ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্লগার খুনের তিন জঙ্গী এখন কলকাতায়

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ব্লগার খুনের তিন জঙ্গী এখন কলকাতায়

শংকর কুমাার দে ॥ বাংলাদেশ থেকে ভারতের কলকাতায় ঢুকেছে তানবির, রিয়াজ, তামিম, নয়ন ও আফতাব নামের পাঁচ জঙ্গী। বসিরহাটের সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় ঢুকে আত্মগোপন করেছে। কলকাতার পুলিশ (এসটিএফ) এর কাছে তথ্য পাঠিয়ে তাদের সন্ধান চেয়েছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। অপরদিকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কাছে তিন জঙ্গী- মাহি, তামিম ও নয়নগাজীর ছবি ও তথ্য সংবলিত বায়োডাটা পাঠিয়েছে কলকাতার পুলিশ (এসটিএফ)। বাংলাদেশের ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক, ভিন্নমতাবলম্বী খুনের সঙ্গে জড়িত এই তিন জঙ্গী। র‌্যাবের গোয়েন্দা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ওপার চলে যাওয়া তিন জঙ্গীর খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে কলকাতায়। কলকাতার পুলিশ শাহাদাত হোসেন ওরফে বাবু নামে এক দালালকে গ্রেফতার করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে বলে কলকাতা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি। কলকাতা পুলিশ যেসব তথ্য পেয়েছে তা ঢাকার র‌্যাব কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কলকাতার পুলিশ যেসব তথ্য পাঠিয়েছে তাতে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গীরা সীমান্তের কোন পথে কলকাতায় গিয়ে কোথায় অবস্থান করে কার সঙ্গে কে যোগাযোগ করেছে তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে বলে র‌্যাব সূত্রের দাবি। র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, কলকাতার পুলিশ ঢাকায় র‌্যাবের কাছে যেসব ছবি ও তথ্য পাঠিয়েছেন তাতে তিন জঙ্গীর মধ্যে তামিম ওরফে স্বপন বিশ্বাস, নয়ন গাজির উমর ফারুক ওরফে মহম্মদ আফতাব খান ওরফে মাহির ছবি ও তথ্য রয়েছে। তথ্যের মধ্যে আছে, তামিম নামে এবিটি-র অপারেশন স্কোয়াডের সদস্য। মাহি বিস্ফোরক-বিশেষজ্ঞ। নয়নের ব্যাপারে বিস্তারিত এখনও জানাতে পারেননি তারা। তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই পুরস্কার ঘোষণা করেছে কলকাতার পুলিশ। ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খোঁজে হন্যে হয়ে খুঁজছে বলে জানা গেছে। কলকাতার পুলিশ ঢাকায় র‌্যাব কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)-এর তিন সদস্য সামশাদ মিয়া ওরফে তানবির, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজসহ বসিরহাটের বাসিন্দা মনোতোষ দে ওরফে জিয়ারুল গাজিকে গ্রেফতার করে লালবাজারের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। বাংলাদেশী তানবির ও রিয়াজকে চোরাপথে পশ্চিমবঙ্গে আনে শাহাদাত হোসেন ওরফে বাবু নামে এক দালাল। বাবু নামের এই দালালকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বাবু জানিয়েছে, তানবির, রিয়াজ, তামিম, নয়ন ও আফতাবদের বাংলাদেশ থেকে বসিরহাটের গাছা গ্রামে এনে লুকিয়ে রেখেছিল সে। গ্রেফতার হওয়া শাহাদাত হোসেন ওরফে বাবুর দেয়া তথ্যানুযায়ী জানা যায়, তানবিরের সঙ্গে তামিমও ঢুকেছিল পশ্চিমবঙ্গে। তানবির পুলিশকে জানায়, বসিরহাট থেকে হাওড়া হয়ে সে এবং তামিম প্রথমে হায়দরাবাদে যায়। সংগঠনের নির্দেশে তানবির পাটনা চলে যায়। পাটনাতেই মাহির সঙ্গে আলাপ হয় তার। পাটনা থেকে তানবির ও মাহি কলকাতায় আসে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুলিশ বাবুকে জানায়, সে হাওড়ায় তামিমকে দেখেছিল। এর পরেই হাওড়ার বিভিন্ন হোটেলে খোঁজ শুরু করা হয়। তারপরই জানা যায়, হাওড়ায় তামিমের সঙ্গে নয়ন ও মাহিও ছিল। গ্রেফতার হওয়া রিয়াজুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কলকাতার পুলিশ যে তথ্য পায় তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় এসে সে তানবিরের সঙ্গে দেখা করে। মফস্বল এলাকায় তারা বাড়ি ভাড়া খুঁজছিল। বসিরহাটের অস্ত্র ব্যবসায়ী জিয়ারুল ওরফে মনোতোষের সঙ্গেও তাদের আলাপ হয়। এর পরেই গত মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশ (এসটিএফ) তাদের গ্রেফতার করে। তামিম এবং নয়ন কলকাতায় আলাদাভাবে এলেও গত বছরের অক্টোবর হাওড়ার হোটেলে তাদের দেখা যায়। গ্রেফতার হওয়া তানবির ও শাহাদাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে জানা যায়, গত অক্টোবরে হাওড়ার স্টেশনের অদূরেই তিন সন্দেহভাজন জঙ্গী তিন দিনের জন্য দুটি হোটেল ভাড়া করেছিল। হাওড়ার ওই দুই হোটেলে গিয়ে যাবতীয় রেকর্ড, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। হাওড়ার দুই হোটেলের কর্মীরা এসটিএফ-এর গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, তিন সন্দেহভাজন জঙ্গী হোটেল থেকে সকালে বেরিয়ে অনেক রাতে ফিরতেন। ওই এলাকার অন্যান্য হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসটিএফ) মুরলীধর শর্মা তাদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা ব্লগার খুনের ফেরার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) তিন জঙ্গীর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন তারা। কলকাতার পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে ঢাকার র‌্যাবের কর্মকর্তারা জঙ্গীদের তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা ও তথ্য বিনিময় করা অব্যাহত আছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তার দাবি।
×