ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এলএনজি আমদানির কারণে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এলএনজি আমদানির কারণে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে

রশিদ মামুন ॥ এপ্রিল থেকেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে চায় সরকার। তরলীকৃত এলএনজি আমদানির শুরু থেকেই গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের জন্য পেট্রোবাংলা এবং বিতরণ কোম্পানিকে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে শীঘ্রই। তবে গ্যাসের ওপর থেকে সব ধরনের কর তুলে দিলেও এবার এলএনজি আমদানির কারণে সব থেকে বেশি গ্যাসের দর বৃদ্ধি হতে পারে। জ¦ালানি বিভাগ বলছে, আগামী ২৫ এপ্রিল এক্সিলারেট এনার্জিকে এলএনজি আমদানির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে পেট্রাবাংলা। এই সময়ের মধ্যে তারা কাজ শেষ করতে পারবে বলে আশাও করছে সরকার। এপ্রিল থেকে এলএনজি আমদানি করলে গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে হবে। সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গ্যাসের দর বৃদ্ধির বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম এবং জ¦ালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও কমিশন সদস্য, জ¦ালানি বিভাগের পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের বিষয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেছেন, তারা এসেছিল। আমরা তাদের কথা শুনেছি। আমরা চাইলেই তো আর দাম বৃদ্ধি করতে পারব না। এলএনজি আমদানিতে কি পরিমাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে সে বিষয়ে পর্যালোচনা করে প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। তারা প্রস্তাব দিলে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করব। ইতোমধ্যে সরকার জ¦ালানির দর সাধারণের ক্রয় সীমার মধ্যে রাখতে ক্রমান্বয়ে এলএনজির দাম সমন্বয়ের কথা বলছে। একই সঙ্গে গ্যাসের ওপর থেকে সব ধরনের করও তুলে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এলএনজির মূল্য সমন্বয় করতে গিয়ে প্রথম দফায় কি পরিমাণ দাম বৃদ্ধি পাবে তা এখনই বলার সময় আসেনি বলে জানান বিতরণ কোম্পানির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য রহমান মোরর্শেদকে প্রধান করে গঠিত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে বলা হয়, দেশে এখন গ্যাসের বিক্রয়মূল্য হচ্ছে প্রতি হাজার ঘনফুটের দুই দশমিক ১৭ ডলার। এখন সমপরিমাণ এলএনজি আমদানি মূল্য ৮ মার্কিন ডলার। এই সময়ে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করা দৈনিকের দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করলে রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয় এবং সকল রকমের কর অন্তর্ভূক্ত করলে দাম পড়বে ৪ দশমিক ৩৫ ডলার। আর এলএনজি পৃথকভাবে বিক্রি করতে চাইলে দাম পড়বে ২৩ দশমিক ১১ ডলার। তবে সকল কর রেয়াত করলে এলএনজির দর পড়বে ১০ দশমিক ৪০ ডলার আর মিশ্রিত গ্যাসের দাম পড়বে ৪ দশমিক ১৪ ডলার। অর্থাৎ এখনই মিশ্রিত গ্যাসের দাম সরাসরি দ্বিগুণ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এই দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে দেশে গ্যাসের সঙ্কট সামাল দিতে ক্রমান্বয়ে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। যত বেশি এলএনজি আমদানি হবে গ্যাসের দামও ততই বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ায় দেশে গ্যাসের দাম আর সস্তা থাকছে না। আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সমন্বয়ে দাম বেড়ে যাবে। জ¦ালানি বিভাগ সূত্র জানায়, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির শুরুতেই গ্যাসের ওপর থাকা ৯৩ দশমিক ২৪ ভাগ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এলএনজির দাম নিয়ন্ত্রণে দেশীয় গ্যাসের ওপর থাকা শুল্কও প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। শুধুমাত্র গ্যাসের ওপর ১৫ ভাগ ভ্যাট থাকবে। সরকার বলছে শুরুতে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হবে। এতে দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে এলএনজির দামের সমন্বয় ঘটানো হবে। তবে যেহেতু দেশীয় গ্যাসের ঘাটতি দিন দিন প্রকট হচ্ছে তাই এলএনজি আমদানিও বৃদ্ধি করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান আবিস্কৃত মজুদ ২০৩০ এর মধ্যে শেষ হবে। তখন নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া না গেলে পুরোপুরিভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে হবে। যাকে একটি আশঙ্কার বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার এখন মহেশখালীতেই তিনটি ভাষমান টার্মিনাল নির্মাণ করছে। এর বাইরে কুতুবদিয়াতে আরও দুটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এখন নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা এলএনজি টার্মিনালের প্রতিদিনের ক্ষমতা হবে তিন হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বাইরে পায়রাতেও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। অর্থাৎ সরকার মনে করছে ভবিষ্যতে দেশের চাহিদার বড় অংশই আমদানি করতে হবে। দেশে গ্যাসের মজুদ এবং ব্যবহারের হিসেব বিবেচনা করলে এলএনজি আমদানির কোন বিকল্প নেই। পেট্রোবাংলাই বলছে ২০২০ এর পর থেকে দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া না গেলে ২০৩০ নাগাদ দেশে সকল খনির মজুদ একেবারে শেষের পথে থাকবে। সরকার এখন কেবলমাত্র বিদ্যমান খনিগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করে চলেছে। যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বড় রকমের হুমকি।
×