ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাখাইন থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের সুচির ঘোষণা মিথ্যাচার

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রাখাইন থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের সুচির ঘোষণা মিথ্যাচার

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ যুদ্ধ বিগ্রহের পথ এড়িয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি গেল বছরের ৫ অক্টোবর রাখাইন রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে ঘোষণা দিলেও তা বর্তমানে মিথ্যাচারে পরিণত হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর অবস্থান রয়েছে। এরা মাঝে মাঝে সীমান্ত জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত অন্যায়ভাবে এসে টহল দিয়ে যায়। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের ওপারে জিরো লাইনে ৬ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুর আশ্রয়স্থলে এসে সেনাবাহিনীর পক্ষে তাদেরকে বাংলাদেশ ভূখন্ডে চলে যাওয়ার হুঙ্কার ঘটনা প্রমাণ করে এখনও রাখাইনে সেনাবাহিনীর অবস্থানের ঘটনা। গত শুক্রবার থেকে সীমান্ত এলাকায় (মিয়ানমার অভ্যন্তরে) মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশের (বিজিপি) পাশাপাশি দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও ঝটিকা টহল দিতে দেখা গেছে। তারা এখনও রোহিঙ্গাদের চোখ রাঙ্গিয়ে দেখছে। রাখাইন রাজ্য ত্যাগ করতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলেছে। অপরদিকে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে চুক্তি হয়েছে। সর্বশেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও হয়েছে। চুক্তি ও বৈঠকে গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত এখনও নিস্ফল অবস্থায় রয়েছে। মূলত মিয়ানমার সরকার চায় না রোহিঙ্গারা সে দেশে পুনরায় ফিরে যাক। আন্তর্জাতিক ব্যাপক চাপের মুখে যদি তাদের ফিরিয়ে নিতে হয় তাহলে রাখা হবে নির্মাণাধীন আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে। কেননা, রোহিঙ্গা বসতিগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ও ধ্বংস করে সেখানে বাণিজ্যিক কর্মকা- শুরু করার প্রক্রিয়া চলছে। এর সঙ্গে শক্তিশালী কয়েক দেশের স্বার্থও জড়িত রয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের অবাধ অবস্থান বা চলাচল থাকলে তা মিয়ানমারের আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের জন্য হুমকি বলে তারা মনে করে। মূলত এ কারণেই মিয়ানমার চায় না রোহিঙ্গারা সেখানে থাকুক। ফলে নানা ছলছুতায় দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা গণহত্যা হয়েছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশান্তরি হতে বাধ্য করা হয়েছে। রবিবার সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী উখিয়া টেকনাফে ১২ আশ্রয় কেন্দ্রের ৬ ক্যাম্পে ১০ লাখ ৬৮ রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আগামীতে এ সংখ্যা কোথায় পৌঁছে তা অনুমান করা মুশকিল। অপরদিকে, তমব্রু সীমান্তের ওপারে জিরো লাইনে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করেছে। পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনসহ ৬ শর্ত পূরণ না হলে জিরো লাইন থেকে তারা মিয়ানমার অভ্যন্তরে যাবেনা বলে জানান দিয়েছে। শনি ও রবিবার দুদিন ধরে তমব্রু নোম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এ বিক্ষোভ চালিয়েছে। তমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থানকারী ৬ সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে পুনরায় বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
×