ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার রায়ের কপি পেয়েছেন তার আইনজীবী

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদার রায়ের কপি পেয়েছেন তার আইনজীবী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র ১২ দিনের মাথায় জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের দ- দেয়া রায়ের ১১৭৪ পৃষ্ঠার সত্যায়িত অনুলিপি পেয়েছেন তার আইনজীবী। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আজ মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে আপীলসহ জামিনের আবেদন করা হবে। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খোরশেদ আলম খান বলেন , ওরা (আসামি পক্ষ) জামিনের আবেদন করবে । তখন আমরা একটি কপি পাব। ঐ কপি পাওয়ার পর যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। ৮ ফেরুয়ারি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছর, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রাহমানসহ অন্য ৫জনকে ১০ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে তারেক রহমানসহ অন্য ৫জনকে অর্থদ-ও প্রদান করা হয়। ওই দিন থেকেই বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে রয়েছেন তিনি। সোমবার বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের স্বাক্ষরের পর বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার, জাকির হোসেন ভূইয়া, জিয়াউদ্দিন জিয়া ও এম হেলাল উদ্দিন হেলালের হাতে ১১৭৪ পৃষ্ঠার এ রায়ের সার্টিফাইড কপি দেন আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন। এ দিকে অতি অল্প সময়ে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আসামি পক্ষের আইনজীবী এত বড় রায়ের কপি পেয়েছে। তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ এতদিন যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্যই বলেছেন। বিচারক যে দিন রায় দিয়েছেন । রায় লিখেই দিয়েছেন । শুধুমাত্র অর্ডার পোরশেন টা পড়ে শুনেয়েছেন। রায় ঘোষণার পর স্ট্যাম্প পেপারে টাইপ করতে হয়। এটা করতে তো সময় প্রয়োজন। তার পর ভুল আছে কী না সেটাও পরীক্ষা করে দেখতে হয়। অনেক সময় তারা বলেছে, উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সরকার রায়ের অনুলিপি দিতে বাধার সৃষ্টি করছে। আদালত রায় প্রদান করেছে। এখানে সরকারের কোন হাত নেই। বিচারকদের প্রতি আস্থা থাকতে হবে। খালেদার জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া বলেন, রায়ের কপি এখনও দেখি নাই। এটা বস্তাবন্দী আছে। আজ উচ্চ আদালতে আপীল করা হবে কী না সে বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সিনিয়ররা বলতে পারবে। অন্যদিকে আরেক আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আমরা ১১৭৪ পৃষ্ঠার রায়ের কপি হাতে পেয়েছি। এখনও রায়ের কপি সাংবাদিকদের দেয়া হয়নি। এত বড় রায়ের কপি দ্রুত দেয়া সম্ভবও নয়। যারা লিখবে অনুমান ভিত্তিক লিখবে। দুদকের আইনজীবী খোরশেদ আলম খান জনকণ্ঠকে বলেন, এখনও রায়ের কপি পাইনি। শীঘ্রই পেয়ে যাব। ওরা (আসামিপক্ষ) জামিনের আবেদন করবে। তখন আমরা একটি কপি পাব। ঐ কপি পাওয়ার পর যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আদালত সোমবার রায়ের সার্টিফাইড কপি দিয়েছেন। আমরা এই কপি কমিশনে (দুদক) পাঠিয়ে দেব। কমিশন রায়ের কপি নিয়ে পরবর্তীতে কী করবে, সেটা আমার জানা নেই। তবে দুদক যে সিদ্ধান্ত নেয়, আমি সে মোতাবেক কাজ করব।’ ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করেন। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫ আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের সবার ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী (পলাতক) এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান (পলাতক)। একইসঙ্গে তাদের সবার ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রাজধানীর বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণ করা হয়। রায় ঘোষণার দিন বিচারক জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০৯ ও ১০৯ ধারার অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। সামাজিক অবস্থান ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় খালেদা জিয়ার সাজা কমানো হয় বলে রায়ে উল্লেখ করেন আদালত। মোট ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের বিশেষ অংশ পাঠ করেন বিচারক। ঐ দিন ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসারে উল্লেখ বিবেচ্য বিষয় তুলে ধরা হয়। বিবেচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে (১) ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীকে দিয়ে প্রাইম মিনিস্টার কোম্পানিজ ফান্ড নামীয় সোনালী ব্যাংক রমনা শাখায় হিসাব খুলেছিলেন কি না? ওই হিসাবে ১৯৯১ সালের ৯ জুন ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার জমা করেছিলেন কি না? ওই ১২ লাখ ৫৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকায় চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৩১৬ টাকা প্রাইম মিনিস্টার কোম্পানিজ ফান্ডে জমা হয়েছিল কি না? ওই টাকা বৃদ্ধি পেয়ে চার কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ টাকায় উন্নীত হয়েছে কি না? প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুই কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা স্থানান্তরিত হয় কী না এবং আসামি তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান প্রাইম ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন কি না? কাজী সালিমুল হক কামাল প্রাইম ব্যাংক গুলশান শাখা থেকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিউ ইস্কাটন শাখায় স্থানান্তর করেন কি না? কাজী সালিমুল হক কামাল অবৈধভাবে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে লাভবান হয়ে ব্যক্তি বিশেষকে লাভবান করতে সহায়তা করেন কি না? খালেদা জিয়াসহ আসামিরা পরস্পর সহযোগিতায় অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে এবং অন্যদের লাভবান করার অসৎ মানসে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে টাকা স্থানান্তর করাতে পারেন কী না এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত করা হয় কি না? আসামিরা ৪০৯ ও ১০৯ ধারার অপরাধ করেছেন কি না? আসামিরা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য কি না? ২৫ জানুয়ারি ছিল এ মামলার শেষ দিনের যুক্তিতর্ক। মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
×