ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জমে উঠেছে চায়ের মেলা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জমে উঠেছে চায়ের মেলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে চা-শিল্পের অবস্থান, বিভিন্ন ধরনের চা, চায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্য, উৎপাদনকারীদের নিয়ে চলছে ‘বাংলাদেশ টি এক্সপো’ মেলা। দেশীয় চায়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো চলছে ‘বাংলাদেশ চা প্রদর্শনী-২০১৮’। রবিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রদর্শনীস্থল ঘুরে দেখা গেছে চা-প্রেমীদের ভিড়। বছরজুড়ে দেশের সব জায়গাতেই চা পাওয়া গেলেও প্রদর্শনীতে ক্রেতা-দর্শনার্থীর কমতি নেই। সোমবার সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, এ দিন বেলা ১১টা থেকে প্রদর্শনী শুরু হওয়ার পর ১২টা থেকে ভিড় জমাতে শুরু করেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। এরপর স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে পছন্দের এবং নতুন নতুন ব্র্যান্ডের চা ক্রয় করেন ক্রেতারা। বাংলাদেশ চা সংসদের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান বলেন, চা কাপে আসার আগে অনেক ধাপ অতিক্রম করে। মেলায় এসে দর্শনার্থীরা এ বিষয়ে জানতে পারবেন। পাশাপাশি জানতে পারবেন চা শ্রমিকদের কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। দর্শনার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, মেলায় লোকজন মোটামুটি আসছে। সকালের দিকে দর্শনার্থী খুব একটা থাকে না, বিকেলে আসে। মেলার একেবারে মাঝে বিশাল পরিসরে সাজানো হয়েছে চা বোর্ডের স্টল। স্টলের পাশেই টবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে জীবন্ত চা-গাছ। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত নিজস্ব জাতের চা-পাতা থেকে তৈরি চা কাপে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আগ্রহী দর্শনার্থীদের এসব চা গরম-গরম পরিবেশনও করা হচ্ছে। চা বোর্ডের একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা গেল, গত তিন বছরে ২২ রকম স্বাদের চা প্রতিষ্ঠানটি উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে তিনটি চা (সাতকরা, অর্থোডক্স, গ্রিন টি) প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করা হচ্ছে। মেলায় অংশ নেয়া সিলোটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোঃ কাওসর বলেন, আমরা মেলায় এসেছি মূলত প্রচারণা চালানোর জন্য। পাশাপাশি ক্রেতারা চাইলে এখানে আমাদের স্টল থেকে খুচরা ও পাইকারি চা কিনতে পারবেন। আর যারা ডিস্টিবিউটর হতে আগ্রহী, আমরা তাদের কার্ড নিয়ে রেখে দিচ্ছি। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারণ এখানে কমিশনের একটি বিষয় আছে। শুধু মেলা উপলক্ষেই চায়ের স্টল দিয়ে বসেছে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক। স্টলটিতে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ রাশেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা শুধু মেলাতেই চা বিক্রি করছি। মেলার বাহিরে আমরা কোন চা বিক্রি করি না এবং মেলার পরেও করব না। তিনি আরও বলেন, খোলা বাজারে চা বিক্রি না করলেও ব্র্যাকের তিনটি চা বাগান আছে। সেখান থেকে চা অকশনে বিক্রি করা হয়। মেলায় আমাদের চা নিয়ে আসার উদ্দেশ্য হলো দর্শনার্থীরা যাতে ভাল চা পেতে পারেন। একটি ফার্মাসিউটিক্যালের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার মহিউদ্দিন ইসলাম চৌধুরী প্রদর্শনীতে এসে বিভিন্ন ব্যান্ডের ৫টি আইটেমের চা ক্রয় করেছেন। তিনি বলেন, চা-তো সবখানেই পাওয়া যায়, কিন্তু এখানে নতুন কিছু কেনার জন্য এসেছি। নতুনের মধ্যে ইস্পাহানীর একটি ব্লাক টি এবং কাজী’র ক্লোন টি কিনলাম। তাছাড়া আরও কিছু পছন্দের চা কিনেছি। এ দিকে প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন অফার দিচ্ছেন অংশগ্রহণকারীর। ড্যানিশ সিমলা স্টলের ব্র্যান্ড এ্যাক্টিভেশন অফিসার সাইদুর বলেন, আমরা স্টলেই বিনামূল্য বিভিন্ন ধরনের চায়ের স্বাদ চেখে দেখার ব্যবস্থা করেছি। দর্শনার্থীরা তাদের কমেন্ট লিখিতভাবে জানাচ্ছেন। তাছাড়া ক্রেতাদের জন্য প্রতিটি আইটেমে মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার প্রদর্শনীর তৃতীয় বা শেষ দিন। এ দিন দুটি সেমিনার ছাড়াও রয়েছে মিনি অকশন ও চা আড্ডা। প্রদর্শনী উপলক্ষে প্রতিদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীদের পাশাপাশি বান্দরবান, শ্রীমঙ্গলের অঞ্চলের মানুষরা তুলে ধরবেন আঞ্চলিক সংস্কৃতি। এবারের আয়োজনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশীয় চা সংসদ, এমএম ইস্পাহানী, কনসোলিডেটেড টি এ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি (ফিনলে), আবুল কায়ের কনজুমার প্রডাক্টস, ডানকান ব্রাদার্স, হালদা ভ্যালি পি কোম্পানি, সিটি গ্রুপ এবং ওরিয়ন গ্রুপ।
×