ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কারও জন্য ঠেকে থাকবে না ॥ সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কারও জন্য ঠেকে থাকবে না ॥ সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো নির্বাচন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান অনুযায়ী সঠিক সময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে বলেছেন, সংবিধানে যেভাবে রয়েছে সেভাবেই সময়মতো আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কারও জন্য নির্বাচন ঠেকে থাকবে না। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে, জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, যাদের গণতন্ত্রের ওপর আস্থা-বিশ্বাস আছে- তারা নির্বাচন করবে। আর না করলে এখানে আমাদের কোন কিছুই করার নেই। ২০১৪ সালে এত তাণ্ডব করেও যখন নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কেউ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। কোন দল নির্বাচন করবে, আর কোন দল নির্বাচন করবে না এটা সম্পূর্ণ তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তাই যথাসময়ে নির্বাচন হবে, জনগণও ভোট দেবে। যদি কেউ বলে নির্বাচন করতে দেব নাÑ এটা হচ্ছে গায়ের জোরের কথা। আর এটা বিএনপি বলতে পারে, কারণ তাদের জন্মটাই তো ওইভাবে। আর যদি বলেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে আমি শাস্তি দিয়েছি যে আমি তুলে নেব, তা তো আমি পারব না। কারণ রায় দিয়েছে আদালত। এখানে আমাদের তো কিছু করার নেই। আর মামলাও তো আমরা দেইনি, দিয়েছে বিএনপি নেত্রীরই প্রিয় তত্ত্বাবধায়ক সরকাররা। প্রধানমন্ত্রী বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনাদের দলের কি এমনই দৈন্যদশা যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার মতো কোন নেতা নেই? খালেদা জিয়া বিএনপির কোন নেতার ওপর এতটুকু ভরসা রাখতে পারলেন না? ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার মতো এতটুকু যোগ্যতাও কি বিএনপি কোন নেতার নেই? বিএনপির কোন নেতার ওপর ভরসা না করে বিএনপি নেত্রী মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ও আদালতে ৭ বছরের দ-িত আসামি নিজের ছেলেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিলেন। দলের মধ্যে যোগ্য আর কাউকে কি খুঁজে পাওয়া গেল না। এর জবাব বিএনপির নেতারাই ভাল দিতে পারবেন। সোমবার বিকেলে গণভবনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সম্প্রতি ইতালি সফর নিয়ে অর্জিত সাফল্যগুলো তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজিত করা হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে ঘুরে ফিরেই প্রাধান্য পায় আগামী নির্বাচন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলায় কারাদ-, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও রোহিঙ্গা ইস্যুটি। প্রধানমন্ত্রী স্বভাবসুলভ হাসিমুখে সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সফরসঙ্গী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু উপবিষ্ট ছিলেন। সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। আগামী নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না ॥ খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন নয়, নির্বাচন করতেও দেয়া হবে না- মর্মে বিএনপির নেতাদের এমন হুমকি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে এখন অনেকে অনেক কথা বলছেন। এ মামলার শুরুর সময়ই বিএনপির নেত্রীর আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম তাঁকে বলেছিলেন, টাকা দিলেই মামলা থাকবে না। তখন এতিমের টাকা দিয়ে দিলেই তো মামলা থাকত না। আর পবিত্র কোরান শরিফেও তো লেখা আছে এতিমের টাকা মেরে খাওয়া যায় না। আর খেলে তো শাস্তি এটা যেমন আদালত দেয়, আল্লাহর তরফ থেকেও দেয়। এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, বিএনপি থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে তারা নাকি নির্বাচন করবে না! নির্বাচন যদি না করে কারও করার কিছু নেই। গতবারও তারা নির্বাচন করেনি। আমরা জানতাম তারা নির্বাচনে আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসেনি। এবারও যদি না আসে, কোন দল যদি নির্বাচন না করে আমাদের করার কী আছে? আর যদি বলেন আমি শাস্তি দিয়েছি আমি তুলে নেব। তা তো আমি পারব না। এটা কোর্ট দিয়েছে। মামলা করেছে দুদক। আমাদের কিছু করার নাই। আর এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র। কোন দল নির্বাচন করবে কোন দল নির্বাচন করবে নাদ এটা সম্পূর্ণ তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি হুমকি দিতেই পারে কারণ তাদের জন্মটাই তো হয়েছে ওইভাবে। বিচারপতি সায়েম সাহেবকে অস্ত্রের মুখে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে জেনারেল জিয়া নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিল। ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পূর্ণ জড়িত সেই মোশতাক অবৈধভাবে প্রেসিডেন্ট হয়েই জিয়াকে সেনাপ্রধান বানিয়ে দিল। জিয়া কতটা বিশ্বস্ত ছিল খুনী মোশতাকের। আর সেই জিয়াউর রহমান একাধারে সেনাপ্রধান, একাধারে প্রেসিডেন্ট। একই অঙ্গে দুই রূপ নিয়ে উনি ক্ষমতায় এলেন। ঠিক আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে দিয়েছিল, ঠিক সেই পাকিস্তানের আইয়ুব খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিল। তারপর হ্যাঁ না ভোট। তারপরে এসে এই বিএনপি দল করল। এ কারণে তাদের চরিত্রটাই ওই রকম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বর্জনের হুমকি এটা তো নতুন কিছু না। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন করবে না বলে নির্বাচন ঠেকানোর নামে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। প্রায় ৭০টি সরকারী অফিস পুড়িয়েছে। ২৭ নং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যকে হত্যা করেছে। গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। তারা (বিএনপি-জামায়াত) ২০১৩, ২০১৪ ২০১৫-এই সময়ে না হলেও প্রায় ৫শ’ কাছাকাছি মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজারের ওপর মানুষকে শুধু আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। আমরা এখনও চেষ্টা করি এই মানুষগুলোকে সাহায্য করতে। সরকারপ্রধান এ সময় বিএনপি-জামায়াতে আগুন সন্ত্রাসের শিকার হওয়া পরিবারগুলোর চলমান নিদারুণ দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে বলেন, এ ধরনের ঘটনা তো বিএনপি-জামায়াত মিলে ঘটিয়েছে। তারা মসজিদে আগুন দিয়েছে। শত শত কোরান শরীফ পুড়িয়েছে। রেল তো তারা প্রায় ধ্বংসই করে দিয়েছিল। প্রায় ২৯টি ট্রেনের বগি পোড়ানো হয়েছে। আর লঞ্চেও তারা আগুন দিয়েছিল। এতও ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। কারণ নির্বাচন ঠেকাবে? প্রিসাইডিং অফিসারসহ অনেকেই আহত হয়েছে। তারপর যখন জনগণ তাদের প্রতিরোধ করল তখন কিন্তু তারা বিরত হলো। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনটা হচ্ছে মানুষের একটা অধিকার। তার গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। আমরা সেটা পূরণ করব। এখন নির্বাচনে তারা যাবে না। যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত কথা বলেন, সেই দুর্নীতিতে যিনি (খালেদা জিয়া) সাজাপ্রাপ্ত তাকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। রায়টা তো আর আমি দেই নাই। রায়টা দিয়েছে কোর্ট। মামলা করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কে? ফখরুদ্দিন সাহেব ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে কাজ করতেন। তাকে নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর করা হলো। কারণ বিএনপি বা খালেদা জিয়ার তিনি অত্যন্ত বিশ্বস্ত। সেই জন্যই তো