদি ভাল নেতা হন, যোগ্য প্রার্থী হন, তাদের অবশ্যই দলে নেব এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেব। সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির নির্বাচনে আসা না আসা প্রসঙ্গে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ‘সংবিধান অনুযায়ী সঠিক সময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, সংবিধানে যেভাবে রয়েছে সেভাবেই সময়মতো আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কারও জন্য নির্বাচন ঠেকে থাকবে না। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে, জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, যাদের গণতন্ত্রের ওপর আস্থা-বিশ্বাস আছে- তারা নির্বাচন করবে। আর না করলে এখানে আমাদের কোন কিছুই করার নেই। ২০১৪ সালে এত তাণ্ডব করেও যখন নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কেউ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। কোন দল নির্বাচন করবে, আর কোন দল নির্বাচন করবে না এটা সম্পূর্ণ তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তাই যথাসময়ে নির্বাচন হবে, জনগণও ভোট দেবে। যদি কেউ বলে নির্বাচন করতে দেব নাÑ এটা হচ্ছে গায়ের জোরের কথা। আর এটা বিএনপি বলতে পারে, কারণ তাদের জন্মটাই তো ওইভাবে। আর যদি বলেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে আমি শাস্তি দিয়েছি যে আমি তুলে নেব, তা তো আমি পারব না। কারণ রায় দিয়েছে আদালত। এখানে আমাদের তো কিছু করার নেই। আর মামলাও তো আমরা দেইনি, দিয়েছে বিএনপি নেত্রীরই প্রিয় তত্ত্বাবধায়ক সরকাররা। এদিকে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আদালতের রায়ে নির্বাচনের যোগ্যতা হারালে কিছুই করার নেই। তিনি বলেন, বেগম জিয়া যদি আদালতের রায়ে নির্বাচনের যোগ্যতা হারান, সেক্ষেত্রে সরকার কি করবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির অপরাধী চরিত্র উন্মোচন হওয়ার তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রস্তুত বিরোধীসহ অন্যান্য দল ॥ বিএনপি না চাইলেও সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সার্বিক প্রস্তুতিও নিয়েছে দলটি। চূড়ান্ত করা হয়েছে ৩০০ আসনের প্রার্থীও। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন জাপার শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে কোন আপত্তি নেই। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন চান তারা। বলছেন, অন্য কোন দল নির্বাচনে অংশ না নিলে কারও জন্য নির্বাচন অপেক্ষা করবে না। এদিকে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট ছাড়া অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দলের শরিক দলগুলোতে ইতোমধ্যে নির্বাচনী ডামাডোল চলছে রীতিমতো। চলছে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ইসলামী দলসহ বাম ধারার দলগুলোও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন কবরে ১৪ দলীয় জোট। এরসঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রগতিশীল ধারার রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে যুক্ত হতে পারে। এর বাইরে গণফোরাম, বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী ধারার দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ১৪ দলের শরিক নেতারা জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা আসন ভাগাভাগি নিয়ে দেন দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নিজেদের প্রার্থীও চূড়ান্ত করছেন। তবে বিএনপি বসে নেই। কথায়-কথায় নানা ইস্যুতে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার চাপ অব্যাহত রাখলেও প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ২০ দলীয় জোটের মধ্যে কিছুটা টানাপোড়েন চলছে, আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনাও বেশ এগিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, পরিস্থিতি যাই হোক আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের বিকল্প নেই। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিল হবে। এতে আরও নতুন সঙ্কটের মুখে পড়বে দলটি। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। সরকার ভাল অবস্থানে আছে, উপ-নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা নাই। নির্বাচন সময়মতো হবে। কার অধীনে ভোট ॥ সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবে এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবে।’ এছাড়া ১১৯ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ইসি সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারীর প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেইরূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।’ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাহী বিভাগের সহযোগিতার বিষয়ে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’ সংবিধানের এই সহযোগিতা বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
×