নিয়ে আসল। তিনি বলেন, জেনারেল মঈনকে সেনাবাহিনীর ৯ জন জেনারেলকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান করা হলো। নয় জন জেনারেল ডিঙিয়ে যখন কাউকে করা হয় তার মানে কি? তিনিও সব থেকে বিশ্বস্ত সবচেয়ে প্রিয় পাত্র। আর প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন সাহেব তো তাদের ইয়েস উদ্দিনই ছিলেন। এই যে ইয়াজউদ্দিন ফখরুদ্দিন মঈনুদ্দিন সবগুলোই খালেদা জিয়ার নিজের লোক। তারাই মামলাটা দিয়েছে। জেনারেল মতিন, আমাদের মঈনুল হোসেন। তারাই তো দায়িত্বে ছিলেন। মামলা তো তারা দিয়েছে। সেখানে সেই মামলা দুদক করেছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জিয়া অরফানেজ মামলাটি কিন্তু দশ বছর চলেছে। যার কার্যদিবসই প্রায় ২৬১ দিন। সেখানে ৮০ বারই বেশি হাইকোর্ট এবং আপীল বিভাগে শুধু রিট করা হয়েছে এবং সময় নেয়া হয়েছে। জজের প্রতি অনাস্থা জানানো হয়েছে তিন বার। সময় চেয়েছে ১০৯ বার। তিনি বলেন, মামলা নিয়ে নানা টালবাহানা দেশবাসী দেখেছে। আপীল বিভাগে প্রায় ২২ বার রিট করা হয়েছে। এতকিছু করার পরও খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৪৩ দিন। ১০ বছর পর আদালতের রায়ে তার সাজা হয়েছে। তাই হুমকি দিয়ে লাভ নেই। নির্বাচন সময়মতো হবে। জনগণও ভোট দেবে। ২০১৪ সালে এত তা-ব করেও যখন নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও ঠেকাতে পারবে না। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হতে বিএনপিতে কী একজনও যোগ্য লোক নেই॥ দুর্নীতিবাজদের দলে রাখতে বিএনপির রাতারাতি গঠনতন্ত্র পরিবর্তন এবং দ-প্রাপ্ত তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন করার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের রায় হওয়ার আগেই বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রে থাকা ৭ ধারা পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে। আর বিএনপি গঠনতন্ত্র মানে বলে মনে হয় না। তবে বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বসময় ক্ষমতার অধিকারী চেয়ারপার্সন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে আমার কিন্তু এত ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রে ছিল দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে দলে থাকতে পারবে না। কিন্তু রায়ের আগেই সেই ধারাটি পরিবর্তন করা হলো। আমার প্রশ্ন- বিএনপিতে কি একটি যোগ্য নেতাও নেই যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন করা যেত? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগে কোনদিন রাজনীতি করবে না এমন মুচলেকা দিয়ে যে দেশ ছেড়ে চলে গেছে, যার বিরুদ্ধে মামলায় ১০ বছরের সাজার রায় হয়েছে, বিদেশে থাকা তাকেই (তারেক জিয়া) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন করা হলো! প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপিতে দেশে থাকা কী একটা নেতাকেও খুঁজে পাওয়া গেল না? বিএনপির কী এমনই দৈনদশা যে, খালেদা জিয়া তার দলের কাউকে দায়িত্ব দেয়ার ভরসা পেলেন না? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হওয়ার মতো এতটুকু যোগ্যতাও কী বিএনপি কোন নেতার নেই? এ সময় প্রধানমন্ত্রী ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হওয়ার সময় জিল্লুর রহমানকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব অর্পনের কথা তুলে ধরে বলেন, আমাকে গ্রেফতার করার সময় দলেরই সিনিয়র নেতা জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলাম। বিদেশের কাউকে কিংবা আমার বোন বা ছেলেকে সেই দায়িত্ব দেয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে ॥ প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস এটা তো নতুন কিছু না। এটা কিন্তু সব সময় যুগ যুগ ধরেই চলে এবং কখনও প্রচার হয় কখনও প্রচার হয় না- এটাই হলো বাস্তবতা। তারপরও এবারে যে হচ্ছে এখানে সমস্যা হয়ে গেছে প্রযুক্তির ব্যবহার। আর এই প্রযুক্তি আমাদের সুযোগ করে দিয়েছি, আবার সমস্যাও সৃষ্টি করে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যে প্রশ্নগুলো ফাঁস হয়েছে এটা কতদিন আগে ফাঁস হয়েছে? হয় কুড়ি কিংবা ৩০ মিনিট আগে। প্রশ্নকর্তার উদ্দেশে তিনি বলেন, একটা প্রশ্ন আমার আছে- যখন প্রশ্নপত্রগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পর সেগুলো খোলা হয়। সেটা বিতরণ করার জন্য খোলা হয়। এখন যদি সেখানে চট করে মোবাইল ফোনে একটা ফটো নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়, সেটা আপনি কি করবেন? এই যে কুড়ি মিনিট, আধাঘণ্টা বা ধরলাম এক ঘণ্টা। আমাদের দেশে এত বেশি ট্যালেন্টটেড কে আছে? তিনি বলেন, একঘণ্টা আগে সাধারণত পরীক্ষার হলে যাওয়ার জন্য ছাত্ররা প্রস্তুতি নেয়। হয় পথে থাকে বা পরীক্ষা কেন্দ্রে যায়। এই যে আধাঘণ্টা আগে বা বিশ মিনিট আগে প্রশ্ন দেখার পর ওই প্রশ্ন অনুযায়ী বই খুলে সেই প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে সেটাকে স্মরণ করে খাতায় খেলার মতো এই রকম ট্যালেন্টেড কোন ছাত্র আছে আমাকে একটু বলবেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রশ্নের উত্তরটা আমিও খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। যে এত ট্যালেন্টেড কে আছে যে একবার দেখেই সব উত্তরগুলো মনে করে ফটাফট লিখে দিল। একটা আছে যেটা শুধু টিক মারতে হয়। চিন্তা করছি এত ট্যালেন্ট বা এ রকম ফটোজেনিক মেমোরি কার আছে? সে একবার প্রশ্ন দেখল আর ওই সময়ের মধ্যে বই খুঁজে উত্তরগুলো বের করে নেয়া আর সেটাকে মাথার মধ্যে নিয়ে নেয়া আর সেটাকে লিখে ফেলে দেয়া এটা কেউ পারবে কি না? তিনি বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ হলেই যে সব সমস্যার সমাধান হবে তা নয়। তাহলে কি ডিজিটাল সিস্টেম টোটালি ব্লক করে দিতে হবে? এখন তো আমাদের সব কিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে। বন্ধ করে দিলে কি অবস্থাটা হবে একবার ভেবে দেখুন। মন্ত্রী কিংবা সচিব কি নিজেরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে গেছে? কিছু নিশ্চয় আছে যারা এভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ, আপনারা দয়া করে অন্তত একটা বের করে দেন, সঙ্গে সঙ্গে আমরা শাস্তি দেব। কারণ আমরাও চাই না এভাবে প্রশ্ন ফাঁস হোক, বদমান হোক। আর আমরা জনমত গড়ে তুলুন, আমরা পরীক্ষায় টিক (এমসিকিউ) মারাটা বন্ধ করে দেব। একজন সব দেন, আর একজন শুধুই নেন ॥ কোন আইনের বিধান অনুযায়ী কারাগারে খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত গৃহপরিচারিকা দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই কি দিতে পারে? একজন ভাগ্যবতী আছেন (খালেদা জিয়া) তিনি শুধু নিয়েই যান। আর একজন (শেখ হাসিনা) শুধুই দেন। আমরা দু’বোন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর বাড়িটিও জনগণের জন্য দিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, কারাগারে ব্যক্তিগত কাউকে নেয়া নতুন নয়। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার জন্য এই ফাতেমাই মেড সার্ভেন্ট হিসেবে তার সঙ্গে ছিলেন। আর আদালত তাকে মেড সাভেন্ট হিসেবে তাকে দিতে বলেছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি যেন ফাতেমার কাছ থেকে সই নিয়ে রাখা হয় যে সে স্বেচ্ছায় কারাবন্দী থাকতে রাজি আছে। নইলে এ নিয়েও হয়তো কেউ নানা কথা বলবে। রোহিঙ্গাদের তো অসহায়ভাবে ঠেলে দিতে পারি না? রোহিঙ্গা ইস্যুতে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাই আলোচনার মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করছি। আর এটা মিয়ানমার সরকারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, তাই সমাধানও তাদেরই করতে হবে। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে ৮ হাজার পরিবার ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আগে দেখি এই ৮ হাজার পরিবারকে ফিরিয়ে নিয়ে মিয়ানমার সরকার কী করে। দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই তো আমরা আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অসহায় অবস্থায় ঠেলে দিতে পারি না। তারাও তো মানুষ। তিনি বলেন, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকারের অনেক টালবাহানা তো রয়েছেই। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত গিয়ে যাতে মানুষের মতো বাঁচতে পারে, বসবাস করতে পারে সেটাই আমরা চাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী অস্থায়ীভাবে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের রাখার জন্য হাজার হাজার ছোট ছোট বাড়ি নির্মাণের নক্সা দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে ১০ লাখ লোকের বসবাসের মতো জায়গা রয়েছে। পুরো জিয়া পরিবার চরম দুর্নীতিবাজ নয় ॥ সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত সম্পুরক তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর টেলিভিশনে ভাঙ্গা স্যুটকেস এবং ছেড়া গেঞ্জি দেখানো হয়। তাকে সততার মূর্ত প্রতীক বানানো হলো। কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা গেল জিয়া পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, হঠাৎ করে এত টাকার মালিক তারা হলো কীভাবে? পুরো জিয়া পরিবার অর্থাৎ খালেদা জিয়া, তারেক ও কোকো- সবাই শুধু অসৎ তারা চরম দুর্নীতিবাজ, জিঘাংসাপরায়ণ ও ক্ষমতালোভী। তিনি বলেন, আদালতে খালেদা জিয়া এবং তার দুই ছেলের দুর্নীতির প্রমাণ হয়েছে এবং সাজা হয়েছে। তারা শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার মালিক হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস তারেক রহমানের ১২ কোটি টাকা টাকা আটক করেছিল। আমরা ২০১২ সালে সে টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসি। তারেক ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার মামুন সিঙ্গাপুর সিটিএন ব্যাংকে ২১ কোটি টাকা পাচার করে। এ মামলায় হাইকোর্টে তারেক রহমানের ৭ বছরের সাজা এবং ২১ কোটি টাকা জরিমানা হয়। এছাড়া বিশ্বের অনেক জায়গায় খালেদা জিয়ার ছেলেদের টাকা ও সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। রায় নিয়ে বিশ্বের কারো ফোন পাইনি ॥ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকরের সময় দেশের বাইরে থেকে অনেক ফোন পেলেও এবার খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোন টেলিফোন পেয়েছেন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের মামলার রায়ের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কেউ ফোনও করেনি, কেউ কোন প্রশ্নও করেনি। কিছু জানতেও চাননি। সেদিক থেকে এটি একটি ভাল লক্ষণ। দুর্নীতিবাজদের পক্ষে কেউ কিছু বলে না। নতুন ডিজিটাল আইন সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইম একটি বিরাট সমস্যা। এ দেশসহ সারাবিশ্বে এ সমস্যা আছে। কেউ যদি এমন অপরাধ করেন, তাহলে তার ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হবে। ফৌজদারি আইন (সিআরপিসি) অনুযায়ী কেউ অপকর্ম না করলে সেখানে অপপ্রয়োগ কেন হবে? তাই সাংবাদিকদের কেউ কোন অপকর্ম না করলে ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই? তবে আইনটি প্রণয়নের আগে সাংবাদিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী অবশ্যই ভেবে দেখবেন। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেট ও গণমাধ্যমও কিছুটা দোষী মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চালের দাম বাড়ানোয় মিডিয়ারও একটু অবদান আছে। ব্যবসায়ীরা যখন চালের দাম বাড়ায়, তখন আপনারা তা ঢালাওভাবে প্রচার করেন। তাতে অন্য ব্যবসায়ীরা আরেকটু দাম বাড়িয়ে নেয়। চালের দাম সিন্ডিকেটের জন্যও বাড়ে, আবার মিডিয়ার প্রচারের জন্যও বাড়ে।
×